হাইওয়ে মিনি পরিবহন ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে নতুন করে আতঙ্ক তৈরি করছে । গত কয়েক সপ্তাহে এই পরিবহনের ফিটনেসবিহীন গাড়ি ও অদক্ষ চালক বেশ কয়েকটি অঘটন ঘটিয়েছে। ময়মনসিংহের ভালুকা থেকে গাজীপুরের মাওনা চৌরাস্তা পর্যন্ত প্রায় ২৫ কিলোমিটার এলাকা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এ পরিবহন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, থানাপুলিশ ম্যানেজ করে তারা এসব গাড়ি চালাচ্ছেন। তবে তা অস্বীকার করেছে পুলিশ কর্তৃপক্ষ।
গত ১৬ জুন হাইওয়ে মিনি পরিবহনের একটি গাড়িতে এক নারী পোশাক শ্রমিককে ধর্ষণচেষ্টা করা হয়। পরে তাকে গাড়ি থেকে ফেলে দেওয়া হলে দুদিন চিকিৎসাধীন থেকে তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গাড়িটি জব্দের পাশাপাশি এর চালক ও সহকারীকে আটক করেছে পুলিশ। কাগজপত্রবিহীন সেই গাড়িটির চালকের কোনো লাইসেন্স ছিল না।
এ ছাড়া গত ২৩ জুন মহাসড়কের শ্রীপুর উপজেলার রঙিলাবাজার এলাকায় পথচারী শহিদুল ইসলামকে টেনেহিঁচড়ে নিয়ে হত্যা করে একই পরিবহনের আরেকটি গাড়ি। গুরুতর আহতাবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি আছেন তার স্ত্রী।
পরিবহন ও শ্রমিকরা জানান, মহাসড়কের ২৫ কিলোমিটার অংশে হাইওয়ে মিনি পরিবহনের প্রায় ৬০টি গাড়ি চলাচল করে। বেশ কিছু গাড়ি স্থানীয় ওয়ার্কশপগুলোতে নিজস্ব পদ্ধতিতে তৈরি। অদক্ষ চালকদের নিয়োগ করা হয়েছে এসব পরিবহনে। এতে দুর্ঘটনার পাশাপাশি সামাজিক অপরাধও বাড়ছে। প্রতিটি গাড়িকে মাসে তিন হাজার টাকা মাসোহারা গুনতে হয়। স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে এ টাকার একটি ভাগ যায় হাইওয়ে পুলিশের পকেটে। তারা সরাসরি এসব অবৈধযান চলাচলে সহযোগিতা করেন। এ ছাড়া মোড়ে মোড়ে এসব পরিবহন থেকে চাঁদা তুলেন স্থানীয় ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও।
মহাসড়কটির মাওনা হাইওয়ে থানার অধীভুক্ত এলাকা হচ্ছে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ির তুলা ফার্ম থেকে নাসির গ্লাস পর্যন্ত ১৩ কিলোমিটার। এর পরের অংশ ভালুকা ভরাডোবা হাইওয়ে থানার অধীন। এ দুই থানার অধীনেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অবৈধ হাইওয়ে মিনি পরিবহন।
পরিবহনটির গাড়ির মালিক আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সব কিছু ম্যানেজ করেই চলতে হয়। জিপি (চাঁদা) দিলে পুলিশ আমাদের আর হয়রানি করে না, না হলে মামলা দিয়ে দেয়।’ মালিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম জানান, দক্ষ চালক না থাকায় মালিকরা অদক্ষ চালকদের হাতে গাড়ি তুলে দিয়েছেন। ফিটনেসবিহীন গাড়ি মহাসড়কে কেমন করে চলাচল করে এ বিষয়ে তিনি বলেন, সবাই মিলেমিশেই আমরা গাড়ি চালাই।
অবৈধ গাড়ি চলাচলে পুলিশের সহযোগিতার বিষয়ে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন মাওনা হাইওয়ে থানার ওসি কংকন কুমার। তিনি বলেন, ‘আমরা এসব অবৈধ যানে আটক করে নিয়মিত মামলা দিচ্ছি।’ একই বক্তব্য ভরাডোবা হাইওয়ে থানার ওসি মাহমুদেরও।
তবে কারও বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পাওয়া গেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন হাইওয়ে পুলিশের গাজীপুর রিজিওনের পুলিশ সুপার মোস্তাফিজুর রহমান।