আইনমন্ত্রী আনিসুল হক জানিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসার বিষয়ে আজ রোববার আইন মন্ত্রণালয় মতামত দেবে । গতকাল তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা আগামীকাল (আজ) মতামত দিয়ে ফাইল ছেড়ে দেব।
এদিকে বিএনপি অনেকদিন ধরে তাদের চেয়ারপারসনকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। তবে সরকারের পক্ষ বলছে, যদি বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করাতেই হয় খালেদা জিয়াকে ফের কারাগারে ফিরতে হবে। আগের আবেদন বাতিল করে আদালতের কাছে নতুন আবেদন করতে হবে। আদালত যদি এ ব্যাপারে রায় দেন, তবেই হয়ত তার বিদেশ যাওয়ার সুযোগ মিলবে। খবর বাংলানিউজের।
এদিকে খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে নেওয়ার প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি নিয়েছেন পরিবারের সদস্যরা। গত ২৫ সেপ্টেম্বর খালেদা জিয়ার ছোট ভাই সাঈদ ইস্কান্দার এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদনও করেছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ও আইনি মতামত জানতে চেয়ে আবেদনের কপি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে।
শারীরিক অসুস্থতা বাড়ায় ৯ আগস্ট খালেদা জিয়াকে ফের এভারকেয়ার হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। দেড় মাসের বেশি সময় ধরে গুরুতর অসুস্থ তাকে এভারকেয়ারে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। খালেদার মেডিকেল বোর্ডও অনেকদিন ধরে তার লিভার প্রতিস্থাপনের জন্য বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে আসছে।
বিএনপি সূত্র জানিয়েছে, ৭৮ বছর বয়সী খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে আর্থ্রাইটিস, ডায়াবেটিকস, কিডনি, লিভার ও হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন। তার লিভার সিরোসিসের কারণে হৃদযন্ত্র, কিডনি ও ফুসফুসের জটিলতা বেড়েছে। তিনি হাসপাতালে কখনো কিছুটা ভালো থাকছেন, পরক্ষণেই তার স্বাস্থ্যের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে। ফলে তাকে সার্বক্ষণিক চিকিৎসা দিতে হচ্ছে।
খালেদা জিয়ার পারিবারিক সূত্রে জানা গেছে, আবেদনের ব্যাপারে তারা এখন সরকারের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছেন। সরকার ইতিবাচক সিদ্ধান্ত পেলে যাতে দ্রুত বিদেশে পাঠানো যায় সেজন্য তারা জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়া ও সিঙ্গাপুরের হাসপাতালে খোঁজ নিচ্ছেন।
আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেছেন, খালেদা জিয়াকে বিদেশে নিয়ে চিকিৎসার অনুমতি চেয়ে করা আবেদনটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে। খালেদা জিয়ার ভাইয়ের আবেদনটি অল্প সময়ের মধ্যে যাচাই–বাছাই করে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে।
এদিকে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান বলছেন, বিদেশ যেতে হলে বেগম খালেদা জিয়াকে আদালতেই যেতে হবে।
অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিনও বলছেন একই কথা। তিনি বলেন, এখন যদি বলেন উনারা (খালেদা জিয়ার পরিবার) বাইরে যাবেন, তাহলে তো আরেকটা দরখাস্ত করতে হবে। সেই দরখাস্ত যদি করা হয় তাহলে আগের অর্ডারটা (বর্ধিতের আদেশ) বাতিল করতে হবে। বাতিল করে নতুন আদেশ জারি করতে হবে। সেই ক্ষেত্রে কিন্তু জটিলতা আছে। বাতিল হলে তো বাইরে থাকতে পারবেন না। এগুলো আইনি জটিলতা। আইনমন্ত্রী পরিষ্কারভাবে বলছেন যদি নতুন দরখাস্ত করা হয়, আর দরখাস্ত অনুযায়ী যদি পুরান অবস্থায় ফিরে যান (জেলখানায়) তখন যেটা বিবেচনা আসা যাবে, তার আগে তো করা যাবে না।
জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি খালেদা জিয়ার সাজা হয়। সেদিন থেকে তিনি প্রায় দুই বছর কারাবন্দি ছিলেন। এছাড়া জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় তার আরও সাত বছরের সাজা রয়েছে। তখন থেকে তার মুক্তির মেয়াদ ছয় মাস করে বাড়ানো হচ্ছে। ২০২০ সালের ২৫ মার্চ করোনা মহামারির শুরুতে খালেদা জিয়ার পরিবারের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকার তার সাজা স্থগিত করে শর্ত সাপেক্ষে ছয় মাসের জন্য মুক্তি দিয়েছিল।