এক দফা’র ঘোষণা এল ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও সরকার পতনে বিএনপির কর্মসূচি ঘোষণার দিন । দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, বিএনপির এক দফা শেখ হাসিনার পদত্যাগ, আর আমাদের এক দফা শেখ হাসিনা ছাড়া কোনো নির্বাচন নয়। বিএনপি যে এক দফা ঘোষণা করেছে, সেটি কাদেরের দৃষ্টিতে ‘কাদা–পানিতে আটকে গেছে।’
গতকাল বুধবার বিকেলে গুলিস্তানে বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেইটে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ ও উত্তর আওয়ামী লীগের আয়োজনে হয় ‘শান্তি সমাবেশ’। সেখানেই এক দফার ঘোষণা দেন ওবায়দুল কাদের। একই সময়ে দেড় কিলোমিটার দূরে নয়া পল্টনে বিএনপির সমাবেশ থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে আন্দোলনের ঘোষণা আসে। সমাবেশ ঘিরে বিএনপিতে ছিল ‘সাজ সাজ রব’। নেতা–কর্মীরা ঢাকা ছাড়াও আসেন দূরের জেলা থেকে। নগরীর প্রবেশ পথে তল্লাশি চৌকি বসায় পুলিশ। তবে কোনো গোলযোগ ছাড়াই শেষ হয় সমাবেশ। রাজপথে সক্রিয় ছিল আওয়ামী লীগও। তাদের শান্তি সমাবেশের শুরুতে মঞ্চের সামনে বসা নিয়ে হালকা মারামারিও হয়। পরে সমাবেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপির খবর জানেন? তাদের এক দফা জানেন? বিএনপির এক দফা হল শেখ হাসিনার পদত্যাগ। আর আমাদের এক দফা শেখ হাসিনা ছাড়া কোন নির্বাচন নয়। নির্বাচন শেখ হাসিনার আমলেই হবে, শেখ হাসিনাই নেতৃত্ব দেবেন। বাংলাদেশের জনগণ যে নেত্রীর ক্ষমতাকে পছন্দ করে, উন্নয়নকে পছন্দ করে… শেখ হাসিনার সততা ও পরিশ্রম পছন্দ করে আমরা এমন নেতা হারাতে পারি না।
ওবায়দুল কাদের বলেন, বিএনপি জানে নির্বাচন হলে তারা হেরে যাবে। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তার কাছে ভেসে যাবে। তারা শেখ হাসিনাকে হিংসা করে। শেখ হাসিনার অপরাধ, তিনি উন্নয়ন করেছেন। শেখ হাসিনার অপরাধ, ২০৪১ সালে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়বেন।
বিএনপির আন্দোলনের হুঁশিয়ারিকে পাত্তা দিচ্ছেন না আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি গত ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিরোধী দলটির বিভাগীয় সমাবেশের আগে সরকার পতনের হুমকির বিষয়টি নিয়েও কথা বলেন। কাদের বলেন, বিএনপি অনেক স্বপ্ন দেখেছিল। আজকেও কাঁথা বালিশ নিয়ে অনেক লোক আনার চেষ্টা করেছিল। আগেও একটা স্বপ্ন দেখেছিল, ওই স্বপ্ন গরুর হাটে মরে গেছে। আজকে শেখ হাসিনার পদত্যাগের এক দফা স্বপ্ন নয়া পল্টনের কাদা–পানির ভেতরে আটকে গেছে।
আওয়ামী লীগের এই লক্ষ্যের পথে বাধা হয়ে না দাঁড়াতে বিরোধী দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান দলের সাধারণ সম্পাদক। বলেন, কোনো বাধা দেবেন না, আমরা কাউকে আক্রমণ করতে যাব না।
বাংলাদেশে নির্বাচন নিয়ে বিরোধের মধ্যে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের যে সফর শুরু হয়েছে, সেটি নিয়েও কথা বলেন কাদের। তিনি বলেন, যে বিদেশি বন্ধুরা এসেছেন, আপনারা চান ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল, সুষ্ঠু নির্বাচন। আমাদের লক্ষ্যও ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল, সুষ্ঠু নির্বাচন। এই ফ্রি ফেয়ার অ্যান্ড ক্রেডিবল, সুষ্ঠু নির্বাচনে যারা বাধা দিতে আসবে, আমরা তাদের প্রতিহত করব।
নির্বাচন ব্যবস্থা নিয়ে বিরোধী দলের সঙ্গে আলোচনার সম্ভাবনাও নাকচ করেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক। তিনি বলেন, যাদের হাতে রক্তের দাগ, তাদের সঙ্গে কোনো সংলাপ নয়। তাদের সঙ্গে আমরা আপোস করতে পারি না।
ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের সভাপতি আবু আহমেদ মন্নাফীর সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আব্দুর রাজ্জাক, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, কামরুল ইসলাম, মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন, জাহাঙ্গীর কবির নানক, আব্দুর রহমান। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন হাছান মাহমুদ, মাহবুবউল আলম হানিফ। সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, মির্জা আজম, এসএম কামাল হোসেন, সুজিত রায় নন্দী এবং ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের নেতারাও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন।
সংসদ উপনেতা ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, বিএনপি বলে দেশে গণতন্ত্র নেই। বিএনপির মুখে গণতন্ত্রের কথা মানায় না। আপনাদের যতই সুবিধা দেওয়া হোক আপনাদের চরিত্র বদলাবে না। এই দেশে একমাত্র শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই গণতন্ত্র চর্চা হচ্ছে, অন্য কোনো সরকারের সময়ে সেটা হয়নি। বিএনপি নেতাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনাদের দলের নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কিন্তু শেখ হাসিনার দয়াতেই জেলের বাহিরে আছেন।
কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করে বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তান বানাতে ব্যর্থ হয়েছে। কিন্তু তাদের সেই রূপ বা চিন্তাধারা এখনও বদলায়নি। মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, আজকের এই শান্তি সমাবেশ প্রমাণ করেছে, শেখ হাসিনা ছাড়া আর কারো এই দেশের ক্ষমতায় থাকার অধিকার নেই।
অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর পদত্যাগ করার প্রশ্নই আসে না। বাংলাদেশে আর তত্ত্বাবধায়ক সরকার ফিরে আসার সুযোগ নেই। সংবিধান অনুযায়ী নির্বাচন হবে। সংবিধানের বাইরে নির্বাচনের কোনো সুযোগ নেই। নির্বাচনে সরকার কোনো হস্তক্ষেপ করবে না। জাহাঙ্গীর কবির নানক বলেন, এই দেশের মানুষ শান্তিতে থাকুক বিএনপি তা চায় না। তারা চায় বাংলাদেশকে ধ্বংস করতে।
আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, বিএনপি ২০১৩ সালে এক দফা ঘোষণা করেছিল, ২০১৪ সালে করেছিল। ২০১৫ সালে করেছিল। ২০১৯ সালেও এক দফা ঘোষণা করেছিল। কয়েকদিন আগেও এক দফা ঘোষণা করেছে। তাদের এক দফা বেলুন ফোটার মতো ফুটে গেছে। তিনি জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর ইসরাইলিদের সঙ্গে যেমন বৈঠক করেছেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপার্সন তারেক রহমানও একইভাবে ইসরায়েলের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। বিএনপিকে ইসরাইলিদের চর উল্লেখ করে তিনি বলেন, আমরাও এক দফা ঘোষণা করছি, আমাদের এক দফা হচ্ছে ইসরাইলিদের চর, মানুষ হত্যাকারী, মানুষের উপর পেট্রোল বোমা নিক্ষেপকারীদের রাজনীতি থেকে বিতাড়িত করব ইনশাআল্লাহ।
বাংলাদেশে আসা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই বিএনপি সমাবেশের ডাক দিয়েছে মন্তব্য করে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব উল আলম হানিফ বলেন, আজকের এই সমাবেশ এমন একটা সময়ে হচ্ছে, যখন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে এবং উন্নয়নশীল রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেছে তখন বিএনপি–জামায়াত নতুন করে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হচ্ছে। তারা আজ সমাবেশ ও শোডাউন করছে। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ইইউর প্রতিনিধিরা এসেছেন। তাদের দেখিয়ে বিএনপি শোডাউন করতে চায়। আজ বিএনপির সঙ্গে জনগণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। বিদেশিরাই তাদের ভরসা। ষড়যন্ত্র আর বিষোদ্গার করে তারা ক্ষমতায় যেতে চায়।