আদালত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দুটি অভিযোগে নয় বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবাইদা রহমানকে তিন বছর কারাদণ্ড দিয়েছেন। জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও সম্পদের তথ্য গোপনের মামলার রায়ে এ দণ্ডাদেশ দেন আদালত।
বুধবার (২ আগস্ট) ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান এ রায় দেন।
এই রায়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) আইন ২০০৪- এর ২৬ (২) ধারায় তারেক রহমানকে তিন বছর ও ২৭(১) ধারায় ছয় বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এছাড়া তাকে তিন কোটি টাকা জরিমানা অনাদায়ে তিন মাস কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
সেইসঙ্গে জোবাইদা রহমানকে ২৭(১) ধারায় তিন বছর কারাদণ্ড দেন আদালত। এছাড়া তাকে জরিমানা ৩৫ লাখ টাকা জরিমানা, অনাদায়ে এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এছাড়া তারেকের দুই কোটি ৭৪ লাখ ৯৩ হাজার ৮৭ টাকা রাষ্ট্রীয় অনুকূল বাজেয়াপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
এদিন বিকেল ৩টা ২০ মিনিটে ঢাকার মহানগর সিনিয়র স্পেশাল জজ মো. আছাদুজ্জামান এ রায় পড়া শুরু করেন।
গত ২৭ জুলাই এ মামলার যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিন ধার্য ছিল। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। এরপর রায়ের জন্য আদালত এ দিন ধার্য করেন।
এদিকে রায়ে আইন অনুযায়ী দুইজনের সর্বোচ্চ শাস্তি হবে বলে আশা করেন দুদক কৌশলী মোশাররফ হোসেন কাজল।
তিনি বলেন, দাখিল করা সম্পদ বিবরণী থেকে নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ২০০৪ এর ২৬(২) ও ২৭ (১) তারেক রহমানের বিরুদ্ধে দুই কোটি ২৩ লাখ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও ৫৮ লাখ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং তার উক্ত অপরাধে সহায়তার জন্য জোবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে ৪২ সাক্ষী উপস্থাপন করেছি।
তিনি আরও বলেন, সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আমরা এ অপরাধটা প্রমাণ করতে পেরেছি এবং আইন অনুযায়ী তাদের সর্বোচ্চ ১৩ বছরের শাস্তি দাবি করেছি।
২৪ জুলাই এই মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়। ওইদিন সর্বশেষ সাক্ষ্য দেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা দুদকের তৎকালীন উপপরিচালক তৌফিকুল ইসলাম। মামলাটিতে মোট ৫৬ সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনের সাক্ষ্যগ্রহণ করা হয়।
১৩ এপ্রিল এই মামলায় তাদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের মাধ্যমে বিচার শুরুর আদেশ দেন একই আদালত। এরপর ২১ মে সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়। ওইদিন আদালতে জবানবন্দি দেন মামলার বাদী দুদকের উপ-পরিচালক ড. মোহাম্মদ জহুরুল হুদা।
মামলার নথি থেকে জানা যায়, ঘোষিত আয়ের বাইরে চার কোটি ৮১ লাখ ৫৩ হাজার ৫৬১ টাকার মালিক হওয়া এবং সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে ২০০৭ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর রাজধানীর কাফরুল থানায় এ মামলা করে দুদক। মামলায় তারেক রহমান, জোবাইদা রহমান ও তার মা অর্থাৎ তারেক রহমানের শাশুড়ি ইকবাল মান্দ বানুকে আসামি করা হয়।
২০০৮ সালে তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। এরপরই মামলা বাতিল চেয়ে হাইকোর্টে আবেদন করেন জোবায়দা। ওই বছরই এ আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এর বিরুদ্ধে আপিল করলে আপিল বিভাগ হাইকোর্টের আদেশ বহাল রাখেন।
গত বছর এ মামলার স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করে রুল খারিজ করেন হাইকোর্ট।