নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় ভয়াবহ রকমের পরিবেশ বিপর্যয় ঘটছে । নগরীর বায়েজিদ বোস্তামী থানাধীন নাসিরাবাদ শিল্প এলাকায় কলকারখানা থেকে নির্গত ধোঁয়ায় ভরদুপুরে রাতের মতো অন্ধকার হয়ে যায় পুরো এলাকা। এলাকার হাজার হাজার মানুষের জীবনযাত্রা এক অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, এক সময় নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা শহর থেকে কিছুটা দূরে ছিল। ওই সময় এলাকাটিতে বিভিন্ন ধরনের শিল্প কারখানা গড়ে উঠে। এছাড়া টেক্সটাইল, ওয়াশিং কারখানা, বিভিন্ন কেমিক্যালসহ বিভিন্ন পণ্য উৎপাদনকারী কারখানা রয়েছে। একাধিক রি–রোলিং এবং স্টিল মিলসহ বিভিন্ন ধরণের ক্যামিকেল কারখানাগুলো থেকে রাতে দিনে ভয়াবহ আকারে কালো ধোঁয়া বের হওয়ার ঘটনা ঘটছে। পুরনো প্রযুক্তির এসব কারখানায় ধোঁয়া ফিল্টারিং এর কোন ব্যবস্থা নেই। এতে করে স্টিলমিলে স্ক্র্যাপ গলানোর সময় ধোঁয়ার সঙ্গে কার্বন, আয়রন, অ্যালুমিনিয়ামসহ বিভিন্ন পার্টিকেল নিঃসরণ হয়। কালো ধোঁয়ার সাথে এসব মানুষের নাক, মুখ দিয়ে শরীরে প্রবেশ করে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করছে। দেশে ধোঁয়া ফিল্টারিং করার প্রযুক্তি রয়েছে। ধোঁয়া থেকে বিভিন্ন মেটাল কণাসমূহ বের করে আলাদা করে চীনসহ বিভিন্ন দেশে রপ্তানিরও সুযোগ রয়েছে। কিন্তু ফিল্টারিং খরচ বাঁচাতে নাসিরাবাদ শিল্প এলাকার অধিকাংশ কারখানা এসব ধোঁয়া আকাশে ছেড়ে দিচ্ছে। আকাশে ছেড়ে দেয়ার ক্ষেত্রেও কোনো নিয়ম নীতি মানা হচ্ছে না। যার যেভাবে খুশি সেভাবে ধোঁয়া নির্গমনের ফলে পুরো এলাকাটি অন্ধকার হয়ে থাকে। যা এলাকার হাজার হাজার মানুষের জীবন দুর্বিষহ করে তুলছে।
স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এক সময় নাসিরাবাদ শিল্প এলাকা স্বতন্ত্র একটি শিল্প এলাকা হিসেবে গড়ে উঠলেও শহর বিস্তৃতি এবং মানুষের নানামুখী প্রয়োজন দেখা দেয়ায় বর্তমানে এটি শহরেরই অংশ। এখানে বিপুল বসতি গড়ে উঠেছে। ধারে কাছেও বিস্তৃতি লাভ করেছে মানুষের বসবাস। আবাসিক এলাকায় বহুতল শত শত ভবন গড়ে তোলা হয়েছে। এর পাশাপাশি মেডিকেল কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়, সরকারি–বেসরকারি পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট, ইংরেজি ও বাংলা মাধ্যম স্কুল–কলেজসহ নানা ধরনের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে। অপরদিকে নয়া নয়া শিল্প প্রতিষ্ঠানও হয়েছে। বেশ কয়েকটি ভারী শিল্পকারখানার পাশাপাশি গড়ে উঠেছে অসংখ্য গার্মেন্টস কারখানা। এতে করে এলাকাটিতে হাজার হাজার মানুষের আবাসনসহ বিপুল সংখ্যক মানুষের নানামুখী কর্মকান্ডও চলে।
কিন্তু এই বিপুল সংখ্যক মানুষের জীবনযাত্রায় অবর্ণীয় দুর্ভোগের সৃষ্টি করছে কারখানার কালো ধোঁয়া। বিভিন্ন কারখানা থেকে অনবরত কালো ধোঁয়া নির্গত হওয়ায় মানুষ ঘরের দরজা জানালা পর্যন্ত খোলা রাখতে পারছে না। দিনের বেলায়ও সড়কে অন্ধকার বিরাজ করে। মানুষের কাপড়ছোপড়ের পাশাপাশি ঘরের ভিতরে জমে কালির আস্তর। মানুষের শরীরের ভিতরেও কালো ধোঁয়া ভয়ংকর প্রভাব ফেলছে। বহু মানুষই শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরণের স্বাস্থ্য সংকটে ভুগছে। স্থানীয়দের পক্ষ থেকে দফায় দফায় পরিবেশ অধিদপ্তরের শরণাপন্ন হলেও কার্যতঃ শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলোর বেপরোয়া আচরণ অব্যাহত রয়েছে।
গতকাল পরিবেশ অধিদপ্তরের একজন পদস্থ কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে আমরা অবহিত। আমরা ইতোপূর্বে বহু অভিযান চালিয়েছি। মামলা করেছি। জরিমানা করেছি। আমাদের অব্যাহত অভিযানের মুখে বহু কারখানা ধোঁয়ার নির্গমন বন্ধ করেছে। ধোঁয়া পরিশোধন করে আকাশে ছাড়ছে। তবে আরো কয়েকটি কারখানা কালো ধোঁয়া ছাড়ছে। যেগুলোর বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।