৭৮.২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছে চট্টগ্রামে এবারের (২০২৩ সালের) এসএসসি পরীক্ষায় । আর জিপিএ–৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৪৫০ জন। গতবছর (২০২২ সালে) পাসের হার ছিল ৮৭.৫৩ শতাংশ। আর জিপিএ–৫ পায় ১৮ হাজার ৬৬৪ জন। গতবার জিপিএ–৫ প্রাপ্তির এ সংখ্যা ছিল এ যাবতকালে চট্টগ্রামে রেকর্ড। হিসেবে গত বছরের তুলনায় পাসের হার ও জিপিএ–৫ দুটোই উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে এবার। পাসের হার গতবারের তুলনায় কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ (৯.২৪%)। আর জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা কমেছে ৭ হাজার ২১৪। পাসের হার ও জিপিএ–৫ প্রাপ্তির সংখ্যায় এবারের ফল ২০২১ সালের তুলনায়ও পিছিয়ে। ওইবছর (২০২১ সালে) পাসের হার ছিল ৯১.১২ শতাংশ। আর জিপিএ–৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৭৯১ জন। হিসেবে ২০২১ সালের তুলনায় এবার পাসের হার কমেছে ১২.৮৩ শতাংশ। আর জিপিএ–৫ প্রাপ্তির সংখ্যা কমেছে ১ হাজার ৩৪১ জন। গতকাল শুক্রবার সরকারি ছুটির দিনে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড মিলনায়তনে সংবাদ সম্মেলনে এসএসসি পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণা করেন পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ।
তিনি জানান, এবার এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ২১৬টিকেন্দ্রে ১ হাজার ১০৭টি প্রতিষ্ঠানের ১ লাখ ৫৪ হাজার ৭৬৯ শিক্ষার্থী অংশ নিয়েছে। এর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৬ জন। এদের মধ্যে ছাত্র ৬৮ হাজার ৩১৬ জন এবং ছাত্রী ৮৬হাজার ৫০৩ জন। পাসের হার ৭৮.২৯ শতাংশ।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ন চন্দ্র নাথ আারো বলেন, করোনাপরিস্থিতির পর এবছর সব বিষয়ে এবং পূর্ণ সময়ে পরীক্ষা হয়েছে। তাই পাসের হার ও জিপিএ–৫কমেছে। সামগ্রিক চিন্তা করলে আমাদের শিক্ষার্থীরা ভালো করেছে বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
ফলাফলে এই অবনমনের পিছনে একাধিক কারণের কথা বলছেন শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা। বোর্ড সংশ্লিষ্টদের দাবি– ২০২১ সালে মাত্র কয়েকটি বিষয়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। গতবারও সব বিষয়ের পরীক্ষা হয়নি। পূর্ণমানেও পরীক্ষা নেয়া হয়নি। তবে এবার (২০২৩ সালে) সব বিষয়ের পরীক্ষায় বসতে হয়েছে শিক্ষার্থীদের। এছাড়া পূর্ণ সময়ের পাশাপাশি পূর্ণমানেই পরীক্ষা হয়েছে। যার কারণে গত দুবছরের তুলনায় এবারের ফলাফল ভালো হয়নি বলে দাবি চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতারের। শিক্ষাবোর্ড কর্মকর্তাদের পাশাপাশি একই মন্তব্য শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনিরও। গতকাল মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষা মন্ত্রীও এমন অভিমত দেন।
গতকাল প্রকাশিত চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের ফল পর্যালোচনায় দেখা যায়, এবার গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে ভালো করতে পারেনি শিক্ষার্থীরা। যার প্রভাব পড়েছে সামগ্রিক ফলাফলে। এবার সাধারণ গণিত বিষয়ে সবচেয়ে কম (৮৭.১১ শতাংশ) শিক্ষার্থী পাস করেছে চট্টগ্রামে। এরপরই কম পাস করেছে ইংরেজিতে। বিষয়টিতে পাসের হার ৯০.৪১ শতাংশ। গণিত ও ইংরেজি ছাড়া অন্যান্য বিষয়গুলোতে পাসের হার ৯৬ শতাংশের ঊর্ধ্বে। কয়েকটি বিষয়ে ৯৯ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থী পাস করেছে।
তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, করোনা পরিস্থিতির আগে স্বাভাবিক পরীক্ষার ক্ষেত্রে গণিত–ইংরেজির ফলই প্রভাবক হয়ে উঠত চট্টগ্রামের এসএসসির ফলাফলে। বিশেষ করে এ দুটি বিষয়ে শিক্ষার্থীরা পিছিয়ে থাকতো বেশি। যার ছাপ থাকতো সামগ্রিক ফলাফলে। করোনা পরিস্থিতিতে ২০২১ সালে মাত্র তিনটি বিষয়ে (গ্রুপ ভিত্তিক) পরীক্ষা নেয়া হয়। গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে পরীক্ষাই নেয়া হয়নি। যার কারণে ওই বছর পাসের হারে অনেকটা রেকর্ড হয়। জিপিএ–৫ প্রাপ্তের সংখ্যাও আগের বছরের তুলনায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাড়ে।
তবে ২০২২ সালে গণিত–ইংরেজি বিষয়ে আংশিক সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়া হয়। পূর্ণমানে নেয়া হয়নি। তাতেও ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালের ফলাফলে অবনমন ঘটে। আর এবার (২০২৩ সালে) সবকয়টি বিষয়ে পূর্ণমানেই পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। যার কারণে ফলাফলে পিছিয়ে পড়ার সে–ই পুরানো চিত্রই নতুন রূপে ফিরেছে। অর্থাৎ গণিত–ইংরেজির দুর্বলতার পুরানো বৃত্তেই আটকে রয়েছে চট্টগ্রামের শিক্ষার্থীরা। এই বৃত্ত থেকে চট্টগ্রাম যেন বের হতে পারছে না।
ফলাফলে অবনমনের কারণ হিসেবে যথারীতি পার্বত্য জেলাসহ পিছিয়ে থাকা অঞ্চলের দুর্বলতাকে উল্লেখ করেছেন শিক্ষাবোর্ড সংশ্লিষ্টরা।
বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গতবছর তিনটি ছাড়া বাকি বিষয়গুলোতে পরীক্ষা হয়েছে। এর মাঝে বিশেষ করে ইংরেজি ২য় পত্র বিষয়ে অনেক শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি। যা ফলাফলে প্রভাব ফেলে। এবারও গণিত–ইংরেজিতে অনেক শিক্ষার্থী কৃতকার্য হতে পারেনি। ২২ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী এবার এক বিষয়ে অকৃতকার্য হয়েছে। যা বোর্ডের সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব ফেলেছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক নারায়ণ চন্দ্র নাথ। পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের দাবি– তিন পার্বত্য জেলাসহ পিছিয়ে থাকা অঞ্চলগুলোতে ইংরেজি–গণিত ও বিজ্ঞানের বিষয়ে অভিজ্ঞ শিক্ষকের অভাব রয়েছে। এসব অঞ্চলের অনেক প্রতিষ্ঠানে অন্য বিষয়ের শিক্ষক দিয়ে এসব বিষয় পড়ানো হয়। এসব কারণে শিক্ষার্থীরা ভালো করতে পারছে না। যার কারণে সামগ্রিক ফলাফলে প্রভাব পড়ছে এবং ফলাফলের ক্ষেত্রে চট্টগ্রাম পিছিয়ে থাকছে।
শিক্ষাবোর্ডের তথ্য অনুযায়ী, এবারের পরীক্ষায় মোট ১ লাখ ৫৪ হাজার ৮১৯ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়। এর মধ্যে পাস করেছে ১ লাখ ২০ হাজার ৮৬ জন। পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করতে পারেনি ৩৪ হাজার ৭৩৩ জন। অকৃতকার্যদের মাঝে এক বিষয়ে ফেল করা শিক্ষার্থীর সংখ্যা ২২ হাজার ৩৯৬ জন। যা মোট পরীক্ষার্থীর ১৪.৬০ শতাংশ।
প্রকাশিত এসএসসির ফলাফলের বিষয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মুস্তফা কামরুল আখতার বলছেন, শিক্ষার্থীদের বড় একটি অংশ মাত্র একটি বিষয়ে খারাপ করেছে। সেটি না হলে ফল আরো ভালো হতে পারতো।
চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ড সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী– জিপিএ–৫ পাওয়া মোট ১১ হাজার ৪৫০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৬ হাজার ৪৪৬ জন ছাত্রী এবং ৫ হাজার ৪ জন ছাত্র। বিজ্ঞান বিভাগে এবার পাসের হার ৯৩.৮৪ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ–৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৯ হাজার ৮৭১ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৮২.০৬ শতাংশ, মানবিক বিভাগে পাস করেছে ৬৫.৪১ শতাংশ। ব্যবসায় শিক্ষায় জিপিএ–৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪১৭ জন আর মানবিকে ১৬২ জন জিপিএ–৫ পেয়েছে।