মহাসমাবেশ ও ঢাকার প্রবেশমুখে অবস্থান কর্মসূচির ফলে আওয়ামী লীগ বোল্ড হয়েছে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন। শুক্রবার ও শনিবার বিএনপির ‘গুগলিতে’ আওয়ামী লীগ বুঝতেই পারিনি কোন দিক দিয়ে বল এসেছে। সারাদেশ থেকে মানুষ এসে সরকারকে বার্তা দিয়েছে অবিলম্বে গদি ছাড়ো। সোজা কথায় না হলে ফয়সালা হবে রাজপথে। এবার বিজয় সুনিশ্চিত। সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই, কোনোভাবে তারা ক্ষমতায় থাকতে পারবে না।
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সোমবার আয়োজিত এক সমাবেশে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। সমাবেশ থেকে নতুন কোনো কর্মসূচির ঘোষণা দেওয়া হয়নি। সমমনা দল ও জোটগুলোর সঙ্গে আলোচনা করে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
গত শনিবার ঢাকায় বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী হামলা, নিপীড়ন-নির্যাতন ও গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে সারাদেশে মহানগর ও জেলা সদরে জনসমাবেশ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। একইভাবে সমমনা অন্যান্য জোট ও দল এই কর্মসূচি পালন করে। বিএনপির এই কর্মসূচিকে ঘিরে দুপুরের আগে থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জড়ো হতে থাকেন। প্রচণ্ড গরমে অতিষ্ঠ নেতাকর্মীরা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের গাছের ছায়াতলে আর মূল মঞ্চের সামনে অবস্থান নিয়ে সরকারবিরোধী স্লোগান দিতে থাকেন।
এদিকে সমাবেশ উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দুই গেটে ও রমনা ইঞ্জিনিয়ার্স ইন্সটিটিউশন, মৎস্য ভবন, শাহবাগ মোড়ে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। রাখা হয় সাঁজোয়া যান, জলকামানের গাড়িসহ প্রিজন ভ্যান। পোশাকধারী পুলিশের পাশাপাশি সাদা পোশাকের সদস্যরা ছিলেন বিভিন্ন পয়েন্টে।
জনসভায় মির্জা ফখরুল বলেন, ‘ছোট্ট কর্মসূচি ছিল অবস্থান কর্মসূচি। আমরা অবরোধও করিনি, হরতালও দেয়নি। শান্তিপূর্ণ অবস্থান কর্মসূচি দিয়েছিলাম। কিন্তু তারা (আওয়ামী লীগ) পুলিশ নিয়ে যুদ্ধের মতো সাজে এসে নিরস্ত্র বিএনপির নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করেছে। অথচ আওয়ামী লীগ সাঁজোয়া যান দিয়ে যুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি করেছে। আর দলের সিনিয়র নেতাদের নিয়ে গল্পের প্লট তৈরি করে ব্ল্যাক মেইল করেছে। এটাতে বিএনপির নেতারা ছোট হয়নি, সরকার ছোট হয়েছে।’
তিনি বলেন, সরকার যত চেষ্টা করুক না কেন, সমাবেশে মানুষের ঢল থামানো যাবে না। বিএনপি নির্বাচন চায়, তবে বর্তমান সরকারের অধীনে নয়। নিরপেক্ষ নির্দলীয় সরকারের অধীনে হতে হবে। এই লক্ষ্যে বিএনপি স্থির। আমাদের এক দফা, সরকারকে পদত্যাগ করতেই হবে। বারবার মানুষকে বোকা বানানো যাবে না।
ফখরুল বলেন, আজ সব দেশের মানুষ একসঙ্গে জেগে উঠেছে, তত্ত্বাবধায়ক বা নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দিন, নয়ত পালাবার পথ পাবে না। এর আগেই দাবি মেনে নিতে সরকারকে আহ্বান জানান তিনি।
সমাবেশ থেকে প্রশাসনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, প্রশাসনের লোকদের ভয় পেতে মানা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। তাহলে ভয় পাচ্ছেন। ভয় পাবারই কথা।
বিএনপি মহাসচিব আরও বলেন, বিদেশ থেকে কিছু মানুষ ভাড়া করে নিয়ে এসেছে, যাদের কাউকে চেনে না। টাকা দিয়ে ভাড়া করে এনেছে। একজন নাকি আমেরিকার। তিনি কে? তাকে তো আমেরিকার কেউ চেনে না! গতবারও তাকে আনা হয়েছিল। এভাবে মানুষকে বোকা বানিয়ে, টাকা দিয়ে ভাড়া করে লোক এনে আবারও নিজেদের অধীনে নির্বাচন করতে চায়। তবে দেশের মানুষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তারা আওয়ামী লীগের অধীনে নির্বাচন চায় না।
জেলখানায় নেতাকর্মীদের ওপর নির্যাতন করা হচ্ছে অভিযোগ করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপির নেতাকর্মীদের সেই গত বছরের ডিসেম্বরের মতো লকআপ করে রাখা হচ্ছে। বাইরে বেরুতে দিচ্ছে না। কারা কর্তৃপক্ষ যদি জেলকোডের বাইরে কিছু করে, তাহলে এক দিন এসব কিছুর হিসাব দেশের মানুষ বুঝে নেবে।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আইয়ুব সরকার, পাকিস্তানিদের নির্যাতন দেখা আছে। কিন্তু অবরোধ কর্মসূচিতে যে হামলা, তা বাংলাদেশের ইতিহাসে আর দেখা যায়নি। সিনিয়র নেতাদের সাপ পেটানোর মতো পেটানো হলো। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ করে তিনি বলেন, ‘গ্রেপ্তার করেন, নেতাকর্মীরা সাহসী, ভয় পায় না। যত পেটান, আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে আন্দোলন বন্ধ হবে না। একটাই দাবি সরকারের পতন। যত নির্যাতন করুন সরকারের পতন ছাড়া অন্য কোনো কথা নেই।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য ডক্টর আবদুল মঈন খান বলেন, বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকারের সত্যিকারের চরিত্র আবারও জাতির সামনে পরিষ্কার হয়ে গেছে। কারণ, তারা একদলীয় সরকার। এ জন্যই কাউকে কথা বলতে দেওয়া হয় না। মিডিয়াকে কিছুই লিখতে দেয় না। তারা হচ্ছে লগি-বৈঠা আর ধোঁকাবাজির সরকার। মানবাধিকার লঙ্ঘনকারী সরকার। মামলা-হামলার সরকার। শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে এই সরকারকে বিতাড়িত করে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, আন্দোলনে ভীত হয়ে সরকার বাধ্য হয়েছে বিএনপি নেতাদের আটক করে নিয়ে সমাদর করতে। বিশ্ববাসী সরকারের বিরুদ্ধে চলে গেছে। তাই প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে খাবার আসে, পুলিশ কর্মকর্তা আপ্যায়ন করে। তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘এটাতো শুরু। সহজে চলে গেলে ভালো। নয়তো চলে যেতে বাধ্য হলে, সেটা হবে নাটকের শেষ দৃশ্য।’
স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, কারও ওপর নির্ভর করে নেতা নির্ধারণ হয় না। ২৮ জুলাই ঢাকায় বিএনপির মহাসমাবেশের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করেছে দেশের মানুষ। বিরোধীদলের কর্মসূচি বানচালের চেষ্টা আর হতে দেওয়া হবে না। রাজনৈতিক দল কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নামলে সেটা অবৈধ নয়, নেতাকর্মীরা আগামীতে রাস্তায় নামবে। প্রয়োজনে বাধা এলে প্রতিরোধ করবে।
ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্সিণ বিএনপি আয়োজিত জনসমাবেশে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির আহ্বায়ক আবদুস সালামের সভাপতিত্বে এবং মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্যসচিব আমিনুল হক ও দক্ষিণ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের পরিচালনায় বক্তব্য রাখেনÑ বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমান উল্লাহ আমান, আবুল খায়ের ভূঁইয়া, অ্যাডভোকেট জয়নুল আবদীন ফারুক, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী অ্যাডভোকেট শামসুর রহমান শিমুল বিশ^াস, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানি, ছাত্র-বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুলসহ যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানী, ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ড্যাব) অধ্যাপক ডা. হারুন আল রশিদ, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, ছাত্রদলের কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ প্রমুখ।