রেয়াজুদ্দিন বাজার আমতল সিডিএ মার্কেটের উপরে অফিস খুলে বসেছেন এক সময়ের ব্যবসায়ী সরকার দলীয় সংগঠনের নাম ব্যবহার করে  একরামুল আলম। নিজেকে ওই সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক দাবি করেন তিনি। কিন্তু দশ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে দেখা যায়, ওই অফিসকে কেন্দ্র করে একরামুল যে কিশোর–তরুণদের সাথে রাখেন, তাদের একেকজন ছিঁচকে চোর থেকে দাগী অপরাধী।

ছিনতাইয়ের ঘটনার পর তার ওপর সন্দেহ আসতে পারে ভেবে ছিনতাইকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে পোস্ট শেয়ার করেন একরামুল আলম। পুলিশ তদন্তে নেমে জানতে পারে, ছিনতাইয়ের ঘটনার মাস্টারমাইন্ড একরামুল আলম। ছিনতাইয়ের সময় তিনি সময় ঘটনাস্থলে এক পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। সিসিটিভি ফুটেজে তার উপস্থিতি ধরা পড়েছে।

গত ১০ জুলাই বিকালে সদরঘাট থানার মাদারবাড়ী রাবেয়া ওয়ার্কশপের সামনে থেকে একরামুল আলমকে গ্রেপ্তার করে কোতোয়ালী থানা পুলিশ। পরে অভিযান চালিয়ে ঘটনায় জড়িত আরো তিনজনকে বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় ছিনতাই হওয়া ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকার মধ্যে ৭ লাখ ১০ হাজার টাকা। এর মধ্যে একরামুল আলমের দেওয়া তথ্য মতে, নগরের স্টেশন রোড হোটেল প্যারামাউন্টের একটি কক্ষ থেকে নগদ ৬ লাখ ৭০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়।

গ্রেপ্তার চারজনের মধ্যে একরামুল আলম (৩৭) পটিয়া থানার দেউরডেঙ্গা ৮ নম্বর ওয়ার্ড খান বাড়ির মৃত জাফর আহমদের ছেলে। অন্যরা হলো মীরসরাই থানার পূর্ব মায়ানি এলাকার শাহ আলমের বাড়ির শাহ আলমের ছেলে সাহেদ হোসেন মনা (২৪), সাতকানিয়া থানার গোয়াজরপাড়া এলাকার দয়াল বাপের বাড়ির মো. ইউনুছের ছেলে মো. ইয়াছিন প্রকাশ মো. এরফান সাব্বির (২৪) ও কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর থানার আল্লা এলাকার দেলোয়ার হোসেনের ছেলে রবিউল হোসেন মো. ইকবাল হোসেন ইবু (২৩)।

৯ জুলাই দুপুরে রেয়াজুদ্দিন বাজার রয়েল টাওয়ারের সামনে থেকে ব্যবসায়ী নুর মো. ইয়াছিন কবিরের দুই কর্মচারী মোরশেদ আলম ও ত্রিদীপ বড়ুয়াকে মারধর করে নগদ ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় রাতেই ওই ব্যবসায়ী বাদী হয়ে কোতোয়ালী থানায় অজ্ঞাতনামা ৭ থেকে ৮ জনকে আসামি করে একটি ডাকাতির মামলা করেন।

ঘটনাস্থলের আশেপাশে সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা যায়, ছিনতাইয়ের ঘটনার পর উঠতি বয়সী সাত–আটজন যুবক আমতল সিডিএ মার্কেটের গলি দিয়ে দৌড়ে চলে যাচ্ছে। তাদের প্রত্যেকের বয়স আনুমানিক ২০ থেকে ২২ বছর। তাদের মধ্যে সাদা শার্ট পরিহিত এক যুবকের হাতে ছিনতাই করা টাকার ব্যাগটিও দেখা যায়।

কোতোয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জাহিদুল কবীর বলেন, রেয়াজুদ্দিন বাজারে দিনে–দুপুরে মোবাইল ব্যবসায়ীর পৌনে ১০ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতরা সংঘবদ্ধ একটি ডাকাত চক্র। তারা বড় বড় ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে এবং ব্যাংকিং লেনদেনের বিষয়ে খোঁজখবর রাখত। তিনি বলেন, চক্রটি ব্যবসায়ীদের টাকা নিয়ে কে কখন কোন ব্যাংকে জমা দিতে যায়, কে উত্তোলন করতে যায় তাদের টার্গেট করে তাদের গতিবিধি নজরদারিতে রাখে। একপর্যায়ে যে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যায় বা উত্তোলন করে তাকে টার্গেট করে পূর্ব থেকে ওত পেতে থাকা স্থানে পৌঁছামাত্রই মারামারির পরিস্থিতি সৃষ্টি করত। যাতে কোনো পথচারী বাঁচানোর চেষ্টা না করে। মারামারির একপর্যায়ে সুযোগ বুঝে নগদ টাকা ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেত।

কোতোয়ালী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) রুবেল হাওলাদার আজাদীকে বলেন, ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত একসময় রেয়াজুদ্দিন বাজারের পলিথিন ব্যবসায়ী ছিনতাইয়ের মাস্টারমাইন্ড মো. একরামুলকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আসামিরা ছিনতাইয়ের টাকা একরামুলের কাছে জমা রেখেছিল। তার মধ্যে কিছু টাকা মনাকে এবং কিছু টাকা অন্য সদস্যদের দিয়ে বাকি টাকা নিজের কাছে রেখে দিয়েছিলেন একরামুল।

তিনি বলেন, একরামুল আলমের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ সহযোগিতায় ছিনতাইয়ের পরিকল্পনা করেছিল তারা। একরামুলের পরিকল্পনায় আসামিরা প্রতিষ্ঠানের টাকা কে আনা–নেওয়া করে তা বেশ কয়েকদিন ধরে অনুসরণ করে। পরে ব্যাংকে টাকা নিয়ে যাওয়ার কথা জানতে পেরে মারামারির নাটক সাজিয়ে টাকাগুলো ছিনিয়ে নিয়ে যায়। একরামুল আলম ছিনতাইয়ের ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য নিজের ফেইসবুকে পোস্ট শেয়ার দিয়েছিল।

অভিযানে অংশ নেওয়া কোতোয়ালী থানার এসআই মোমিনুল হাসান আজাদীকে বলেন, এসআর মোরশেদ আলম ও সহকারী ম্যানেজার ত্রিদীব বড়ুয়া প্রায় সময় প্রতিষ্ঠানের ব্যাংকিং লেনদেনের সব কার্যক্রম করে থাকেন। সেই হিসেবে ৯ জুলাই দুপুরের দিকে দুজনেই একটি লাল রঙের পুরাতন ব্যাগে নূর এন্টারপ্রাইজের ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা সিটি ব্যাংকে জমা দিতে যাচ্ছিলেন। ওই সময় রয়েল টাওয়ারের সামনে রাস্তার ওপর পৌঁছামাত্রই অজ্ঞাতনামা সাত/আটজন আসামি তাদের ধাক্কা দেয়। ত্রিদীব বড়ুয়া ধাক্কা দেওয়ার কারণ জানতে চাইলে আসামিরা তাদের এলোপাতাড়ি কিল, ঘুষি ও লাথি মেরে শরীরের বিভিন্ন স্থানে জখম ও ছুরিকাঘাত করে। এ সময় তাদের কাছে থাকা ব্যাগ ভর্তি ৯ লাখ ৮০ হাজার টাকা ছিনিয়ে নিয়ে যায়।

তিনি বলেন, ঘটনাস্থলের আশপাশে থাকা সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করে ছিনতাইয়ে জড়িত আসামি মনাকে সোমবার বিকালে নগরের বায়েজিদ বোস্তামী থানার রৌফাবাদ এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তার কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়, যা পৌনে ৯ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় সে পেয়েছিল। একরাম ও মনার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৬টার দিকে কর্ণফুলী থানার চরলক্ষ্যা সৈন্যেরটেক এলাকা থেকে মো. ইয়াছিন ও মো. ইকবালকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাদের জিজ্ঞাসাবাদে তারাও ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে।

তিনি বলেন, মাস্টারমাইন্ড একরামুলের বিরুদ্ধে দুটি চাঁদাবাজির মামলা রয়েছে। মনার বিরুদ্ধে চাঁদাবাজি, অস্ত্র ও জখমসহ সাতটি মামলা ও ইয়াছিনের বিরুদ্ধে একটি ছিনতাইয়ের মামলা আছে।

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031