সংবিধানের আলোকে নির্বাচন হবে। নির্বাচন পরিচালনা করবে নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বলেছেন। কোনো অবস্থাতেই সংবিধানের বাইরে নির্বাচন হবে না। যেকোনো সমস্যার সমাধানের জন্য আলোচনার বিকল্প নেই। ডায়লগ হতেই পারে। কিন্তু আমি মনে করি, প্রথম তাদের স্বীকার করতে হবে তারা নির্বাচনে আসবে। আমাদের সংবিধানের ১২৬ ধারায় সুস্পষ্ট বলা আছে, সবাই নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, চিফ অব স্টাফ, আইজিপি, কেবিনেট সেক্রেটারি প্রত্যেকে নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করবে। প্রত্যেকের দায়িত্ব হলো নির্বাচন কমিশনকে সহযোগিতা করা। কাজেই নির্বাচন সুষ্ঠু হবে কিনা হবে এটা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দায়িত্ব না। এ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে দিকনির্দেশনা দেওয়া আছে। ক্ষমতা দেওয়া আছে। সেই ক্ষমতাকে ব্যবহারে তারা যদি ব্যর্থ হয় আমরা কী করবো। কাজেই কোনো অবস্থাতেই সংবিধানের বাইরে নির্বাচন হবে না।
গতকাল সোমবার দুপুরে রাউজান সরকারি কলেজ মাঠে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর উদ্যোগে এ বছর একযোগে ৫ লাখ বৃক্ষের চারা বিতরণ ও রোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে কৃষিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
ড. আবদুর রাজ্জাক বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপি দেশে অরাজকতা ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করতে চাচ্ছে। যে কোনো মূল্যে বিএনপির এসব ধ্বংসাত্মক ও দেশ বিরোধী আন্দোলন মোকাবেলা করা হবে। কোনো শক্তিই নির্বাচনকে বানচাল করতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অধীনেই আগামী নির্বাচন সুষ্ঠু সুন্দর হবে।
মন্ত্রী তার বক্তব্যে এও বলেন, যদি উনারা বলেন আমরা নির্বাচনে আসব, প্রধানমন্ত্রী ক্ষমতায় থাকবেন, কিন্তু অমূক এসপিকে সরাতে হবে, অমূক ডিসিকে সরাতে হবে এটি আমরা বিবেচনা করব। এর বাইরে আমাদের আর করার কিছু নেই। অপর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ডিসিদের অনেকেরই তিন বছর হয়ে গেছে, দুই বছর হয়ে গেছে। নির্বাচন আসছে। কাজেই আমরা সরিয়ে নতুনদের দিচ্ছি। এটা যোগ্যতার ভিত্তিতে দিতে হয়। কেবিনেট সেক্রেটারির নেতৃত্বে একটি ইন্টারভিও বোর্ড হয়। অনেক প্রক্রিয়া। সবাই ডিসি, এসপি হতে পারে না। এর জন্য নিয়ম–কানুন মেনে চলতে হয়।
রেলপথ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, বিএনপি যেটা চাইছে গোলপোস্ট থাকবে, গোলকিপার থাকবে না। বিচার মানি তালগাছটা ওদের। ওরা ২০০১ সালে কী করেছে রাউজানবাসী সাক্ষী আছে। ওদের কথা হচ্ছে ওদের ধরে নিয়ে কেউ সিংহাসনে বসিয়ে দিক। আমি তো বহুদিন ধরে বলছি, একটা মানুষের নাম বলুক যে দেশ কে পরিচালনা করবে। তারা শান্তিতে দেশ চলুক এটা চায় না। রাউজানে সাড়ে তিনশ মানুষ মার্ডার হয়েছে। কই আওয়ামী লীগের আমলে তো একটা মার্ডারও হচ্ছে না। জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে উন্নয়ন হচ্ছে। বিএনপির উদ্দেশে তিনি বলেন, তারা অগ্নিসংযোগ করবে, ভাঙচুর করবে, লুটপাট করবে। এগুলোর সাক্ষী আমার চেয়ে বেশি কেউ জানবে না। আমাকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে একের পর এক মামলা দিয়েছে। এখানে জ্ঞানজ্যোতি ভিক্ষুকে হত্যা করা হয়েছিল।
কৃষিমন্ত্রী ড. আবদুর রাজ্জাক বর্তমান সরকারের শাসন আমলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ কথা তুলে ধরে বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকলে দেশের কোনো মানুষ অনাহারে মারা যায় না। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর থেকে দেশে খাদ্যে স্বয়ংসর্ম্পূণতা বজায় রয়েছে। ওই সময়ে দেশে ভুট্টা উৎপাদন হয়েছিল ৬ লাখ মেট্রিক টন। এ বছর দেশে ভুট্টা উৎপাদন হয়েছে ৬৭ লাখ মেট্রিক টন । গত ২০০৮ সালে দেশে সবজি উৎপাদন হয়েছে ৩০ লাখ মেট্রিক টন। বছরর দেশে সবজি উৎপাদন হয়েছে ২ কোটি ২১ লাখ মেট্রিক টন। মন্ত্রী ২০০১ সালের সংসদ নির্বাচনের পরবর্তী সময়ে বিএনপি–জামাত ক্ষমতায় আসার পর সনাতনী সমপ্রদায়ের অনুসারীদের বাড়ি–ঘর আগুন দেয়ার কথা তুলে ধরে ওই সময় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা কর্মীদের হত্যার মত লোমহর্ষক ঘটনার কথা সকলকে স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলেন, বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে আওয়ামী লীগকে সভা সমাবেশ করতে দেয়নি। আওয়ামী লীগ নেত্রীর সভায় গ্রেনেড হামলা করে দলীয় সভানেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার প্রচেষ্টা চালায়। ওই গ্রেনেড হামলায় শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও মহিলা আওয়ামী লীগ নেত্রী আইভি রহমানসহ অনেক আওয়ামী লীগ নেতা কর্মীকে প্রাণ দিতে হয়। মন্ত্রী দলীয় নেতাকর্মীদের বিএনপি–জামাত জোট ও স্বাধীনতা বিরোধীদের ষড়যন্ত্র থেকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানান। মন্ত্রী রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর নেতৃত্ব, দলীয় নেতাকর্মীদের শৃঙ্খলার প্রশংসা করে বলেন, এই রাউজান উপজেলার সাজানো গোছানো উন্নয়ন স্বচক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেখলে তিনি নিজেও অভিভুত হতেন বলে মন্তব্য করেন।
মন্ত্রী সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত রাউজানে কয়েকটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তিনি প্রথমে ডাকবাংলোতে পুলিশের পক্ষ থেকে সালাম গ্রহণ করে একটি চারা রোপন করেন। এরপর তিনি রাউজান পৌরসভায় মুক্তিযুদ্ধ গণপাঠাগার, বঙ্গবন্ধু কর্নার পরিদর্শন করেন। উপজেলা পরিষদের কর্মকর্তাদের সাথে মতবিনিময়ের পর উপজেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে দলীয় নেতাকর্মীদের সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
এসব অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান। উপজেলা নির্বাহী অফিসার আব্দুস সামাদ শিকদারের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথিকে সাথে নিয়ে বেলুন উড়িয়ে কর্মসূচি উদ্বোধন করেন রাউজানের সংসদ সদস্য এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী।
এসব অনুষ্ঠানে অন্যান্য অতিথিদের মধ্যে ছিলেন রাউজান উপজেলা চেয়ারম্যান একেএম এহেছানুল হায়দার চৌধুরী বাবুল, উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি কাজী আব্দুল ওহাব, রাউজান পৌর মেয়র জমির উদ্দিন পারভেজ, সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ কফিল উদ্দিন, সিনিয়র সহ সভাপতি আনোয়ারুল ইসলাম, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) রিদুয়ানুর ইসলাম প্রমুখ।
মন্ত্রী রাউজান ত্যাগের আগে পৌরসভার নয় নম্বর ওয়ার্ডে নির্মাণাধীন বঙ্গমাতা ফজিলাতুননেছা প্রবীণ নিবাস ও সায়মা ওয়াজেদ অটিজম সেন্টার দেখতে যান।