হাইকোর্ট দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে উদ্দেশ করে বলেছেন, আপনারা কি মালিক হয়ে গেছেন? মিটিংয়ে আছেন (ওসিকে উদ্দেশ করে) বলে ফোন কেটে দেন। মিটিং শেষ করে আর ফোন দেননি, কোনো পদক্ষেপ নেননি। দেশের মালিক জনগণ। অথচ যে যেখানে বসে, সে সেখানকার মালিক বনে যান। আপনারা কি নিজেদের মালিক মনে করেন? জামিনে থাকার পরও আসামিকে গ্রেপ্তার করে আবার কোর্টে পাঠিয়েছেন। এর জন্য কি দেশ স্বাধীন হয়েছে? আদালতের মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব আপনাদেরও।
জামিনে থাকা কলেজ শিক্ষার্থী মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তারের ঘটনায় পটুয়াখালীর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মনিরুজ্জামান ও সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মিজানুর রহমানকে সোমবার ভর্ৎসনা করেন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ।
ওই দুই পুলিশ সদস্য এ নিয়ে তিন দিন হাইকোর্টে হাজিরা দিলেন। তাদের পক্ষে ফের নিঃশর্ত ক্ষমা চান তাদের আইনজীবী। পরে আদালত আগামী ৩০ জুলাই পরবর্তী আদেশের জন্য রাখেন।
আদালতে আশরাফুল হাওলাদারের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা। দুই পুলিশ কর্মকর্তার পক্ষে ছিলেন আইনজীবী আবু রেজা মো. কাইয়ুম খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী, সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল আনিসুর রহমান।
পরে আইনজীবী আলী আহসান মোল্লা বলেন, ‘আমি ১৭ মে আসামি আশরাফুল হাওলাদারকে জামিন করাই। ১৮ মে রাত আনুমানিক ৮টার দিকে পুলিশ মো. আশরাফুল হাওলাদারকে গ্রেপ্তার করে। তখন আসামি আমাকে ফোন দিয়ে বলেন, স্যার পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে।
অ্যাডভোকেট সার্টিফিকেট দেখাইছি। কিন্তু তারা (পুলিশ) মানতেছে না। তখন আসামির ফোন দিয়েই আমি এএসআইয়ের সঙ্গে কথা বলি।
আইনজীবী পরিচয় দিয়ে গ্রেপ্তার না করার অনুরোধ করলেও তিনি আসামিকে ছাড়েননি। উল্টো আমাকে বলেছেন, তার কাছে ওসির গ্রেপ্তারি পরোয়ানা আছে, নিয়ে যেতে হবে। এরপর রাত পৌনে ১০টার দিকে আসামির আত্মীয়-স্বজনরা আমাকে ফোন দিয়ে ওসির নম্বর দেন। এরপর ১০টা ১ মিনিটে আমি ওসিকে ফোন দেই। তিনি হয়তো বুঝতে পেরেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী, তাই ফোন ধরে মিটিংয়ে আছেন বলে ফোন রেখে দেন। কিন্তু ওসি আর পরে আমাকে ফোন দেননি। পরদিন অর্থাৎ ১৯ মে আসামিকে কোর্টে চালান করে দেন।’
এ আইনজীবী বলেন, এই কথাগুলো আমি হলফনামা করে আদালতে জমা দিয়েছি। এই বক্তব্য শুনে আদালত জানতে চেয়েছিলেন এ বিষয়ে পুলিশের কোনো বক্তব্য আছে কি না। যদি থাকে তবে কোর্টে আগামী ৩০ জুলাইয়ে লিখিত আকারে তা জমা দিতে বলেছেন। ওইদিন আদালত আদেশ দেবেন। দুই পুলিশ সদস্যের আইনজীবী তাদের ব্যক্তিগত হাজিরা থেকে অব্যাহতি চাইলেও আদালত তা দেননি বলে জানান এই আইনজীবী।