কর্মসংস্থান বাড়ছে বিদেশে । বাড়ছে বিদেশগামীর সংখ্যা। একই সাথে ট্যুরিজম, চিকিৎসা এবং শিক্ষাসহ নানা কাজে বিপুল সংখ্যক মানুষ প্রতিদিনই বিদেশ যাচ্ছে। কিন্তু বিদেশযাত্রার সবচেয়ে জরুরি উপকরণ পাসপোর্ট নিয়ে মানুষের সংকট প্রকট হয়ে উঠেছে। বিদেশগামীসহ শত শতমানুষ প্রতিদিন ভীড় করছেন নগরীর দুইটি পাসপোর্ট অফিসে। বিপুল সংখ্যক মানুষের চাপ সামাল দিতে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। চট্টগ্রামে ‘জরুরি ফি’ ছাড়া প্রায় কোনো পাসপোর্টই গ্রহণ করা হচ্ছে না।

সূত্র জানিয়েছে, বিদেশগামীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে। বিদেশে কর্মসংস্থান বাড়ার পাশাপাশি অন্যান্য কাজেও প্রচুর মানুষ বিদেশ যাচ্ছে। করোনাকালে বিদেশযাত্রা থমকে গেলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর বিদেশ যাত্রায় নতুন করে গতিশীলতা তৈরি হয়েছে। বিশ্বের নানা দেশে বেড়েছে কর্মসংস্থান। চিকিৎসা এবং শিক্ষার জন্যও দলে দলে মানুষ বিদেশ যাচ্ছে। গত বছর বাংলাদেশ রেকর্ড সংখ্যক প্রায় সাড়ে ১১ লাখ কর্মী বিদেশে পাঠিয়েছে। চলতি বছর এই সংখ্যা আরো বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করা হয়েছে। এর বাইরেও বিপুল সংখ্যক মানুষ গত বছর বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। চলতি বছরেও শ্রম শক্তির পাশাপাশি ট্যুরিস্ট, শিক্ষার্থী এবং রোগী হিসেবে প্রচুর মানুষ দেশের বাইরে গেছে।

বিপুল সংখ্যক মানুষ বিদেশযাত্রার শুরুতে পাসপোর্ট সংগ্রহ করছেন। অনেকেই করছেন নবায়ন। আবার কেউ কেউ ইতোপূর্বেকার এমআরপি (মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট) বাদ দিয়ে ই–পাসপোর্ট (ইলেক্ট্রনিক পাসপোর্ট) সংগ্রহ করছেন। সবকিছু মিলে চাপ পড়ছে নগরীর দুইটি পাসপোর্ট অফিসে। নগরীর মনসুরাবাদ এবং পাঁচলাইশ পাসপোর্ট অফিসে চট্টগ্রামের বিস্তৃত এলাকার মানুষের পাসপোর্ট প্রদান এবং নবায়নের কার্যক্রম চলে। এর মধ্যে মনসুরাবাদ অফিসে প্রতিদিন গড়ে দুই আড়াইশ’ এবং পাঁচলাইশ অফিসে দুইশ’র মতো আবেদন জমা পড়তো। কিন্তু বর্তমানে প্রতিদিন গড়ে প্রায় এক হাজার মানুষ দুইটি পাসপোর্ট অফিসে ভিড় করেন। স্বাভাবিক সময়ের দ্বিগুন তিনগুন আবেদনকারী পাসপোর্টের জন্য সকাল থেকে ভিড় করতে শুরু করেন। প্রতিদিন শত শত মানুষের চাপে দিশেহারা হওয়ার উপক্রম হয়েছে চট্টগ্রামের দুইটি পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা কর্মচারীদের।

নতুন পাসপোর্ট কিংবা নবায়নে নতুন করে ডাটা এন্ট্রি করা হচ্ছে। ই পাসপোর্টের জন্য চোখের আইরিশসহ ছবি তোলা হচ্ছে নতুন করে। এতে করে নতুন করে ছবি তোলা, আইরিশ নেয়া এবং স্বাক্ষর করার কাজ করতে হচ্ছে অপারেটরদের। প্রতিটি কাজে গড়ে পাঁচ সাত মিনিট সময় লাগছে। এর মধ্যে সার্ভার ডাউনসহ নানা ধরণের প্রযুক্তিগত বিড়ম্বনাও বড় ধরণের সংকট তৈরি করছে। প্রতিদিনই দীর্ঘ লাইনের সৃষ্টি হচ্ছে পাসপোর্ট অফিসের ভিতরে বাইরে। বিপুল সংখ্যক মানুষের জটলা সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে পুলিশ এবং আনসার সদস্যরা।

পাসপোর্ট অফিসের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা জানান, বিদেশগামী মানুষের সংখ্যা বেশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ধারণার চেয়ে বহু বেশি মানুষ প্রতিদিন পাসপোর্টের জন্য আসছেন। ই–পাসপোর্টের আবেদন করা বেশ জটিল একটি পক্রিয়া বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, অনলাইনে ফরম প্রসেসিং করতে হয়। ভিসার আবেদনের মতো এই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা অশিক্ষিত মানুষের পক্ষেতো দূরের কথা, শিক্ষিত মানুষও পারছেন না। এতে করে পরনির্ভরশীলতা বেড়ে গেছে। নানাভাবে কষ্ট করে ফরম পূরণের পর নির্ধারিত সময় নিয়ে একজন মানুষ পাসপোর্টের আবেদন জমা দিতে আসছেন। গত কয়েকদিন ধরে যেভাবে মানুষ ভিড় করছেন তা সামাল দিতে আমাদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। জরুরি ফি ছাড়া সাধারণ ফি দিয়ে কোন পাসপোর্টই জমা নেয়া হচ্ছে না। মানুষ বাড়তি ফি দিয়েই পাসপোর্টের জন্য আবেদন করছেন। কিন্তু প্রক্রিয়াগত কারণেই মানুষকে দীর্ঘ লাইন ঠেলে আবেদনপত্র জমা দিতে হচ্ছে। সময় দিতে হচ্ছে। এর কোন বিকল্প আপাতত নেই বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, লোকবল বাড়ানোর একটি প্রস্তাবনা আছে। সেটি বাস্তবায়ন হলেই কেবল আরো দ্রুত মানুষকে সেবা দেয়া সম্ভব হবে।

পাসপোর্টের জন্য আসা সীতাকুণ্ডের সাজ্জাদ বলেন, সকালে এসে লাইন ধরেছেন। তার আগে আরো অনেকেই লাইন ধরেন। ভোর থেকে মানুষ লাইনে দাঁড়ায় বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, দুপুর গড়িয়ে গেছে। এখনো আবেদন জমা দিতে পারিনি। কখন পারবো কে জানে! শুধু সাজ্জাদই নন, এই ধরণের শত শত মানুষই প্রতিদিন সকাল থেকে লাইনে ধরে পাসপোর্টের আবেদন জমা দেন।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031