চাই সচেতনতা ডেঙ্গুতে আতঙ্ক নয় । জমে থাকা পানিতে জন্মায় ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণু বহনকারী এডিস মশা। গ্রীষ্মমণ্ডলীয় দেশ ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের একটি উদ্বেগজনক রোগ হল ডেঙ্গু। দক্ষিণ এশিয়া ও দক্ষিণ পূর্ব আমেরিকার দেশ গুলোতেই এ রোগটি অধিক পরিলক্ষিত হয়। এটি ভেক্টর–বাহিত ও ভাইরাস ঘটিত রোগ।

এডিস নামক একটি বিশেষ মশকের মাধ্যমে ভাইরাসটি মানবদেহে সংক্রমিত হয়। ডেঙ্গুর প্রকোপ সাধারণত গ্রীষ্মকালীন সময়েই দেখা যায়। ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসায় নির্ধারিত কোনো ওষুধ নেই। ডেঙ্গুর প্রতিষেধক আবিষ্কারে বিজ্ঞানীরা গবেষণা চালিয়ে যাচ্ছেন। বিশ্বের কয়েকটি দেশে ডেঙ্গু আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রতিরোধী টিকা অনুমোদিত হলেও, এ টিকা কেবল মাত্র প্রথমবার ডেঙ্গু আক্রান্তদের জন্যই কার্যকর। প্রতি বছরের ন্যায় এবারও ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশের মতই আমাদের দেশেও ডেঙ্গু রোগের প্রকোপ দেখা দিয়েছে।

ডেঙ্গুর সঠিক চিকিৎসা বাড়িতে থেকেই এই রোগের নিরাময় করা সম্ভব। শুধুমাত্র বিশেষ কিছু ক্ষেত্রেই রোগীকে হাসপাতালে ভর্তির প্রয়োজন হয়। দুয়েক সপ্তাহের মধ্যে রোগী ভাল হয়ে যাওয়ার পূর্ণ সম্ভাবনা থাকে। সামান্য কিছু উপায় মেনে চললে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে আমরা নিজেদের রক্ষা করেতে পারি। এই রোগ ছড়িয়ে পরার হাত থেকে সহজেই নিষ্কৃতি পেতে পারি। ডেঙ্গু হতে প্রতিকারের জন্য সচেতনতার সাথে আমরা ঘরোয়াভাবে প্রতিকারমূলক কিছু কার্যকর ব্যবস্থা নিতে পারি–ডেঙ্গু যেহেতু একটি মশা–বাহিত রোগ, তাই মশার কামড়ের হাত থেকে নিজেকে এবং পরিবারকে বাঁচিয়ে চলতে হবে। জমে থাকা জলেই যেহেতু এডিস মশা ডিম পাড়ে ও বংশবিস্তার করে, তাই কোনো অবস্থাতেই বাড়ির চারপাশে জল জমে থাকতে দেয়া যাবে না।

সপ্তাহে অন্তত একবার জল জমতে পারে এমন জায়গা পর্যবেক্ষণ করতে হবে। গাছের টব, ফুলদানি, পরে থাকা গাড়ির টায়ার কিংবা ডাবের খোসায় জমে থাকা জল ফেলে দিতে হবে। শরীর ঢাকা জামা কাপড় যেমন লম্বা–হাতা শার্ট, লম্বা প্যান্ট, মোজা এবং জুতা পরুন। ডেঙ্গু ভাইরাস বহনকারী মশা ভোর থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি সক্রিয় থাকে। এই সময় অতিরিক্ত সতর্ক থাকতে হবে। রাতে কিংবা দিনে শোবার সময় মশারি ব্যবহার টাঙাতে হবে। ডেঙ্গু রোগীদের বেশী পরিমাণে তরল খাবার খেতে দিতে হবে। কিছু পুষ্টি উপাদান ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বিশেষ ভাবে উপকারী হয়ে থাকে। যেমন ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল, বেরি এবং শাক–সবজি, সামুদ্রিক খাবার, মটরশুটি, বাদামে আয়রন সমৃদ্ধ খাবার, ওটমিল, পেঁপে, ডাবের পানিসহ বেশী পরিমাণে পানি খেতে হবে। আমিষ খাবার, চর্বি ও তৈলাক্ত খাবার, ভাজাভুজি অর্থাৎ সহজে হজম হয়না এমন খাবার ডেঙ্গু রোগীদের খাওয়ানো উচিত নয়। চিকিৎসায় অবহেলা কিংবা ভুল চিকিৎসায় ডেঙ্গু রোগ মারাত্মক আকার ধারণ করতে পারে। একবার যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ভাল হয়েছিল তাদেরকে অতিরিক্ত সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। দ্বিতীয়বার কিংবা তৃতীয়বার ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম দেখা দিচ্ছে বেশি। ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে রক্তচাপ বিপজ্জনকভাবে কমে গিয়ে রোগীর মৃত্যু ঘটায়। তাই, রোগের মাত্রা অতিরিক্ত ভাবে বৃদ্ধি পেলে রোগী কে হাসপাতালে ভর্তি এবং ডাক্তারি নজরদারিতে তে রাখা একান্ত জরুরি। কোনো ধরনের অবহেলা কিংবা ভুল নয়, আসুন সকলেই সচেতন হই।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন জনগণকে সকল প্রকার সহায়তা প্রদান করতে সর্বদা প্রস্তুত। আমরা মশক নিধন কার্যক্রমের নিয়মিত কর্মসূচীর পাশাপাশি এডিস মশার লাভা ধ্বংস করতে ও প্রজনন ক্ষেত্র নষ্ট করতে বিশেষ ক্রাশ প্রোগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছি। নগরীরতে মাইকিং, সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ, ডেঙ্গুর প্রদুর্ভাব ভাড়ার সাথে সাথে ড্রোনের সাহার্যে ছাদ বাগান গুলোতে নিয়মিত নজর রাখা হচ্ছে। এতে সুফলও পাওয়া যাচ্ছে। মেমন হাসপাতাল–২ বিনামূল্যে রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ডেঙ্গুর জীবানু শনাক্ত করার ব্যবস্থা করেছি আমরা। মশাবাহিত সকল রোগ প্রতিরোধে আরো কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে এবং ডেঙ্গু রোগের চিকিৎসা সুবিধা বাড়াতে ও সহজীকরণ করতে সরকারী, বেসরকারী সকল সংস্থা, স্বাস্থ্য বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সকল বিভাগ ও সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় সভা করেছি। নগরীর সকল মানুষের চিকিৎসা সেবা নিশ্চিত করতে আমরা সর্বোচ্চ কার্যকর ব্যবস্থা চালু করতে চাই। এছাড়াও ডেঙ্গু প্রতিরোধে পাড়া, মহল্লা প্রধানদের চিঠি প্রেরণ করেছি।

নগরবাসীর সহযোগিতা ছাড়া এ কার্যক্রম পরিচালনা অত্যন্ত দুরূহ ব্যাপার। সকলকে নিজ নিজ বাড়ির আঙিনা ও আশপাশ এবং বাড়ির ছাদ নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা অত্যন্ত জরুরি। কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা গৃহের অভ্যন্তরে গিয়ে কাজ করতে পারেন না, নিয়মিত তারা বাইরের দিকে ছোট–বড় নালা, নর্দমা ও রাস্তা–ঘাট পরিচ্ছন্ন রাখতে কাজ করেন। কিন্তু, বাড়ির ভেতরে ও গৃহকোণের পরিচ্ছন্নতা কিংবা ছাদ পরিস্কারের কাজে বাসিন্দাদেরই সচেতনতার সাথে করতে হবে। প্রয়োজনে তারা কর্পোরেশনের পরিচ্ছন্নতা বিভাগের সাথে যোগাযোগ করে পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের বিশেষ সহায়তা নিতে পারেন। এজন্য পরিচ্ছন্নতা বিভাগ হট লাইন চালু রেখেছে। ডেঙ্গু রোগীর সেবায় কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগও হট লাইন চালু রেখেছে। আসুন সকলেই সচেতন হই, ডেঙ্গুকে সমূলে বিনাশ করি। সকলকে ধন্যবাদ।

জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু, জয়তু শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

লেখক : বীর মুক্তিযোদ্ধা, মেয়র, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031