বেসরকারি এতিমখানাগুলো সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি বরাদ্দের টাকা বছরের পর বছর আত্মসাৎ করে আসছে বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলায় । বাকেরগঞ্জে অধিকাংশ এতিমখানার অস্তিত্ব কেবল সাইন বোর্ডে, বাস্তব চিত্র ভিন্ন। নেই কোনো এতিম শিশু, তবুও চলছে এতিমখানা। ভুয়া কাগজপত্র দেখিয়ে এতিমখানার নামে ভুয়া এতিমদের তালিকা করে দীর্ঘদিন ধরে সরকারের কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে প্রভাবশালী চক্র।
চিহ্নিত ওই চক্রের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নীরব ভূমিকায়। দীর্ঘ বছরের পর বছর ধরে সমাজ সেবা অধিদপ্তরের রাষ্ট্রীয় অর্থ লোপাটের এই মহোৎসব চলে আসলেও বন্ধ করতে পারছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বরিশাল সমাজসেবা কর্মকর্তাদের ম্যানেজ করে ভুয়া এতিম সাজিয়ে সরকারি বরাদ্দ আত্মসাতের জমজমাট ব্যবসা চলছে এখনো এই উপজেলার বেসরকারি এতিমখানাগুলোতে।
গত বছর ১৫ মে দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকায় বাকেরগঞ্জ এতিমখানার নামে সরকারের কোটি কোটি টাকা লুট, শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করলে উপজেলার সমাজসেবা কার্যালয়ের তালিকা অনুযায়ী, উপজেলায় ১৮টি বেসরকারি এতিমখানা পরিদর্শন করেন তৎকালীন উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা। তিনি সরেজমিনে পরিদর্শন করলে ১৮টি এতিমখানা থেকে ৪টি এতিমখানায় সরকারি বরাদ্দ বন্ধ হয়ে যায়। এছাড়াও বেশকিছু এতিমখানা থেকে এতিম না থাকায় সরকারি বরাদ্দের ৩২ লাখ টাকা রাজস্ব খাতে ফেরত দেন।
এ বছর জনকণ্ঠ অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০২৩ সালের সমাজসেবার তালিকা অনুযায়ী, উপজেলায় বেসরকারি এতিমখানাগুলোতে সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি বরাদ্দ রয়েছে ১৪টি এতিমখানায়। ২০২৩ সালের জানুয়ারি থেকে ২৩ জুন পর্যন্ত ১৪টি এতিমখানায় সরকারি বরাদ্দের তালিকায় দেখা গেছে ২ কোটি ৪ লাখ ২০ হাজার টাকা।
সমাজ সেবা অফিস সূত্রে জানা যায়, কিছু দিনের মধ্যেই বেসরকারি এতিমখানায় সমাজসেবা অধিদপ্তরের সরকারি বরাদ্দের টাকার চেক প্রদান করা হবে।
অনুসন্ধানে আরো দেখা যায়, উপজেলার কলসকাঠী ইউনিয়নের নারাঙ্গল নেছারমহল দারুস ছুন্নত এতিমখানার তালিকা অনুযায়ী, এ বছর ২৬ জন এতিমের জন্য ৬ মাসের বরাদ্দ রাখা হয়েছে ৩ লাখ ১২ হাজার টাকা। অথচ ১৭ জুলাই সরেজমিনে দেখা যায়, কোনো এতিম ছাত্র নেই এতিমখানায়। তবে ৭ জন শিক্ষার্থী দেখা গেলেও তাদের অনেকের বাড়ি কলাপাড়া ও খেবু পাড়ায়। তাদের কাছ থেকে প্রত্যেক মাসে ৫০০ টাকা করে বেতন নেয়া হয়।
অথচ প্রত্যেক শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বরাদ্দে খাদ্য বাবদ ১৬০০ টাকা, পোষাক বাবদ ২০০/এবং চিকিৎসা ও অন্যান্য বাবদ ২০০/ টাকা দেয়া হয়। ওই এতিমখানার সাইন বোর্ড পর্যন্ত দেখা যায়নি। শুধু দক্ষিণ নারাঙ্গল নেছারমহল দারুস ছুন্নত মাদ্রাসার সামনে নেছারমহল দারুস ছুন্নাত এতিমখানার নামে একটি পরিত্যক্ত ভবন পড়ে রয়েছে।
এই এতিম খানার বিষয়ে জানতে চাইলে নেছারমহল দারুস ছুন্নত মাদ্রাসার সুপার মো: মাহবুবুর রহমান জানান, নেছারমহল দারুস ছুন্নত এতিমখানার নিজস্ব জমিতে কোনো প্রতিষ্ঠান নেই। খালি জমি পড়ে রয়েছে। তারা আমাদের মাদ্রাসার তৃতীয় তলা দখল করে নামে মাত্র এতিমখানা গড়ে তুলেছে। এই বিষয়ে আমি বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেও কোন সুফল পাইনি।
একইভাবে চলছে চরাদী ছালেহিয়া এতিমখানা। ২০২৩ সালের সরকারি বরাদ্দের তালিকায় ২০ জন এতিমের নামে বরাদ্দ রাখা হয়েছে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকা। ১৮ জুলাই ওই এতিমখানায় গেলে দেখা যায়, ১১ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। তাদের সঙ্গে কথা হলে জানা যায়, তাদের অনেকেই এতিম নয়। তাদের বাড়ি ঘর বাকেরগঞ্জ উপজেলার বাইরে।
এছাড়াও বড় রঘুনাথপুর মরহুম আবদুল আলী এতিমখানা, মোহাম্মদিয়া হামিদিয়া এতিমখানা, পারশিবপুর সাতঘর এতিমখানা, হাসিনা চৌধুরী এতিমখানা, পাটকাঠি নেছারিয়া এতিমখানা, দারুল আমিন এতিমখানাও একইভাবে চলছে।
বাকেরগঞ্জ উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা হেমায়েত উদ্দিন জানান, আমি তিন মাস হয় বাকেরগঞ্জ উপজেলায় এসেছি। চেষ্টা চালাচ্ছি ওই সব প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার।