এখন এক দফা’র আন্দোলনের ঘোষণা দিল বিএনপি আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে হটাতে । দলটি বলেছে, আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে সরতে হবে, এরপর নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। গতকাল বুধবার ঢাকার নয়া পল্টনের সমাবেশ থেকে এই ঘোষণা দেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

তিনি বলেন, আমরা যারা সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি, তারা সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আজকে আমরা একটা যৌথ ঘোষণা দেব যার যার জায়গা থেকে। সেই সিদ্ধান্তটি হচ্ছে, যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণআন্দোলনের এক দফার ঘোষণা। আর কোনো দফা নাই। বাংলাদেশের জনগণের ভোটাধিকার হরণকারী বর্তমান ফ্যাসিবাদী, কর্তৃত্ববাদী, অবৈধ সরকারের পদত্যাগ… এক দফা এক দাবি কী? বিদ্যমান অবৈধ সংসদের বিলুপ্তি, নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন এবং নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করে তার অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। খবর বিডিনিউজের।

এক দফার আন্দোলনের প্রাথমিক কর্মসূচি হিসেবে আগামী ১৮ জুলাই ঢাকাসহ সারাদেশে পদযাত্রা করবে বিএনপি। এই পদযাত্রার মধ্য দিয়ে তাদের (সরকার) পতন ত্বরান্বিত হবে, বলেন ফখরুল, যিনি ছিলেন এই সমাবেশের প্রধান অতিথি। নয়া পল্টনে ২টায় শুরু হওয়া বিএনপির

সমাবেশ মঞ্চের ব্যানারে রেখা ছিল– ‘গণতন্ত্রের ঘাতক, সর্বগ্রাসী দুর্নীতি ও সর্বনাশা অনাচারে লিপ্ত ফ্যাসিস্ট আওয়ামী সরকারের পদত্যাগ এবং নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের দাবি আদায়ের লক্ষ্যে যুগপৎ ধারায় বৃহত্তর গণ–আন্দোলনের ১ দফা যৌথ ঘোষণা’। ব্যানারে জিয়াউর রহমান, খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের ছবি ছিল পাশাপাশি; তাদের নামে স্লোগান ছিল ফকিরাপুল থেকে কাকরাইলের নাইটিঙ্গেল মোড় পর্যন্ত সড়কজুড়ে অবস্থান নেওয়া নেতা–কর্মীদের মুখে মুখে। দলীয় কার্যালয়ের সামনে কয়েকটি ট্রাক একত্রিত করে অস্থায়ী মঞ্চ নির্মাণ করে সেখানে দাঁড়িয়ে বক্তৃতা করেন বিএনপি নেতারা।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস আওয়ামী লীগের সমাবেশের দিকে ইঙ্গিত করে বলেন, আমরা যখন সমাবেশ করছি, তখন ওরা শান্তি মিটিং করছে। যারা দেশে খুন–গুম করে দেশে অশান্তি সৃষ্টি করে তারা এখন শান্তি মিটিং করে। আমাদের স্পষ্ট বক্তব্য, আর লগি–বৈঠার ঘটনা ঘটিয়ে, অশান্তি সৃষ্টি করে, গুম–খুন, মিথ্যা মামলা দিয়ে ক্ষমতায় থাকা যাবে না। এখনও সময় আছে ক্ষমতা ছেড়ে দিন।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, যারা আমাদের নেতা–কর্মী, সাধারণ জনগণের মন কেড়ে নিয়েছে, তাদের সাথে কোনো আপস নাই। শেখ হাসিনার অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না। যারা যাবে, তাদেরকেও জবাব দিতে হবে।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী সরকারের বিরুদ্ধে নির্বাচনের আগে প্রশাসন সাজানোর অভিযোগ তুলে বলেন, পত্রিকায় উঠেছে বিভিন্ন জেলার ডিসিদের বদলি করা হয়েছে। মন্ত্রী, সচিব ও প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের ডিসি হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে। এই পদায়নের মাধ্যমে আমরা সব নাম জেনে গেছি। আমরা স্পষ্টভাবে বলতে চাই, নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এসব ডিসি–এসপিদের কেউ ওই পদে থাকতে পারবেন না। বিচার বিভাগকেও সরকার দলীয়করণ করেছে। সরকার এখন ওদেরকে দিয়ে বিরোধী দলের মিথ্যা মামলাকে ত্বরান্বিত করতে চাচ্ছে।

সমাবেশের সভাপতির বক্তব্যে ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির আহ্বায়ক ও দলীয় চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আমানউল্লাহ আমান বলেন, জনগণ আজকে রাস্তায় নেমে এসেছে। শেখ হাসিনার পায়ের নিচে মাটি নেই। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর সুযোগ নেই।

সমাবেশমুখী বিএনপিকর্মীদের বিভিন্ন স্থানে বাধা দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ তুলে তিনি বলেন, এই বাধা দিয়ে সমাবেশে জনস্রোত ওরা ঠেকাতে পারেনি। আগামী ২/৩ মাসের মধ্যেই এই সরকারের বিদায় হবে। নেতা–কর্মীরা আর এই সরকারের বিদায় ছাড়া ঘরে ফিরে যাবে না।

মির্জা ফখরুল বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দির সাজা বাতিল করে মুক্তি, ভারপ্রাপ্ত চেয়াররম্যান তারেক রহমানসহ বিরোধী সব নেতা–কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানান।

সরকারবিরোধী আন্দোলনে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা যার কথা শোনার জন্য অপেক্ষা করেন, তিনি (তারেক রহমান) স্লোগান দিয়েছেন কী? টেক ব্যাক বাংলাদেশ। তা করতে হলে কী করতে হবে? যদি না শোনে, ফয়সালা হবে কোথায়? রাজপথে। আমাদের কথা পরিষ্কার। আমরা আবার আহ্বান জানাচ্ছি এই অবৈধ অসাংবিধানিক লুটেরা কর্তৃত্ববাদী সরকারকে, এখনও সময় আছে, পদত্যাগ করুন। অন্যথায় পালাবার পথও খুঁজে পাবেন না।

কর্মসূচি : এক দফার আন্দোলনের কয়েকটি কর্মসূচি সমাবেশে ঘোষণা করেন বিএনপি মহাসচিব ফখরুল। ঢাকা মহানগরীতে পদযাত্রা হবে দুদিন দুই রুটে। ১৮ জুলাই সকাল ১০টায় গাবতলী থেকে পদযাত্রা শুরু হয়ে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত যাবে। ১৯ জুলাই উত্তরার আবদুল্লাহপুর থেকে পুরান ঢাকার বাহাদুর শাহ পার্ক পর্যন্ত পদযাত্রা হবে।

নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশের পাশাপাশি বিকালে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে সভা–সমাবেশের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র মঞ্চ, ১২ দলীয় জোট, জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, গণতান্ত্রিক বাম ঐক্য, সমমনা গণতান্ত্রিক পেশাজীবী জোট এবং এলডিপি, গণফোরাম–পিপলস পার্টি, লেবার পার্টি, গণঅধিকার পরিষদের দুই অংশ যুগপৎ আন্দোলনের ‘এক দফা’র ঘোষণা দেয়।

কর্মসূচি ঘোষণা করে ফখরুল সরকারের উদ্দেশে বলেন, এটা হচ্ছে আমাদের প্রাথমিক কর্মসূচি। এরপরেও আঙ্গুলে ঘি যদি না উঠে, তাহলে কী করে ওঠাতে হয়, এদেশের মানুষ তা জানে। আজকে শত বাধা বিপত্তি উপেক্ষা করে যেভাবে লক্ষ লক্ষ মানুষ এখানে সমবেত হয়েছে, আগামী দিনগুলোতেও প্রয়োজনে আপনাদের প্রত্যাশিত কর্মসূচি দিয়ে এই ফ্যাসিস্ট, অবৈধ, লুটেরা সরকারকে সরিয়ে নির্দলীয় সরকারের মাধ্যমে নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করব। ইনশাল্লাহ আমাদের বিজয় হবেই হবে, সমবেত নেতা–কর্মীদের উদ্দেশে বলেন বিএনপি মহাসচিব। তিনি সরকারি কর্মকর্তা–কর্মচারীদের নিরপেক্ষ থাকার আহ্বান জানান। নইলে পরিণতি শুভ হবে না বলেও হুঁশিয়ার করেন তিনি।

ঢাকা মহানগর উত্তর বিএনপির সদস্য সচিব আমিনুল হক এবং দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সদস্য সচিব তানভীর আহমেদ রবিনের যৌথ সঞ্চালনায় সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আবদুল মঈন খান, সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লাহ বুলু, এ জেড এম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, আহমেদ আজম খান, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আবদুল সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, হাবিবউন নবী খান সোহেল, কেন্দ্রীয় নেতা ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, কামরুজ্জামান রতন, রকিবুল ইসলাম বকুল বক্তব্য রাখেন।

সমাবেশ দুপুরের পর শুরু হলেও সকাল থেকে জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা–জাসাসের শিল্পীরা মঞ্চ মাতিয়ে রাখেন দেশাত্মকবোধ গানে। বর্ষার এই দিনে মাঝে–মধ্যেই বৃষ্টি নামছিল, তার মধ্যেই ভিজতে ভিজতে বিএনপির নেতা–কর্মীরা মিছিল নিয়ে জড়ো হয় নয়া পল্টনে। এই সমাবেশ উপলক্ষে নয়া পল্টন সড়কের বিভিন্ন গলিতে ব্যাপক পুলিশ ও সাদা পোশাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাহারায় ছিল।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031