ফরাসি চিন্তাবিদ আলফোঁস দ্য লামার্তিন বলেছিলেন, ‘নেতার থাকবে জনগণের জন্য দরদ আর জনগণের দরদ থাকবে নেতার জন্যে। জন–অন্তপ্রাণ নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন।
নেতার নেতৃত্ব আর জনগণের অনুসরণ করার পরিবেশ দুই পক্ষের দরদ নিয়ে গড়ে উঠবে ।’ বঙ্গবন্ধুর ভেতরেও সেই দরদটা আমরা সবসময় দেখতে পাই তাঁর বিভিন্ন কর্মে। সংবিধানের চার মূলনীতিকে যদি আমরা বিশ্লেষণ করি, তাহলে আমরা বুঝতে পারি বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক চিন্তাধারা। তাঁর লক্ষ্য ছিলো সোনার বাংলা গড়ে তোলা। সাধারণ দুঃখী মানুষের মুখে তিনি হাসি ফোটাতে চেয়েছেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরপরই ১৯৭২ সালে এক জনসভায় তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় বলেছিলেন : ‘আমি কী চাই? আমি চাই বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত খাক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ সুখী হোক। আমি কী চাই? আমার বাংলার মানুষ হেসেখেলে বেড়াক। আমি কী চাই? আমার সোনার বাংলার মানুষ আবার প্রাণভরে হাসুক।’
দেলোয়ার এইচ রাইন তাঁর এক লেখায় লিখেছিলেন, পৃথিবীর ইতিহাসের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাবো, যুগে যুগে সমাজের নিচুতলার অবহেলিত ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষের মুক্তি আর তাদের মুখে হাসি ফোটানোর প্রত্যয় নিয়ে তাদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য বলিষ্ঠ নেতৃত্ব বিকশিত হয়েছে, জন্ম হয়েছে অনেক কালজয়ী নেতার। কিন্তু একজন নেতা কখন স্থান–কাল অতিক্রম করে গণমানুষের কণ্ঠে পরিণত হয়? কিভাবে তাঁর নেতৃত্বে সমাজ বা একটা দেশের সকল স্তরের মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়, সেটা বুঝতে হলে আমাদের সবার আগে নেতৃত্বের বিষয়ে পরিষ্কার ধারণা থাকা দরকার। যদিও নেতৃত্বের যথার্থ সংজ্ঞা পাওয়া খুব একটা সহজতর কাজ নয়। কারণ নেতৃত্বের বিশালতা আর যথার্থতা নির্ভর করে এর প্রেক্ষাপট আর গণমানুষের সঙ্গে তার জীবনঘনিষ্ঠ–সংশ্লিষ্টতায়। …বঙ্গবন্ধু বাঙালির মুক্তি আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতায় পরিণত হতে পেরেছিলেন। সাহসী বাঙালিরা তার আহ্বানেই অস্ত্রহাতে যুদ্ধ করে দেশ মাতৃকাকে স্বাধীন করে।
আমাদের অবিসংবাদিত নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ছিলেন একজন পর্বতপ্রমাণ অটল ব্যক্তিত্ব। তাঁর ঐন্দ্রজালিক নেতৃত্ব এবং সম্মোহনী ব্যক্তিত্ব সমগ্র জাতিকে একসূত্রে গ্রথিত করেছিল। যার ফলে আমরা পেয়েছি স্বাধীন–সার্বভৌম বাংলাদেশ। বিকাশ ঘটেছে বাঙালি জাতিসত্তার। সাধারণ মানুষের অধিকার সমুন্নত রাখাই ছিলো বঙ্গবন্ধুর অভিপ্রায়। এই সংগ্রামে বঙ্গবন্ধু থাকবেন উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা হয়ে।মানুষের সেই সংগ্রাম শেষ হয়নি।