বাড়ির মালিকদের ‘ভাড়াটিয়া সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য সংশ্লিষ্ট থানায় না দিলে দণ্ডবিধি অনুযায়ী শাস্তি পেতে হবে । ভাড়াটিয়া ও বাড়ির কর্মচারীর তথ্যসংবলিত নির্ধারিত ফরম নিকটবর্তী থানায় জমা দিতে হবে। তথ্যসংবলিত ফরম সংগ্রহে ব্যর্থ হলে সংশ্লিষ্ট থানার কর্মকর্তাকেও জবাবদিহি করতে হবে। এ ছাড়া বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগেই জাতীয় পরিচয়পত্রের অনুলিপি বাধ্যতামূলকভাবে সংরক্ষণ করতে হবে।’
চট্টগ্রামসহ সারা দেশে বসবাসরত নাগরিকদের সম্পর্কে তথ্য জানতে এ নির্দেশনা কখনো কেন্দ্রীয়ভাবে, কখনো আবার স্থানীয়ভাবে অসংখ্য বার জারি হলেও বাড়িওয়ালাদের গাফিলতি এবং ভাড়াটিয়াদের অনীহার কারণে তা কার্যকর হয় না কখনো। আবার বাড়ির মালিকদের কাছে তথ্য চেয়ে ফরম সরবরাহ করা হলেও সেগুলো ফের সংগ্রহে পুলিশের অনাগ্রহের অভিযোগও রয়েছে।
আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক সংঘাত, নাশকতা, জঙ্গি তৎপরতা এবং অপরাধ দমনে আবারও সারা দেশে এ নির্দেশ জারি করা হয়েছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে এবং নির্বাচনকে সামনে রেখে অপতৎপরতা রোধে বাড়িওয়ালাকে তথ্য দেওয়ার জন্য ভাড়াটিয়াদের আরও সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। নতুন ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করে সংশ্লিষ্ট থানা এলাকার বিট অফিসারের (থানার একজন এসআই দায়িত্বে থাকেন) কাছে জমা দিতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে বাড়িওয়ালাদের। এ বিষয়ে কোতোয়ালী থানার ওসি জাহিদুল কবীর বলেন, ভাড়াটিয়াদের তথ্য নেওয়ার বিষয়টি অনেক আগে থেকেই চলে আসছে। এবার তা আরও জোরালো করা হচ্ছে। নগরবাসীর নিরাপত্তার জন্যই এটা করা হচ্ছে। এলাকার নিরাপত্তা জোরদার করতে পেট্রোলিং, সেই সঙ্গে মামলা তদন্তের পাশাপাশি ভাড়াটিয়াদের তথ্য থানায় জমা দিয়ে সহায়তা করার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে প্রতিনিয়ত বাড়িওয়ালাদের বলা হচ্ছে।
আকবরশাহ থানার ওসি ওয়ালী উদ্দিন আকবর বলেন, আমরা অতীতে দেখেছি বাড়ির মালিকরা নিজেদের অজান্তেই সন্ত্রাসী ও জঙ্গি সদস্যদের বাসা ভাড়া দিয়ে থাকেন। সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। মালিকদের নিরাপত্তার স্বার্থেই ভাড়াটিয়াদের বিস্তারিত তথ্য রাখা প্রয়োজন। ইপিজেড থানার ওসি আব্দুল করিম বলেন, আমরা দেখেছি বাড়িওয়ালাদের কাছে দেওয়া নির্ধারিত ফরমে অনেক সময় ভুল তথ্য দেওয়া হয়। এজন্য জাতীয় পরিচয়পত্রের ফটোকপি রাখার বিষয়ে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি।
১৭ ধরনের তথ্য জানাতে হবে : ফরমে ভাড়াটিয়া ও বাড়িওয়ালার নাম, বর্তমান ও স্থায়ী ঠিকানা, জন্মতারিখ, পেশা, জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর, মোবাইল ফোন নম্বর, ছবি ও আঙুলের ছাপ, পরিবার বা মেসের সদস্যসংখ্যা, গৃহকর্মী ও গাড়ি চালকের নাম (যদি থাকে), পূর্ববর্তী বাড়ির মালিকের নাম, বাসা ছাড়ার কারণসহ ১৭ ধরনের তথ্য চাওয়া হয়। এ ছাড়া ভাড়াটিয়া ব্যক্তিকে চেনে–জানে এমন দু‘জন শনাক্তকারীর ও তার আগের ভাড়া বাড়ির মালিকের ফোন নম্বরসহ নাম–ঠিকানা যুক্ত করতে হবে। সিএমপির বিভিন্ন থানার কর্মকর্তারা আজাদীকে বলেন, ভাড়াটিয়াদের তথ্য চাইতে গেলে বাড়ির মালিকরা নানাভাবে অসহযোগিতা করেন। কারণ তাদের ধারণা, এর ফলে বাড়ি ভাড়া সম্পর্কিত তথ্য ফাঁস হয়ে যাবে। তাই বাসায় বাসায় ফরম পৌঁছে দিয়ে বারবার তাগাদা দিলেও পূরণ করা ফরম আর ফেরত আসে না। যেসব ফরম ফেরত আসে, তাতে সব ধরনের তথ্যও থাকে না। অনেক সময় এক ফ্ল্যাটে একাধিক ব্যক্তি বসবাস করলেও ফরমে সে তথ্য গোপন রাখা হয়।
বিষয়টি স্বীকার করে নগরীর বেশ কয়েকজন বাড়িওয়ালা বলেন, বাসা ভাড়া দেওয়ার পর ভাড়াটিয়াদের তথ্য ও জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি চাওয়া হয়। কিন্তু অনেকেই তথ্য দিতে গড়িমসি করে। আবার অনেকে তথ্য দেন। বিশেষ করে ব্যাচেলরদের মধ্যে অনেকে তথ্য দেবো, দিচ্ছি বলে সময় অতিবাহিত করেন।
ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ যেকোনও ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড প্রতিরোধে সহায়ক হিসেবে কাজ করে বলে উল্লেখ করেছেন সিএমপির অতিরিক্ত উপ কমিশনার (দক্ষিণ) নোবেল চাকমা।
আইনগত ভিত্তি : ফৌজদারি কার্যবিধির ৪২ ধারায় বলা হয়েছে, সরকারি কাজের স্বার্থে বা তদন্তের স্বার্থে জনগণকে সহায়তা করতে হবে পুলিশকে তথ্য দিয়ে। এ ধারা অনুযায়ী পুলিশ যে–কারও কাছে তার কার্যক্রম সংশ্লিষ্ট তথ্য চাইতে পারে। পাশাপাশি জনগণকেও পুলিশকে এ বিষয়ে সহায়তা করতে হবে। কেউ তথ্য দিতে অসহযোগিতা করলে বা আপত্তি জানালে পুলিশ তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।