প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয় এমন সংবাদ প্রকাশ ও প্রচার না করতে সাংবাদিকদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন । সাংবাদিকদের পেশাগত দক্ষতা বড়ানোর পরামর্শ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেছেন, আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকার কারণে গত ১৪ বছরে সংবাদমাধ্যম ‘সবচেয়ে বেশি’ স্বাধীনতা পেয়েছে।
গতকাল সোমবার প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের করবী হলে, অসুস্থ, অসচ্ছল সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিক পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক চেক তুলে দেওয়া হয়। খবর বিডিনিউজের।
সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের জন্য সরকারের নানা উদ্যোগের কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা অনুষ্ঠানে বলেন, ইতোমধ্যে আমরা একটা ওয়েজবোর্ড কার্যকর করেছি। ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় কর্মরত সাংবাদিকদের ওয়েজবোর্ডর আওতায় আনা হবে, খুব দ্রুত এটা বাস্তবায়ন করা হবে। গণমাধ্যম কর্মী চাকরি শর্তাবলী আইন সেটাও আমরা করে দেব।
সাংবাদিকদের ‘দেশের ভালোর জন্য’ সামলোচনা করার আহ্বান রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সমালোচনা যেন আমাদের দেশের কল্যাণে হয়, দেশের ক্ষতির জন্য না হয়। সমালোচনা থেকে যদি কোনো কিছু সংশোধন করা লাগে আমরা (সরকার) সেটা করে নেব। এবং আমরা সেটা করে থাকি। সেখানে আপনাদেরও কিছুটা দায়িত্ব আছে। স্বাধীনতা ভোগ করবেন, সঙ্গে দায়িত্ববোধও থাকতে হবে। দেশ ও জাতির জন্য কর্তব্যবোধ থাকতে হবে। তিনি বলেন, আপনারা এমন কোনো সংবাদ প্রকাশ করবেন না যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে এবং এর চলমান অগ্রযাত্রা বাধাগ্রস্ত করে। গণমাধ্যমকে যতটা স্বাধীনতা আওয়ামী লীগ সরকার দিয়েছে, তা আগে ‘কখনো কেউ ভোগ করেনি’ বলে মন্তব্য করেন শেখ হাসিনা।
প্রধানমন্ত্রীর ভাষায়, সংবাদমাধ্যমে ‘স্বাধীনতা আছে বলেই’ বিরোধী দলগুলো বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলের টক শোতে গিয়ে ‘যা ইচ্ছে তাই’ বলতে পারছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি সেই সমালোচনাটা গঠনমূলক হওয়া উচিত। শুধু বলার জন্য বলা না। বিরোধীদল তো বলবেই, তারা সারাদিন কথা বলে, টক শো করে, টক শোতে ইচ্ছেমতো বলে যাচ্ছে, যা খুশি তাই বলে যাচ্ছে, কথা বলার পরে বলবে কথা বলার স্বাধীনতা দেয়নি। স্বাধীনতা ছিল কখন? আইয়ুব খানের আমলে ছিল? জিয়াউর রহমানের আমলে ছিল? এরশাদের আমলে ছিল?
বিএনপির শানসামলের উদাহরণ টেনে সরকারপ্রধান বলেন, ২০০১ সালের কথা একবার চিন্তা করেন, খালেদা জিয়া যখন প্রথম সরকারে এলো, দক্ষিণাঞ্চলে কি কোনো সাংবাদিক যেতে পেরেছিল? কোনো সাংবাদিক যেতে পারেনি। সেখানে এত অত্যাচার করেছিল। সাংবাদিক নিষিদ্ধ ছিল। তাদের অপকর্ম কোনো পত্রিকা লিখতেই পারত না। যে লিখত তাকে খেসারত দিতে হত। তখন স্বাধীনতাটা ছিল কোথায়?
আওয়ামী লীগ সরকারের মেয়াদে সংবাদপত্রের ‘ব্যাপক বিকাশ’ ঘটেছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সরকার গঠন করার সময় সংবাদপত্র ছিল হাতেগোনা কয়েকটি। তখন অবাধে সংবাদ যাতে প্রকাশিত হতে পারে সে ব্যবস্থা করেছি। প্রথমে তিনটি প্রাইভেট চ্যানেলের অনুমতি দিয়েছি, তারপর এটি বাড়ানো হয়েছে। সেই সময় অনেকে বাধা দিয়েছিল যে, প্রাইভেটে টিভি চ্যানেল দেওয়া ঠিক হবে কিনা? আমি যখনই যে কাজ করেছি সেখানে লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। তখন আমি বলেছিলাম, যত বেশি টেলিভিশন দিতে পারব সেখানে সাংবাদিক থেকে শুরু করে বহু ধরনের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানও একসময় সাংবাদিকতা করেছেন জানিয়ে তার মেয়ে শেখ হাসিনা বলেছেন, সেদিক থেকে তিনি নিজেকে সাংবাদিক পরিবারের একজন বলে মনে করেন।
সরকারের যত উদ্যোগ : ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে এবং বিপদ–আপদে আকস্মিক সহযোগিতার জন্য ভুক্তভোগী সাংবাদিক পরিবারের পাশে দাঁড়ানোর ভাবনা থেকে কল্যাণ ট্রাস্ট আইন গঠন করে দেওয়ার কথাও জানান শেখ হাসিনা। সাংবাদিকদের আবাসনের বিশেষ প্রকল্পের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনেককে প্লট দেওয়া হয়েছে, আবার অনেকে বিক্রিও করে দিয়েছে। সরকারিভাবে আমরা ফ্ল্যাট তৈরি করেছি, কিছু টাকা জমা দিয়ে, কোনোটা ১৬ বছর, কোনোটা ২৬ বছর ধীরে ধীরে টাকা জমা দিয়ে ফ্ল্যাটের মালিক হওয়া যায়। সেভাবে আমরা অনেক ফ্ল্যাট তৈরি করেছি। সাংবাদিকরা চাইলে আমরা সেটা ব্যবস্থা করতে পারি। আমি সাংবাদিকদের বলব, তারা যদি ফ্ল্যাট কিনতে চান, সরকারি প্লট যেগুলো আমরা করেছি, আমরা বিক্রি করব।
চাকরির অবসরে বেসরকারি চাকরিজীবীদের অনিশ্চিত ভবিষ্যতের কথা তুলে ধরে সরকারপ্রধান রাজনীতিবিদের সঙ্গে সাংবাদিকের জীবনের সাদৃশ্যও তুলে ধরেন। তিনি বলেন, কবি, শিল্পী, সাহিত্যিক ও সাংবাদিক… তাদের চাকরির কোনো স্থায়িত্ব থাকে না, বয়স্ক বা অসুস্থ হয়ে পড়লে তাদের কোনো সুযোগই থাকে না। সরকারি চাকরিতে অবসর ভাতা পাওয়া যায়। আমাদের রাজনীতিবিদদের জন্য কিছু থাকে না, আবার সাংবাদিকদের জন্য কিছু থাকে না, এটা বাস্তব।
তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হাছান মাহমুদসহ সাংবাদিক সংগঠনের নেতারা চেক হস্তান্তর অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।