সারাদেশে ২৭৭টি সড়ক দুর্ঘটনায় ২৯৯ জন নিহত হওয়ার হিসাব দিয়েছে এবার কোরবানির ঈদের ছুটিতে যাত্রী কল্যাণ সমিতি। এসব দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন ৫৪৪ জন।

এই সময়ে সড়ক, রেল ও নৌ পথে সম্মিলিতভাবে ৩১২টি দুর্ঘটনায় ৩৪০ জন নিহত এবং ৫৬৯ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে রেলপথে ২৫টি ঘটনায় ২৫ জন নিহত ও ১০ জন আহত হন এবং নৌ–পথে ১০টি দুর্ঘটনায় ১৬ জন নিহত, ১৫ জন আহত ও ৬ জন নিখোঁজ হন।

গতকাল শনিবার ঢাকার পুরানা পল্টনে বাংলাদেশ ফটো জার্নালিস্ট অ্যাসোসিয়েশন মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলন করে সড়ক দুর্ঘটনার তথ্য তুলে ধরেন যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী। ঈদযাত্রার দিন ২২ জুন থেকে ঈদ শেষে কর্মস্থলে ফেরার ৬ জুলাই পর্যন্ত ১৫ দিনের তথ্য দিয়ে এই প্রতিবেদন তৈরি করেছে সংগঠনটির সড়ক দুর্ঘটনা মনিটরিং সেল। জাতীয় দৈনিক, আঞ্চলিক দৈনিক ও অনলাইন সংবাদপত্রে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে প্রতি বছর ঈদযাত্রায় এমন প্রতিবেদন তৈরি করে আসছে সংগঠনটি। খবর বিডিনিউজের।

প্রতিবেদন অনুযায়ী, গত ২০২২ সালের কোরবানির ঈদে যাতায়াতের সঙ্গে তুলনা করলে এবারের ঈদে সড়ক দুর্ঘটনায় ১৫ দশমিক ১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৩ দশমিক ১১ শতাংশ, আহত ৪২ দশমিক ২৭ শতাংশ কমেছে। এজন্য মানুষের কম যাতায়াতকে কারণ হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, এবারের ঈদে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ও পরিবহন ব্যয় অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়াসহ নানা কারণে মানুষের যাতায়াত ছিল ধারণার চেয়ে ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ। হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পুলিশসহ সরকারের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থার কঠোর নজরদারির কারণে এবারের ঈদযাত্রা খানিকটা স্বস্তিদায়কও হয়েছে। কিছু কিছু সড়কের অবস্থা ভালো হওয়ায় এই সকল রুটে ভোগান্তি কমার পাশাপাশি সড়ক দুর্ঘটনা ১৫.১৬ শতাংশ, প্রাণহানি ৩৩.১১ শতাংশ কমেছে। তবে পরিকল্পনার গলদে উত্তরাঞ্চলের পথে যানজটের ভোগান্তির পাশাপাশি কিছু কিছু রুটে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের নৈরাজ্য হলেও কর্তৃপক্ষ বরাবরের মতো দর্শকের ভূমিকা পালন করেছে।

প্রতিবেদন অনুযায়ী বিগত বেশ কয়েক বছর যাবৎ দুর্ঘটনার শীর্ষে মোটরসাইকেলের অবস্থান থাকলেও এবারের পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পশুবাহী যানবাহনের ব্যাপক চলাচল ও ঈদযাত্রায় নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্রাক–পিকআপ–কাভার্ডভ্যানের অবাধ চলাচলের কারণে এবারের ঈদে দুর্ঘটনার শীর্ষে রয়েছে ট্রাক–পিকআপ–কাভার্ডভ্যান। এবারের ঈদে ৮৮টি ট্রাক–পিকআপ–কাভার্ডভ্যান দুর্ঘটনায় ৯৩ জন নিহত এবং ১৯৩ জন আহত হয়েছেন, যা মোট সড়ক দুর্ঘটনার ৩১ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এর সাথে পাল্লা দিয়ে ৯১টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ৯৪ জন নিহত ও ৭৭ জন আহত হয়েছেন, যা মোট দুর্ঘটনার ৩২.৮৫ শতাংশ।

যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল বলেন, মোটরসাইকেল ও ইজিবাইক ক্যান্সারের মতো বেড়ে যাওয়ায় সড়ক দুর্ঘটনার মহামারী চলছে। দেশের হাসপাতালগুলোর চিত্র পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায়, ৩০ থেকে ৩৫ শতাংশ সড়ক দুর্ঘটনায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। অথচ জাতীয় নির্বাচন সামনে আসায় দেশের গণমাধ্যমে সড়ক দুর্ঘটনার সংবাদ তেমন গুরুত্ব পাচ্ছে না। নতুন সড়ক পরিবহন আইন হলেও সড়ক নিরাপত্তায় গবেষণা না থাকা, সড়ক দুর্ঘটনায় প্রকৃত দোষী ব্যক্তিকে চিহ্নিত করার পদ্ধতিতে ত্রুটি থাকা, তদন্ত দুর্বলতা, আইনের দীর্ঘসূত্রিতাসহ নানা কারণে সড়ক নিরাপত্তা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ফলে সরকারের স্বদিচ্ছা থাকলেও সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে কাংঙ্ক্ষিত ফলাফল মিলছে না। অন্যদিকে গণপরিবহনকে বিকশিত না করে ব্যাপকভাবে ছোট ছোট পরিবহন সড়কে নামানোর কারণে পরিবহনের সংখ্যা বৃদ্ধির সাথে পাল্লা দিয়ে দুর্ঘটনার সংখ্যা ও প্রাণহানি বাড়ছে।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031