জন্মনিবন্ধন কার্যক্রম পুরোপুরি বন্ধ হয়ে রয়েছে সার্ভার ডাউন থাকায় । প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে কোনো জন্মনিবন্ধনই হচ্ছে না। এতে করে শত শত মানুষ জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্টের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজ সারতে পারছেন না। শহর এবং গ্রামের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে জন্মনিবন্ধন আবেদনের পাহাড় গড়ে উঠেছে। গত ২৫ জুলাই সার্ভার চালু হবে বলে আশ্বস্ত করা হলেও প্রতিদিনই সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোতে ‘মন খারাপ করা মানুষের’ সংখ্যা বাড়ছে।
সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে আলাপ করে জানা গেছে, পাসপোর্ট করতে জাতীয় পরিচয়পত্র লাগছে। আবার জাতীয় পরিচয়পত্রের জন্য লাগে অনলাইন জন্মনিবন্ধন। যাদের পরিচয়পত্র নেই তাদের পাসপোর্ট করতে অনলাইন জন্মনিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়ে অনলাইনে জন্মনিবন্ধন করার ব্যবস্থা রয়েছে। প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গেলে খুব সহজেই জন্মনিবন্ধন হওয়ার কথা। শুরুতে কিছু সমস্যা থাকলেও পরবর্তীতে বেশ স্বাচ্ছন্দে মানুষ জন্মনিবন্ধন করেছে। কিন্তু গত দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে সার্ভার ডাউন থাকায় জন্মনিবন্ধন বন্ধ রয়েছে। দিনের পর দিন ধর্ণা দিয়েও মানুষ জন্মনিবন্ধন করতে পারছেন না। আর জন্মনিবন্ধন করাতে না পারায় জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্টের মতো জরুরি কাজ সারতে পারছেন না বহু মানুষ।
জন্মনিবন্ধনের ব্যাপারটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং স্পর্শকাতর। বিশেষ করে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর জালিয়াতি ঠেকাতে জন্মনিবন্ধনের ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ থাকার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। কারণ একজন ব্যক্তির নাগরিকত্বের প্রক্রিয়ার প্রাথমিক ধাপই শুরু হয় জন্মনিবন্ধন দিয়ে। জন্মনিবন্ধন দিয়ে জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্ট পাওয়া যায়। তাই অতি সহজে পাওয়া গেলেও জন্মনিবন্ধন খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অথচ এই গুরুত্বপূর্ণ কাজটিই নিয়ে হাজার হাজার মানুষ চরম বেকায়দায় পড়েছেন। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেন, রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর একটি অংশ নানা কৌশলে জাতীয় পরিচয়পত্র, অনলাইন জন্মনিবন্ধন এবং পাসপোর্ট তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। সংঘবদ্ধ দালাল এবং প্রতারকচক্র নানা কৌশলে এবং মিথ্যা কাগজপত্র তৈরি করে রোহিঙ্গাদের পাসপোর্ট বা জাতীয়তা পরিচয়পত্র পাওয়ার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। দেশের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর এই প্রক্রিয়া ঠেকাতে সরকারকে নানামুখী উদ্যোগ নিতে হচ্ছে। এসব উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে সাধারণ মানুষকে কিছুটা সমস্যার মুখে পড়তে হচ্ছে বলেও তারা স্বীকার করেন।
অনলাইন জন্মনিবন্ধন করাতে গিয়ে হাজার হাজার মানুষের মাথার ঘাম পাতালে পড়ছে। ইউনিয়ন পরিষদ এবং ওয়ার্ড কাউন্সিলরের অফিসেই কেবল জন্মনিবন্ধন করা যাচ্ছে। একজন মাত্র কম্পিউটার অপারেটর দিয়ে এক একটি ইউনিয়ন বা ওয়ার্ডের কয়েক লাখ মানুষের জন্মনিবন্ধনের কাজ সারানো হচ্ছে। অধিকাংশ ওয়ার্ডে বা ইউনিয়ন পরিষদে জন্মনিবন্ধনের জন্য কোনো লোকবল পদায়ন করা হয়নি। ইউনিয়ন বা ওয়ার্ড অফিসের সচিবকেই মূলত স্বাভাবিক কার্যক্রমের বাইরে গিয়ে জন্মনিবন্ধনের কাজ করতে হয়। কোন কোন ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন পরিষদের কাউন্সিলর বা চেয়ারম্যান নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় একজন কম্পিউটার অপারেটর নিয়োগ দিয়েছেন। সরকারের এটুআই কর্মসূচির আওতায়ও কোন কোন ওয়ার্ড বা ইউনিয়ন পরিষদে কম্পিউটার সেবা প্রদান করা হচ্ছে। কিন্তু সবকিছুর মূলে রয়েছে সার্ভার। অনলাইন সার্ভার বিকল হয়ে পড়লে কোনো উদ্যোগই আর আলোর মুখ দেখে না। শত শত মানুষ তীর্থের কাকের মতো কম্পিউটারের মনিটরের দিকে তাকিয়ে থাকেন।
সার্ভার ডাউন হয়ে থাকার ব্যাপারটি অনেকটা প্রাত্যহিক হয়ে উঠেছে বলে মন্তব্য করে নগরীর একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, আমাদের সাথে মানুষের সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। মানুষ মনে করছে আমরা ইচ্ছেকৃতভাবে হয়রানি করছি। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমাদের কিছু করার নেই। সার্ভার ডাউন হয়ে পড়লে আমাদের আর কিছু করার থাকে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর বলেন, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সার্ভার ডাউন হয়ে রয়েছে। প্রতিদিনই ৪০ থেকে ৫০ জন মানুষ জন্মনিবন্ধনের জন্য অফিসে এসে ফেরত যাচ্ছেন। কেউ কেউ দিনভর বসে থাকেন। সার্ভার ঠিক হবে আশা করে এবং আমাদের লোকজনকে দোষারোপ করেন।
অপর একজন ওয়ার্ড কাউন্সিলর জানান, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে সার্ভার ডাউন। কোনো জন্মনিবন্ধন হচ্ছে না। গত ২৫ জুলাই সার্ভার পুরোপুরি ঠিক হয়ে যাবে বলে একটি নোটিশ দেয়া হয়েছিল। অথচ মাসের ৩১ তারিখ গত হতে চলেছে। এখনো সার্ভারের কোনো খবর নেই। তিনি ওয়ার্ড অফিসে জন্মনিবন্ধনের আবেদনের পাহাড় জমে উঠেছে বলেও উল্লেখ করেন।