চট্টগ্রাম ওয়াসার পানির বকেয়া বিলের পরিমাণ দিন দিন বাড়ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে । সরকারি–বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে পানির বিল বকেয়া পড়ে আছে শত কোটি টাকার উপরে। অনেক প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত বিল পরিশোধই হচ্ছে না। বর্তমানে সরকারি–বেসরকারি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের কাছে চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম ওয়াসার ১১৩ কোটির বেশি বকেয়া পাওনা রয়েছে বলে রাজস্ব বিভাগ থেকে জানা গেছে।

ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে বকেয়া আদায় করা যতটা সহজ, তার থেকে বেশি কঠিন সরকারি সংস্থাগুলোতে টাকা আদায় করা। গত মে মাসে চট্টগ্রাম ওয়াসা কর্তৃপক্ষ শীর্ষ বিলখেলাপি ১০ সরকারি প্রতিষ্ঠানের তালিকাও প্রকাশ করেছিল। যাদের কাছে পাওনা প্রায় ১৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) মতো সেবা সংস্থাও আছে। একইসঙ্গে ১০ বিলখেলাপি ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের তালিকাও প্রকাশ করা হয়েছে, যাদের কাছে পাওনা দেড় কোটি টাকারও বেশি। চট্টগ্রাম ওয়াসার কর্মকর্তারা বলছেন, শীর্ষ খেলাপি ছাড়াও সরকারি–বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি গ্রাহকের কাছে ওয়াসার শত কোটি টাকারও বেশি রাজস্ব বকেয়া পড়ে আছে। বারবার তাগাদা দিয়েও তারা সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে বকেয়া বিল আদায় করতে পারছে না। কিন্তু জরুরি সার্ভিসের আওতায় থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে তারা কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না।

চট্টগ্রাম ওয়াসার রাজস্ব বিভাগের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা জানান, সরকারি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে একেবারে শীর্ষে রয়েছে গণপূর্ত অধিদপ্তর। তাদের ৫০টি সংযোগ রয়েছে। এই ৫০টি সংযোগের বিপরীতে এই প্রতিষ্ঠানে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ৮৩ হাজার ১৫৯ টাকা বকেয়া রয়েছে। অপরদিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের ১৩টি সংযোগের বিপরীতে ১ কোটি ৫৭ লাখ ৯১ হাজার ৮৭০ টাকা বকেয়া রয়েছে। এদিকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ১ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ৫৭০ টাকা বকেয়া রয়েছে বলে জানা গেছে। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের তাদের বিভিন্ন সেবামূলক শাখা গুলোতে মোট ৯১টি সংযোগ রয়েছে। সড়ক ও জনপথ অধিদফতর ২৮টি সংযোগের বিপরীতে ১ কোটি ২৪ লাখ ৭ হাজার ৬৫৪ টাকা, গৃহায়ণ অধিদফতরের আরও বিভিন্ন সংস্থা ২৪টি সংযোগের বিপরীতে ১ কোটি ৯ লাখ ৮৭ হাজার ১৮ টাকা বকেয়া রেখেছে।

সিডিএ’র কাছে ১৪টি সংযোগ বাবদ ওয়াসার পাওনা আছে ৮ কোটি ৫ লাখ ৫১ হাজার ৮০৫ টাকা। এছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন বিভিন্ন কার্যালয়ে ১১টি সংযোগের বিপরীতে ৭৮ লাখ ৪ হাজার ৫৮৫ টাকা, সরকারি বিভিন্ন কলকারখানায় ১৬টি সংযোগের বিপরীতে ৭০ লাখ ১ হাজার ৯৫৭ টাকা, পুলিশের বিভিন্ন কার্যালয়ে ৩১টি সংযোগের বিপরীতে ৫৬ লাখ ৪৪ হাজার ৭৭৯ টাকা এবং চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কাছে ৩৪টি সংযোগের বিপরীতে ৪৯ লাখ ৮০ হাজার ৪৫৫ টাকা বকেয়া আছে এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কাছে ৩৪টি সংযোগের বিপরীতে ৬৪ লাখ ৩৯ হাজার ৪৬ টাকা বকেয়া আছে।

ওয়াসার দেয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি মিলিয়ে শীর্ষ ১০ খেলাপি গ্রাহকের কাছে ওয়াসার পাওনা ১ কোটি ৬০ লাখ ৭৯ হাজার ৩৫৯ টাকা। জেমিসন মাতৃসদন হাসপাতালে ৪৪টি বিলের বিপরীতে ১২ লাখ ৭১ হাজার ৯৮৬ টাকা।

গত বছরের ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত হিসেব অনুযায়ী ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকের কাছে ওয়াসার মোট পাওনা ছিল ২ কোটি ২৩ লাখ ৬৬ হাজার ৫৯৫ টাকা। চট্টগ্রাম ওয়াসার ব্যবস্থাপক বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপকের কার্যালয়ের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যক্তি মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান থেকে বকেয়া আদায় করা যতটা সহজ, তার থেকে বেশি কঠিন সরকারি সংস্থাগুলোতে টাকা আদায় করা। আমরা বারবার চিঠি পাঠিয়েও বকেয়াগুলো আদায়ে সময় লাগে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031