চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) ও হাসপাতালের ৫টি স্টাফ কোয়ার্টার ভবন অবশেষে ভাঙার প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে পরিত্যক্ত ঘোষণার দশ বছর পর । চট্টেশ্বরী সড়কের গোঁয়াছি বাগান এলাকায় তিন তলা বিশিষ্ট ঝুঁকিপূর্ণ এসব ভবন অপসারণে সম্প্রতি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন মিলেছে। ৪ জুলাই মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের নির্মাণ শাখার উপসচিব মুহাম্মদ শাহাদত খন্দকার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এই অনুমোদনের তথ্য জানানো হয়েছে। চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান ও গণপূর্ত বিভাগ, চট্টগ্রাম–১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ এ সংক্রান্ত চিঠি পাওয়ার তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ায় এখন দ্রুত সময়ে এসব ভবন অপসারণের কাজ শুরু করা সম্ভব হবে বলে জানান গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৯ জুন নগরীর চকবাজার থানাধীন গোঁয়াছি বাগান এলাকার পাঁচটি স্টাফ কোয়ার্টার ভবনের একটির (২৫ নম্বর ভবনের) দোতলার একাংশ ধসে পড়ে। ঘটনার পর ভবনের বাসিন্দা ৬ পরিবারকে সরিয়ে নিয়ে ভবনটি সিলগালা করে দেয়া হয়। এর একদিন পর (১০ জুন) পাঁচটি ভবনকেই (ভবন নং– ২২, ২৩, ২৪, ২৫ ও ২৬) পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। চট্টগ্রাম জেলাপ্রশাসন ও চমেক কর্তৃপক্ষ জরাজীর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ এই ভবনগুলি পরিত্যক্ত ঘোষণা করে। ভবনগুলিতে মোট ৪৮টি পরিবার বাস করতেন।
পরিত্যক্ত ঘোষণার পর বাকি চারটি ভবনের ৪২টি পরিবারকে জরুরি ভিত্তিতে সেখান থেকে সরে যেতে মৌখিকভাবে নির্দেশ দেয় চমেক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু নির্দেশের পরও অনেক দিন পরিবারগুলো ভবন ছেড়ে যায়নি। পরবর্তীতে বেশ কয়েক দফা তাগিদের পর বাসিন্দারা অবশেষে ভবন ছেড়ে যায়। এরপর থেকে বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়া জরাজীর্ণ ভবনগুলি ঠাঁয় দাঁড়িয়েছিল। অপসারণের তেমন উদ্যোগও দেখা যায়নি। তবে সম্প্রতি গোঁয়াছি বাগান এলাকায় চীনের অর্থায়নে দেড়শ শয্যার বিশেষায়িত বার্ন ইউনিট স্থাপনের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এই সিদ্ধান্তের পর জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ওই এলাকায় গড়ে ওঠা বেশ কিছু অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। পাশাপাশি পরিত্যক্ত ঘোষিত ঝুঁকিপূর্ণ ৫টি ভবন অপসারণের অনুমোদন চেয়ে ৩০ মে (চলতি বছরের) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর চিঠি দেয় চমেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের চিঠির প্রেক্ষিতে ৪ জুলাই প্রদত্ত ফিরতি চিঠিতে এসব ভবন অপসারণে অনুমোদনের কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়। এর মাধ্যমে পরিত্যক্ত ঘোষণার দশ বছর পর অবশেষে ভবনগুলি অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।
জরাজীর্ণ অবস্থায় দীর্ঘদিন ভবনগুলি ওভাবে রয়ে গেছে জানিয়ে চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম আহসান আজাদীকে বলেন, দরজা–জানালা নাই। দেয়াল ধসে পড়েছে। ওভাবেই দীর্ঘদিন ভবনগুলি রয়ে গেছে। এসব ভবন অপসারণে অনুমোদন চেয়ে সম্প্রতি আমরা মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিই। মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছে। এখন পিডব্লিউডি (গণপূর্ত বিভাগ) ভবনগুলি অপসারণের কাজ বাস্তবায়ন করবে।
জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগ, চট্টগ্রাম–১ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ বলেন, মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ার পর ভবনগুলি অপসারণে এখন দরপত্র (টেন্ডার) আহবান করা হবে। দরপত্র আহবান প্রক্রিয়া সম্পন্নের পর ভবন ভাঙার কাজ শুরু করা যাবে। ভাঙার কাজ শুরু করতে আরো মাস দেড়েক সময় লাগতে পারে বলে জানান নির্বাহী প্রকৌশলী রাহুল গুহ। ভবনগুলি এতদিন অপসারণ না হওয়া প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্টদের দাবি– স্বাভাবিক ভাবে নতুন কোন অবকাঠামো নির্মাণের জন্য পুরণো ভবন ভাঙা হয়। কিন্তু এতদিন ওই জায়গায় নতুন কোন অবকাঠামোর প্রস্তাবনা ছিল না। যার কারণে পুরণো ভবনগুলি ভাঙা হয়নি। তবে এখন নতুন একটি প্রকল্পে ওই জায়গায় অবকাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে। তাই পুরণো পরিত্যক্ত ভবনগুলি অপসারণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন পাওয়ায় এখন ভবনগুলি অপসারণের প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে।