সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বিশ্ববিদ্যালয়, প্রশাসন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে জঙ্গিবাদের সমর্থকরা অবস্থান করছে বলে দাবি করেছেন ।
শনিবার রাজধানীর এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ মিলনায়তনে বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন আযোজিত জঙ্গিবাদবিরোধী জাতীয় যুব কনভেনশনে এ দাবি করেন তিনি। এতে সভাপতিত্ব করেন যুব ইউনিয়নের সভাপতি হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘৭১ সালের পরে দেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি অনেক শক্তিশালী ছিল। এখনো তারা কিছু করছে। ৭৫ সালের পরবর্তী সরকারগুলো পাকিস্তানের আদলে বাংলাদেশকে গড়ার চেষ্টা করে আসছে এবং তারা অনেক কিছু বাস্তবায়ন করেছে। মুক্তিযুদ্ধের শক্তিদের সামনে তারা অনেক কিছু করেছে।’
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক এই উপদেষ্টা বলেন, ‘গণতন্ত্রের মুখোশ পরে তারা ঘাপটি মেরে হাজির হযেছে। এখন যারা মুক্তিযুদ্ধের দল বলে দাবি করে তাদের মাঝে আপসকামিতা ঢুকে পড়েছে। সম্পূর্ণভাবে ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য এগুলোকে ঢুকতে দেয়া হয়েছে।’
সুলতানা কামাল বলেন, ‘আমাদের কারাগারে এখনো বড় বড় তিনজন জঙ্গি নেতা রয়েছে, তাদের বিচার সম্ভব হচ্ছে না। আবার কেউ বলছে এদের ধরার সময় সরকারের অনুমোদন ছিল না। আবার কেউ বলছে অনুমোদন নিতে হবে। আসলে কী কারণে এদের বিচার হচ্ছে না তা জানা নেই।’
আমাদের প্রশাসন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠান আইন শৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন স্তরে স্তরে জঙ্গিবাদ বসে আছে। এ শক্তির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
সুলতানা কামাল বলেন, ‘দেশের সব স্থানে দেখা যায় মেয়ে শাড়ি আর টিপ পরে না। তারা বোরকা ও হিজাব পরাকে পছন্দ করে। তরুণ মেয়েদের এ দৃষ্টি বদলাতে হবে।’
সাবেক তথ্য কমিশনার সাদেকা হালিম বলেন, ‘আমরা অনেক আগে মুসলিম দার্শনিকদের লেখা পড়েছি। এখন বঙ্গবন্ধুর আত্মজীবনী পড়ছি। আমরা জঙ্গিবাদ নিয়ে পর্যালোচনা করছি। যারা তাসলিমা নাসরিনকে দেশ ছাড়তে বাধ্য করেছে তারাই আজ বিভিন্ন অপব্যাখ্যা প্রচার করছে। এসব জঙ্গি দুটি বিষয়ে আঘাত হেনেছে। একটি ধর্ম আর একটি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের ওপর। ধর্ম নিয়ে তারা নানা উগ্রবাদের জন্ম দিয়ে মানুষ হত্যা করছে।’ তিনি বলেন, ‘আজ মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস নিয়ে আমার ছাত্ররা আমাকে প্রশ্ন করে স্বাধীনতার ঘোষক কে? তখন আমি বিপদে পড়ে যাই। বঙ্গবন্ধুর নাম বললেও তারা সঠিক জানতে চায়। অথচ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে জিয়াউর রহমানকে প্রথম রাষ্ট্রপতি উল্লেখ করে প্রকাশনা প্রকাশ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। এর তদন্ত প্রতিবেদন এখনো আলোর মুখ দেখেনি।’
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘আগে আমরা যখন কোনো আন্দোলন করেছি তখন বলেছি আমি জঙ্গি হবো। কিন্তু সেই জঙ্গি আর এই জঙ্গি এক নয়। রাজনৈতিক দলে ক্যাডার ছিল, কিন্তু সেই ক্যাডার আর এখন নাই। এখন আর রাজনীতিক দলে ক্যাডার নাই। ক্যাডারা এখন জঙ্গিবাদে চলে গেছে। তারা ধর্মের নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করছে। এই জঙ্গিরা আইএস, ও উগ্র জঙ্গিবাদে পরিণত হয়ে দানবে সৃষ্টি হয়েছে।’
দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশা ব্যক্ত করে সেলিম বলেন, ‘আমাদের রাজনীতিতে রুগ্নতা শুরু হয়েছে। বড় বড় রাজনৈতিক দলগুলো যা খুশি তাই করছে। তারা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য যা খুশি তাই করছে। আজ দেশ মহাবিপদে। ইতিহাস আমাদের শাস্তির ব্যবস্থা করেছে। মুক্তিযুদ্ধের পর যেভাবে সাংস্কৃতিক বিকাশ করা দরকার তা করতে পারি না। আমরা এখনো মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতি বাস্তবায়ন করতে পারিনি। আমরা এখনো জনগণের সমস্যা সমাধনে মানুষকে আস্থাশীল করতে পারিনি।’
অনুষ্ঠানে অধ্যাপক অজয় রায় বলেন, ‘ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় জঙ্গিদের হামলার ঘটনা দেখেছেন। সেখানে একজন নারী কিভাবে জঙ্গি হামলার শিকার হয়েছেন, তার পরিবারে দেখার দায়ভার কেউ নেননি। এ হত্যাকাণ্ডের বিচার এখনো শুরু হয়নি। এ বিচার কবে হবে তা জানা নেই।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশে যে জঙ্গি উত্থান শুরু হয়েছে তা জামায়াতের মওদুদীর। এরা ইসলামের নামে জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে আসছে। এই উগ্রবাদী জঙ্গিরা প্রচণ্ডভাবে সম্প্রদায়িক। তারা মসজিদ, মন্দির ও গির্জায় হামলা চালাচ্ছে। তারা আবার সুফিবাদি ব্যক্তিদের ওপর হামলা চালিয়েছে। এসব জঙ্গি ইসলামের শত্রু, তাদের রুখতে হবে। ’
অজয় রায় বলেন, ‘সম্প্রতি জামায়াতের নারী সদস্যরা জঙ্গিদের দলে যোগ দিয়ে কাজ করছে। পুলিশ তাদের চিহ্নিত করেছে। ‘
ঐক্য ন্যাপের আহ্বায়ক পঙ্কজ ভট্টাচার্য বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বাংলাদেশ আজ আক্রান্ত। পবিত্র ধর্ম নিয়ে যারা হানাহানি তৈরি করছে। তারা বাংলাদেশকে পাকিস্তানের মডেলে বাংলা স্থান করতে চায়। আগামীকাল জন কেরি আসছেন। তারা কী চায় তা সবারই জানা। এদের ব্যাপারে সবাইকে সাবধান থাকতে হবে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম এম আকাশ বলেন, ‘জামায়তের ১০৫টি প্রতিষ্ঠান রয়েছে এগুলো বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এসব সম্পদ জনগণের কাজে ব্যবহার করতে হবে।’