বাংলাদেশ অন্যতম পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর তালিকায় । গত বছর জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে দেশে পানিতে ডুবে ৫৮২ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর ৯৯ শতাংশই ১৮ বছরের কম বয়সি। গত বছরের একই সময় মৃত্যু হয়েছিল ৫৭৭ জনের। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশের অধিকাংশ শিশু সাঁতার শেখার সুযোগ পায় না বিশেষ করে রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের বাসিন্দা। ফলে পানিতে ডুবে মৃত্যু বাড়ছে। এ ছাড়া অভিভাবকদের অসচেতনতা ও রাষ্ট্রীয় কোনো উদ্যোগ না থাকাও এ ধরনের মৃত্যুর জন্য দায়ী।

গ্লোবাল হেলথ অ্যাডভোকেসি ইনকিউবেটরের (জিএইচএআই) সহযোগিতায় গণমাধ্যম উন্নয়ন ও যোগাযোগ বিষয়ক প্রতিষ্ঠান ‘সমষ্টি’-এর একটি গবেষণার তথ্যনুযায়ী ২০২০ সালের জানুয়ারি থেকে ২০২২ সালে ১৭ জুলাই পর্যন্ত আড়াই বছরে মোট দুই হাজার ৮০৫ জন পানিতে ডুবে মারা গেছে। এমন বাস্তবতায় আজ তৃতীয়বারের মতো পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’। বাংলাদেশের প্রস্তাবে ২০২১ সাল থেকে প্রতিবছর ২৫ জুলাই আন্তর্জাতিকভাবে দিবসটি পালনের সিদ্ধান্ত নেয় জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদ। জাতিসংঘে নিযুক্ত বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা প্রস্তাবটি উপস্থাপন করেছিলেন।

পানিতে ডুবে শিশুমৃত্যুর একটি বড় কারণ বলা হয় সরকারের তেমন উদ্যোগ না থাকা। তবে এ মৃত্যু রোধে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় একটি প্রকল্পও তৈরি করেছে। সম্প্রতি প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন পেয়েছে।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, সমাজভিত্তিক শিশু যত্নকেন্দ্র স্থাপন এবং শিশুদের সাঁতার শেখানোসহ অভিভাবকদের সচেতন করা হবে এই প্রকল্পের মাধ্যমে; যা শিশুদের শারীরিক, মানসিক, সামাজিক ও আবেগ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এদিকে দিবসটি উপলক্ষে আজ বিকাল ৩টায় শিশু একাডেমিতে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়েছে।

জাতিসংঘের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, জাতিসংঘের রেজুলেশনে পানিতে ডুবে মৃত্যুকে ‘নীরব মহামারি’ হিসেবে স্বীকৃতি দিচ্ছে। জাতিসংঘের ৭৫ বছরের ইতিহাসে এ ধরনের রেজুলেশন এটিই প্রথম। এদিকে নীরব এই বৈশ্বিক মহামারির বিষয়টিকে আন্তর্জাতিক প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী মিশন গত ২০১৮ সালে থেকে কাজ করে যাচ্ছে। বাংলাদেশের পাশাপাশি রেজুলেশনটিতে সহ-নেতৃত্ব দেয় আয়ারল্যান্ডসহ ৮১টি দেশ।

জাতিসংঘে গৃহীত প্রস্তাবে বলা হয়, পানিতে ডুবে মৃত্যু বিশ্বের প্রতিটি জাতিরই ক্ষতি করছে। অগ্রহণযোগ্য উচ্চহারের এই মৃত্যু প্রতিরোধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার লক্ষ্যে একটি কর্মকাঠামোও তুলে ধরা হয়েছে এ প্রস্তাবে। রেজুলেশনে বলা হয়েছে, পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি ও জাতীয় পদক্ষেপকে উৎসাহিত করতে এবং বিষয়টির সর্বোত্তম অনুশীলন ও সমাধানসমূহ পারস্পরিকভাবে ভাগ করে নিতে ২৫ জুলাইকে ‘বিশ্ব পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধ দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করেছে সাধারণ পরিষদ।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031