সরকার মহেশখালী–মাতারবাড়ি এলাকায় মেগা প্রকল্পসহ অন্যান্য উন্নয়ন প্রকল্প দ্রুত বাস্তবায়ন এবং উক্ত এলাকাকে শিল্প ও বাণিজ্যিক অঞ্চলে রূপান্তরে ‘মহেশখালী–মাতারবাড়ি শিল্প ও বাণিজ্যিক অঞ্চল আইন, ২০২২’ প্রণয়ন করতে যাচ্ছে। আইনটি প্রণীত হলে চাহিদা অনুযায়ী স্থানীয়ভাবে এই অঞ্চলের মানসম্মত পরিচালনা অব্যাহত রাখা যাবে বলে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো খসড়া থেকে জানা গেছে।
আইন কার্যকর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ‘মহেশখালী–মাতারবাড়ি শিল্প ও বাণিজ্যিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ’ নামে একটি সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হবে। কর্তৃপক্ষের প্রধান কার্যালয় থাকবে মহেশখালীতে। তবে কর্তৃপক্ষ গভর্নিং বোর্ডের অনুমোদন গ্রহণ করে প্রয়োজনে যেকোনো স্থানে লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করতে পারবে। কর্তৃপক্ষের স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি অর্জন করার, অধিকারে রাখার এবং হস্তান্তর করার ক্ষমতাও থাকবে। এদিকে মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পে আরও ১৫শ মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে জাপান। এ নিয়ে গতকাল দুই দেশের মধ্যে বিনিময় নোট ও ঋণচুক্তি সই হয়েছে। খবর বাংলানিউজ ও বাসসের।
গভর্নিং বোর্ড : আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে প্রধানমন্ত্রীকে চেয়ারম্যান করে একটি গভর্নিং বোর্ড গঠিত হবে। ভাইস চেয়ারম্যান থাকবেন অর্থমন্ত্রী। সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী, শিল্পমন্ত্রী, বাণিজ্যমন্ত্রী, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব, এসডিজি বিষয়ক মুখ্য সমন্বয়ক, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী চেয়ারম্যান, বিদ্যুৎ বিভাগ, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং ভূমি মন্ত্রণালয়ের সচিব, ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বারস অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি, কর্তৃপক্ষের অধিক্ষেত্রাধীন এলাকার চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের সভাপতি (তবে অধিক্ষেত্রাধীন এলাকায় নিজস্ব চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ গঠিত না হওয়া পর্যন্ত সরকার কর্তৃক মনোনীত উক্ত এলাকার শিল্প বাণিজ্য সংশ্লিষ্ট একজন প্রতিনিধি) সদস্য থাকবেন।
নির্বাহী পরিষদের চেয়ারম্যান গভর্নিং বোর্ডের সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করবেন। সরকার, সরকারি গেজেটে প্রজ্ঞাপন দ্বারা, কোনো মন্ত্রী, সচিব বা কোনো ব্যক্তিকে প্রজ্ঞাপনের উল্লিখিত মেয়াদের জন্য গভর্নিং বোর্ডের সদস্য হিসাবে যেকোনো সময় কো–অপ্ট করতে পারবে।
গভর্নিং বোর্ডের সদস্য পদের শূন্যতা এবং বোর্ড গঠনে ত্রুটি থাকার কারণে বোর্ডের কোনো কার্যধারা অবৈধ হবে না এবং এ সম্পর্কে কোনো প্রশ্ন তোলা যাবে না।
এছাড়া নির্বাহী পরিষদ গঠন ও কার্যাবলী, কর্তৃপক্ষের কার্যাবলি, মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন, ভূমি বরাদ্দ, শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের জন্য ভূমি বরাদ্দ, মহাপরিকল্পনা লঙ্ঘন করে ভূমি ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, স্থানীয় পরিকল্পনা, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নিয়ন্ত্রণাধীন ভূমি, ইমারত ন্যস্তকরণ, কর্তৃপক্ষের বিশেষ অধিকার বিষয়ে বিস্তারিত খসড়ায় উল্লেখ আছে।
বিদ্যুৎকেন্দ্রে ঋণ দেবে জাপান : মাতারবাড়ি আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রকল্পে আরও দেড় হাজার মিলিয়ন মার্কিন ডলার ঋণ দেবে জাপান। জাপান সরকারের ৪৪তম ওডিএ লোন প্যাকেজের ২য় ব্যাচের আওতাধীন ৭ম পর্যায়ের এই ঋণের জন্য দুই দেশের মধ্যে বিনিময় নোট ও ঋণচুক্তি সই হয়েছে। গতকাল রাজধানীর আগারগাঁও অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের এনইসি–২ সভাকক্ষে ঋণচুক্তি সই হয়। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সচিব শরিফা খান এবং জাপান সরকারের পক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত ইওয়ামা কিমিনোরি ও জাইকা অফিসের চিফ রিপ্রেজেন্টেটিভ ইচিগুচি তমোহিদে ঋণচুক্তিতে সই করেন। ইআরডি থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
প্রকল্পের আওতায় কঙবাজার জেলার মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ি এলাকায় ১২শ মেগাওয়াট (৬০০ মে. ও. ঢ২ ইউনিট) আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপনের কাজ চলছে। প্রকল্পের মোট ব্যয় ৫১ হাজার ৮৫৪ কোটি ৮৮ লাখ টাকা (জিওবি ৬,৪০৬.১৬ কোটি, জাইকা ৪৩,৯২১.০৩ কোটি, সিপিজিসিবিএল সংস্থা নিজস্ব ১,৫২৭.৬৯ কোটি)। আগস্ট ২০২৩ সময় পর্যন্ত প্রকল্পের বাস্তব অগ্রগতি ৭৮.৩ শতাংশ এবং আর্থিক অগ্রগতি ৬৫.১৪ শতাংশ।প্রকল্পের মেয়াদকাল জুলাই ২০১৪ থেকে ডিসেম্বর ২০২৬।