আওয়ামী লীগের পাল্টা হামলা বিএনপির পদযাত্রা থেকে হামলার পর ।। নগরীর কয়েকটি এলাকা রণক্ষেত্র, ১৪টি গাড়ি ভাঙচুর, আহত ২০
আওয়ামী লীগ ও বিএনপির পাল্টাপাল্টি হামলার ঘটনায় গতকাল নগরীর কয়েকটি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। ঘটনায় ১০টি মোটরসাইকেলসহ ১৪টি গাড়ি ভাঙচুর করা হয়েছে। হামলা পাল্টা হামলায় কমপক্ষে ২০ জন আহত হয়েছে।
পুলিশ, প্রত্যক্ষদর্শী এবং স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, গতকাল বিকেলে নগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপি নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে পূর্বঘোষিত কর্মসূচি পদযাত্রা শুরু করে। পদযাত্রাটি নগরীর লালখান বাজার হয়ে নানা জায়গা ঘুরে দেওয়ানহাট মোড়ে গিয়ে শেষ হয়। পরবর্তীতে ফিরে যাওয়ার সময় পদযাত্রার বেশ কিছু নেতাকর্মী চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপ–নির্বাচনের প্রার্থী মহিউদ্দিন বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয় লক্ষ্য করে ব্যাপক হারে ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করে। এক পর্যায়ে তারা লাঠিসোঁটাসহ কার্যালয়ে ঢুকে পড়ে ওখানে অপেক্ষমান ছাত্রলীগ, যুবলীগ এবং আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের বেধড়ক মারধর ও ভাঙচুর করে। এসময় মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ের সামনে থাকা ৪টি প্রাইভেটকার এবং অন্তত ১০টি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করে। তছনছ করা হয় কার্যালয়ের চেয়ার টেবিলসহ আসবাবপত্র। ব্যানার ফেস্টুন ছিঁড়ে ফেলা হয়। ব্যাপকভাবে তাণ্ডব চালিয়ে তারা চলে যায়।
প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর কার্যালয়ে হামলার পর ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় ব্যাপক উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। এই সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন। সন্ধ্যা ৬টার দিকে বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী একত্রিত হয়ে এক কিলোমিটার দূরে থাকা নূর আহমদ সড়কের বিএনপির নাসিমন ভবন কার্যালয়ে পাল্টা হামলা চালায়। এ সময় কার্যালয়ের ভেতরের চেয়ার, জানলার কাচসহ আসবাসপত্র ও বাইরে থাকা একটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয়। কার্যালয়ের বাইরে টাঙানো ব্যানার–ফেস্টুন ছিঁড়ে জড়ো করে আগুনও দেয়া হয়। পুলিশ ও প্রত্যক্ষদর্শীরা হামলা, পাল্টা হামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তবে ওই সময় বিএনপির কোনো নেতাকর্মী কার্যালয় বা কার্যালয়ের সামনে ছিলেন না। নাসিমন ভবনে হামলার ঘটনার সময় পুলিশ নেতাকর্মীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করে। তাদেরকে সরিয়ে দিয়ে নাসিমন ভবন ঘিরে রাখে।
কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা জাহিদুল কবির বলেন, নাসিমন ভবনের সামনে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। ঘটে যাওয়া ঘটনা ক্ষতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ বিষয়ে নগর আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক শফিকুল ইসলাম বলেন, নৌকার প্রধান নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা চালিয়েছে বিএনপির নেতাকর্মীরা। গাড়ি, ব্যানার–পেস্টুন ভাঙচুর করা হয়েছে। কার্যালয়ের ভেতর থাকা নেতাকর্মীদের মারধর করা হয়েছে। হঠাৎ করেই ইটপাটকেল নিক্ষেপ করতে করতে বিএনপির সন্ত্রসীরা আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রচারণায় হামলা চালিয়েছে বলেও জানান তিনি।
নগর বিএনপির দপ্তরের দায়িত্বপ্রাপ্ত ইদ্রিস আলী বলেন, জয় বাংলা স্লোগান দিয়ে অসংখ্য লোকজন নাসিমন ভবনে হামলা করেছে। এ সময় সেখানে কেউ ছিলেন না।
নাসিমন ভবনের সামনে উপস্থিত সাংবাদিকদের নগর পুলিশের উপ–কমিশনার (দক্ষিণ) মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিএনপির পদযাত্রা শেষে ফিরে যাওয়ার পথে লালখান বাজার এলাকায় ফ্লাইওভারের ওপর থেকে চট্টগ্রম–১০ আসনের প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয়ে ইট–পাটকেল ছোঁড়াসহ লাঠিসোটা ছুড়ে মারা হয়। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে বিএনপি অফিসে এসেছেন। আমর কঠোর অবস্থানে ছিলাম। তারা পুলিশের সঙ্গে কথা বলে চলে গেছে। এখন পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে। সামগ্রিক ঘটনা তদন্ত করে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। তবে এসব ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে আটক করা হয়নি বলে জানিয়েছেন উপ–পুলিশ কমিশনার মোস্তাফিজুর রহমান।
খুলশী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সন্তোষ কুমার চাকমা গতকাল রাত ১২ টায় বলেন, বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। জড়িতদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। এঘটনায় খুলশী থানায় একটি মামলা হয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, বিএনপির নেতাকর্মীদের মহিউদ্দিন বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয়ে হামলা এবং পরবর্তীতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পাল্টা বিএনপির কার্যালয়ে হামলার ঘটনায় ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। স্থানীয় লোকজন আত্মরক্ষার্থে এদিক সেদিক দৌঁড়াদৌঁড়ি করেন। রাস্তায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। লালখানবাজারসহ সন্নিহিত এলাকায় ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।