হাজিরা ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ পবিত্র হজ পালনের পর সৌদি আরবের মক্কা নগরী ছাড়তে শুরু করেছেন। আজ শুক্রবার (১২ জিলহজ) তাঁদের অনেকে মক্কা নগরী ত্যাগ করার আগে কাবা শরিফে বিদায়ী তাওয়াফ করেছেন। অন্য হাজিদেরও মক্কা ছাড়ার আগে বিদায়ী তাওয়াফ করতে হবে। বিদায়ী তাওয়াফ করা ওয়াজিব।

বিদায়ী তাওয়াফে অত্যন্ত বেদনাদায়ক দৃশ্য দেখা যায়। এই তাওয়াফের সময়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেন না কোনো হাজি। তাঁরা আবেগে আপ্লুত হয়ে পড়েন। কারণ, এটাই বেশিরভাগ হাজির জীবনে মুসলিমদের সবচেয়ে পবিত্র স্থান কাবা শরিফে শেষ তাওয়াফ।

আজও এমন দৃশ্যই চোখে পড়েছে। লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ হাজিকে বিদায়ী তাওয়াফ করার সময় অঝোরে কাঁদতে দেখা গেছে। এদিন তাঁরা শেষবারের মতো প্রাণ ভরে দেখেছেন মহান আল্লাহর পবিত্র ঘর বায়তুল্লাহকে (কাবা শরিফ)। মন থেকে বারবার বলেছেন: হে মহান রব, আমাদের আবারও এই পবিত্রতম স্থান জিয়ারত করার তওফিক দিও।

মাকামে ইব্রাহিমের পেছনে কিংবা মসজিদুল হারামের যে কোনো স্থানে তাওয়াফের নিয়তে দুই রাকাত নামাজ আদায় করেছেন।

মুসলিম উম্মাহর সর্ববৃহৎ সম্মেলন পবিত্র হজ পালনের পর হাজিরা এদিনও ছুটেছেন কাবার পথে। পবিত্র কাবা ঘরে আসার আগ পর্যন্ত তাঁদের দুই চোখে ছিল অপার বিস্ময়। বায়তুল্লাহ শরিফ দেখার পর হাজিরা দফায় দফায় মহান আল্লাহর প্রতি অবিচল আস্থা-বিশ্বাস ও আনুগত্য প্রকাশ করেছেন। রহমানুর রাহিমের প্রতি হৃদয়জুড়ে ভক্তি, শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা দেখিয়েছেন। এ সময় হাজিদের দেহ মন জুড়ে ছিল মানবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার গভীর আকর্ষণ। ধর্মীয় আবেগ আর অনুভূতি। তাঁরা কাবা শরিফে প্রবেশের সময় বিসমিল্লাহ এবং দরুদ শরীফের পর আল্লাহুম্মাফ তাহলি আবওয়াবা রহমাতিকা পড়েছেন।

হাজিদের মধ্যে যাঁরা হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর রওজা জিয়ারত করেননি, বিদায়ী তাওয়াফের পর তাঁরা মদিনার উদ্দেশে রওনা দেবেন। তাঁরা মদিনার প্রাণ কেন্দ্র মসজিদে নববীতে আট দিন ৪০ ওয়াক্ত নামাজ জামায়াতের সঙ্গে আদায় করার পাশাপাশি অন্যান্য ইবাদত-বন্দেগিতে মশগুল থাকবেন। মহান আল্লাহর নৈকট্য লাভের আশায় জিকির করবেন। মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা ও রহমত চেয়ে অঝোরে কান্নাকাটি করবেন। বেশি বেশি দরুদ শরিফ পাঠ এবং পবিত্র কোরআন তেলওয়াত করবেন। হজরত মুহাম্মাদ (সা.)-এর রওজা মোবারকের সামনে গিয়ে অত্যন্ত আদবের সঙ্গে দরুদ শরীফ পাঠ এবং সালাম জানাবেন। বেহেশতের বাগান হিসেবে পরিচিত রিয়াজুল জান্নাতে নম্রতা ও বিনয়ের সঙ্গে সুবিধামতো সময়ে নামাজ আদায় করবেন।

হজরত মুহাম্মাদ (সা.) মদিনার বরকতের জন্য দোয়া করেছেন। মসজিদে নববীতে নামাজ আদায়ে ফজিলত বেশি। রাসুলুল্লাহর (সা.) রওজা শরিফ জিয়ারত করা এবং নামাজ আদায়ের উদ্দেশে মদিনায় যাওয়া সুন্নাত। তবে মসজিদে নববীতে ইহরাম কিংবা তালবিয়া পড়তে হয় না। হজরত আয়েশার (রা.) ঘরে ইন্তেকাল করেছিলেন মহানবী হজরত মুহাম্মাদ (সা.)। তাঁকে সেখানেই দাফন করা হয়েছে। তাঁর কবর মসজিদে নববীর একটি অংশ। পুরো মসজিদের কার্পেটের রং লাল।

পবিত্র হজ পালনের জন্য মহান আল্লাহর দরবারে হাজিরা দিতে আসা লাখ লাখ হাজি গত ৮ জিলহজ থেকে ১২ জিলহজ পর্যন্ত পর্যায়ক্রমে মিনা, আরাফাত ময়দান, মুজদালিফা, মিনা ও মক্কায় অবস্থান করেছেন। এ সময় তাঁদের মুখে উচ্চারিত হয়েছে তালবিয়া, ‘লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বইকা লা শারিকা লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হাম্‌দা, ওয়ান নি’মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকা লাক’ ধ্বনি। অর্থাৎ ‘আমি উপস্থিত হয়েছি হে আল্লাহ, আমি উপস্থিত হয়েছি তোমার সমীপে। তোমার কোনো শরিক নেই। পুনরায় আমি উপস্থিত হয়েছি। নিশ্চয়ই সব প্রশংসা ও সকল নিয়ামত শুধু তোমারই জন্য। সব সাম্রাজ্যও তোমার এবং তোমার কোনো শরিক নেই।’

Share Now
May 2025
M T W T F S S
 1234
567891011
12131415161718
19202122232425
262728293031