হাঁটু সমান পানি ঘরের ভেতর । শয়নকক্ষের খাট ছুঁই ছুঁই এ পানি। আরো বাড়তে পারে উচ্চতা। সেই শঙ্কায় খাটের উপর প্লাস্টিকের মোড়া রেখে তাতে বিছানা–বালিশ মুড়িয়ে রাখা হয়েছে। তার পাশেই আরেকটি মোড়ায় বসে মোবাইল টিপছেন মধ্যবয়সী মুক্তা বড়ুয়া। গতকাল শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে এ দৃশ্য দেখা গেছে নগরের চকবাজার পোস্ট অফিসের বিপরীতে বড়ুয়া কলোনিতে। মুক্তা জানান, সকালে খাটের উপরও পানি উঠেছিল। জলাবদ্ধতার দুর্ভোগ যেন তাদের নিত্যসঙ্গী। তিনি বলেন, এটা আমাদের নিত্যদিনের ঘটনা। পানিতে সব ডুবে যায়। আবার রোদে শুকিয়ে যায়। এ কলোনির অন্যান্য বাসিন্দাও একই কথা বলেন। গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টিতে বড়ুয়া কলোনির বাসিন্দার মতো বাকলিয়াসহ শহরের অন্যান্য নিচু এলাকার বসতিদের অবস্থাও হয়েছে একই। বাসা–বাড়ি, দোকানপাটে পানি ঢুকে যাওয়ায় দুর্ভোগ ও ভোগান্তিতে অসহনীয় হয়ে উঠেন তারা। রাস্তাঘাট ডুবে যাওয়ায় যাতায়াতে চরম ভোগান্তিতে পড়েন পথচারীরা। বাসা–বাড়িতে পানি ঢুকে যাওয়ায় স্থানীয়দের দুর্ভোগ ছিল চরমে। রান্নাসহ অন্যান্য প্রাত্যহিক কাজ করতে বেগ পেতে হয় তাদের।
অবশ্য নগরবাসী যখন দুর্ভোগে ছিলেন তখন অনেকটা এ জলাবদ্ধতায় ঘরবন্দী হয়ে পড়েন সিটি মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী। গতকাল সকাল ১০টার দিকে বহদ্দারহাটসস্থ সিটি মেয়রের বাড়ির রাস্তার সামনে পানি দেখা গেছে। পানির নিচে তলিয়ে যায় বাড়ির উঠান, সেখানে ছিল হাঁটুসমান পানি। পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিস জানায়, গতকাল বিকেল ৩টা পর্যন্ত সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় ৪২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড হয়েছে। একইসময়ে আমবাগান আবহাওয়া অফিস রেকর্ড করে ১২৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত। ভোররাত থেকে শুরু হওয়া ভারী বৃষ্টি একটানা পড়ে সকাল পর্যন্ত। এরপর দুপুর পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হয়েছে। এদিকে গতকাল সকালে ৯টা ১ মিনিটে শুরু হয় জোয়ার। যা স্থায়ী ছিল আড়াইটা পর্যন্ত। অর্থাৎ জোয়ার এবং বৃষ্টি একাকার হয়ে জলাবদ্ধতার ভোগান্তি বাড়ে নগরবাসীর।
স্থানীয়রা জানান, বৃষ্টি থামার পর থেকে পানি ধীরে ধীরে নামতে থাকে। তবে অনেক এলাকায় রাতেও পানি ছিল। গত রাত সোয়া ৯টার দিকে পশ্চিত বাকলিয়ার বগার বিল, শান্তিনগর এলাকায় সড়কে পানি জমেছিল। এর আগে সকালে সেখানে প্রায় কোমর সমান পানি ছিল। বিকেল ৫টার সময় কাপাসগোলা থেকে বাদুরতলা বড় গ্যারেজ পর্যন্ত পানি জমেছিল। সকালে সেখানে হাঁটুর বেশি পানি ছিল। গতকাল সকালে সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা গেছে, শহরের কোথাও হাঁটু এবং কোথাও গোড়ালি সমান পানি ছিল। পানিতে তলিয়ে যায় চাক্তাই–খাতুনঞ্জের নিচু এলাকা। এছাড়া চকবাজার, কাতালগঞ্জ, বহদ্দারহাট, শোলকবহর, কাপাসগোলা, মোহাম্মদপুর, ফুলতলা, ডিসি সড়ক, বাকলিয়া, মিয়াখান নগর, কে বি আমান আলী সড়ক, বগারবিল, শান্তিনগর, উর্দু গলি, ঘাসিয়াপাড়া, চকবাজার কাঁচাবাজার, হাসমত মুন্সেফ লেন, ফুলতলা, দেওয়ানবাজার, চকবাজার মোহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেইন, নাজিরপাড়া, সুন্নিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন এলাকা, তিন পুলের মাথা, বড়পোল এলাকা, আগ্রাবাদ সিডিএ আবাসিক এলাকা, কমার্স কলেজ সংলগ্ন এলাকা, হালিশহরসহ বিভিন্ন এলাকা তলিয়ে যায় পানিতে।
চকবাজার–বহাদ্দারহাটসহ বিভিন্ন এলাকায় দেখা গেছে, বাড়ির ভেতর থেকে পানি সরাচ্ছিলে অনেকে। চকবাজার মুহাম্মদ আলী শাহ দরগাহ লেইনের বাসিন্দা আবদুল হামিদ বলেন, এত পানি চুলাও জ্বালাতে পারছি না। তাই বাইরের দোকান থেকে খাবার কিনে আনতে হয়েছে। একই কথা বলেছেন আশেপাশের এলাকার বাসিন্দারাও।
বহাদ্দারহাট এলাকায় নয়ন নামে এক পথচারী বলেন, জলাবদ্ধতার জন্য মানুষের কষ্টের কোনো সীমানা নেই। ড্রেন পরিষ্কার না করলে পানি কীভাবে যাবে? মোজাম্মেল নামে আরেকজন বলেন, আমরা চট্টগ্রামবাসী খুব দুর্ভোগের মধ্যে আছি। অল্প বৃষ্টি হলেই পানির নিচে তলিয়ে যাচ্ছে। সরকার এবং মেয়রের কাছে আমাদের আবেদন থাকবে যত দ্রুত সম্ভব নগরবাসীকে এ কষ্ট থেকে মুক্তি দেয়ার ব্যবস্থা যেন করেন।
চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বর্জ্য স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি কাউন্সিলর মোবারক আলী বলেন, সিডিএ মেগা প্রকল্পের আওতায় ৩৬ খালে কাজ করছে, সেগুলো আমাদের কাছে হস্তান্তর করেনি। এর বাইরে ২ কোটি ৪৫ লাখ টাকায় আমরা ছোট ছোট ড্রেনগুলো পরিষ্কার করেছি। ফলে এলাকার পানি দ্রুত নেমে খালে চলে আসে। কিন্তু সেখানে নাব্যতা কম হওয়ায় সমস্যা হয়েছে।
পতেঙ্গা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ উজ্জ্বল কান্তি পাল বলেন, মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় এবং একটি স্থল নিম্নচাপ থাকায় এর প্রভাবে বৃষ্টি হচ্ছে। আরো ২–৩ দিন থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। দেশের সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।