চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা চাকরি স্থায়ীকরণসহ ১০ দফা দাবিতে আবারো আন্দোলনে নেমেছেন । এর অংশ হিসেবে গতকাল রোববার থেকে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও দাবি সম্বলিত লিফলেট বিতরণ কর্মসূচি শুরু হয়েছে। প্রথম দিন বিকাল ৩টা থেকে ৪টা পর্যন্ত টাইগারপাস নগর ভবনের প্রধান কার্যালয়ে চলা এ কর্মসূচিতে প্রায় ৪০০ জনের কাছ থেকে স্বাক্ষর সংগ্রহ করে চসিক অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারী পরিষদ। আগামী কয়েকদিনও একইভাবে প্রধান কার্যালয়সহ অন্যান্য কার্যালয়ে এ কর্মসূচি পালন করা হবে। পরে স্বাক্ষরসহ দাবি সম্বলিত লিফলেট মেয়রকে হস্তান্তর করা হবে। এরপর দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতিসহ অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।গতকাল বিকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারীরা জড়ো হয়ে বিভিন্ন কক্ষে গিয়ে স্বাক্ষর সংগ্রহ করেন এবং লিফলেট বিতরণ করেন। বিভিন্ন কক্ষের দেয়ালেও লিফলেট সাঁটাতে দেখা গেছে। এ সময় তাদের আহ্বানে সাড়া দিয়ে অনেক স্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারীও স্বাক্ষর করেন। পরে অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারী পরিষদের কয়েকজন প্রতিনিধি চসিকের প্রধান নির্বাহীর দপ্তরে প্রবেশ করে তাদের দাবিগুলো উপস্থাপন করেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক আবু তাহের, সদস্য সচিব সাজু মহাজন, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সচিব জাহিদুল ইসলাম জোমাদ্দার, যুগ্ম আহ্বায়ক লিটন বড়ুয়া, তাপস দাশ ও বোরহানুল আলম।
জাহিদুল ইসলাম জোমাদ্দার আজাদীকে বলেন, প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা চসিকের নিয়োগবিধি জটিলতার কারণে নিয়মিতকরণ করতে সমস্যা হচ্ছে বলে প্রতিনিধিদলকে জানান। একইসঙ্গে স্থায়ীকরণে সর্বোচ্চ আন্তরিকতার সাথে চেষ্টা করা হচ্ছে বলেও অবহিত করেন। তখন শ্রমিক নেতৃবৃন্দ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে অস্থায়ী। নিয়োগবিধিতে জটিলতা থাকলে তা দূর করার দাবি করেন তারা। প্রধান নির্বাহী নিয়োগবিধি সংশোধন করার ইঙ্গিত দেন এবং সেজন্য কিছু সময় চেয়েছেন।
তিনি বলেন, প্রধান নির্বাহী মহোদয় গণস্বাক্ষর কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে বলছেন এবং স্বাক্ষর সংগ্রহ শেষে জমা দিতে বলেছেন।
চসিক অস্থায়ী কর্মকর্তা–কর্মচারী পরিষদের সদস্য সচিব সাজু মহাজন আজাদীকে বলেন, ২০–২৫ বছর ধরে চাকরি করছেন এমন অনেকেই এখনো স্থায়ী হতে পারেননি। অনেকের অবসরে যাওয়ার সময় হচ্ছে। স্থায়ী না হলে তারা অনেক সুযোগ–সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তিনি জানান, এর আগেও স্থায়ীকরণের দাবিতে আন্দোলন করা হয়েছিল। মেয়রসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আশ্বাসে তখন আন্দোলন স্থগিত করা হয়েছিল। এখন বাধ্য হয়ে আবার কর্মসূচি নিয়ে মাঠে নেমেছেন।
১০ দফা দাবি হচ্ছে, ১৯৮৮ ও ২০১৯ সালে অনুমোদিত শূন্য পদের বিপরীতে অস্থায়ীভাবে কর্মরত শ্রমিক ও কর্মচারীদের জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে চাকরি নিয়মিতকরণ তথা স্থায়ী করা। চসিকের সাংগঠনিক কাঠামোর বাইরে অস্থায়ীভাবে কর্মরত সকল কর্মকর্তা, কর্মচারী ও শ্রমিককে ২০১৫ সালের শ্রমিক আইন পাশ হওয়া ও ২০২০ সালে সরকার কর্তৃক পরিপত্র অনুযায়ী বেতন সমন্বয় করে বর্ধিত বেতন প্রদান করা এবং ১ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়া বিশেষ প্রণোদনা ভাতা অস্থায়ী কর্মরতদের প্রদান করা। আউটসোর্সিং পদ্ধতি বাতিল করা। ডোর টু ডোর শ্রমিকদের যোগদানপত্র প্রদান ও মাসের ১ তারিখের মধ্যে বেতন পরিশোধসহ সকল ধরনের বোনাস ও উৎসব ভাতা প্রদান করা। অস্থায়ী কোনো কর্মকর্তা–কর্মচারী কর্মরত অবস্থায় মৃত্যুবরণ ও অবসর গ্রহণ করলে ১০ লক্ষ টাকা এক মাসের মধ্যে পরিশোধ করা। স্থায়ীকরণ প্রক্রিয়া শেষ না হওয়া পর্যন্ত কোনো নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ কিংবা অস্থায়ীভাবে শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রাখা। অবসরোত্তর গ্র্যাচুইটি তিন মাসের মধ্যে পরিশোধ করা। স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে চসিকে পেনশন প্রথা চালু করা। সিটি কর্পোরেশনের পরিত্যক্ত জায়গায় অন্যান্য স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের মতো কর্মচারীদের জন্য আবাসন প্লট বা ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা করা এবং শ্রমিকদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় সার্বক্ষণিক ভালো–মন্দ দেখভাল করার জন্য (সিবিএ) পুনর্গঠন করা।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, সংস্থাটিতে অনুমোদিত জনবল কাঠামো অনুযায়ী পদ আছে ৪ হাজার ২২৬টি। কিন্তু কর্মরত আছেন ৮ হাজার ৮০৩ জন। এর মধ্যে স্থায়ী আছেন ২ হাজার ৭৭০ জন। অর্থাৎ অস্থায়ী আছেন ৬ হাজার ৩৩ জন। অনুমোদিত জনবল কাঠামোর বিপরীতে বর্তমানে শূন্য পদ আছে এক হাজার ৪৫৭টি। স্থায়ীকরণের দাবিতে ২০২১ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর প্রথম কর্মসূচি পালিত হয়।