কৃষি মন্ত্রণালয় দেশের বাজারে সরবরাহ স্বাভাবিক ও দাম নিয়ন্ত্রণে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন আমদানির অনুমতি দিয়েছে । এরমধ্যে হিলি স্থলবন্দরেরর আট আমদানিকারক ১৯ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি পেয়েছে। সোমবার থেকেই আমদানি করা পেঁয়াজ দেশে আসা শুরু হয়েছে।
হিলি স্থলবন্দরের আমদানি-রপ্তানিকারক গ্রুপের সভাপতি হারুন উর রশীদ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কৃষি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র তথ্য অফিসার কামরুল ইসলাম ভূইয়া জানান, পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি আবেদন অনুমোদন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রথম দিনে এখন পর্যন্ত ২১০টি আইপি আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। এতে পেঁয়াজের পরিমাণ দাঁড়াবে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন।
গত রবিবার পেঁয়াজ আমদানির ঘোষণা দেওয়া হয়। এই ঘোষণার পরদিন আজ কমতে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। রাজধানীর সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার শ্যামবাজারে মাত্র একদিনের ব্যবধানে পেঁয়াজের দাম কেজিপ্রতি কমেছে ২৫ টাকা পর্যন্ত।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, বাজারটিতে প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকায়। যা এক দিন আগে দিন ছিল ৮৫ থেকে ৯০ টাকা। তবে খুচরা বাজারে এখনো পেঁয়াজের দাম কমার প্রভাব পড়েনি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, দ্রুতই খুচরায়ও দাম কমে আসবে।
শ্যামবাজারের বিক্রমপুর হাউসের খোকন ইসলাম বলেন, এখন যাদের কাছে পেঁয়াজ মজুত আছে, আমদানির খবরে তারা পেঁয়াজ বাজারে ছেড়েছেন। একদিনে পেঁয়াজের দাম ৫৫ থেকে ৬০ টাকায় নেমেছে। ভারতের পেঁয়াজ এলে দাম আরও কমবে।
শ্যামবাজারের ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, শুরু পাইকারি বাজার নয়, আমদানির খবরে দেশের গ্রামাঞ্চলের মোকামগুলোতেও পেঁয়াজের দাম কমতে শুরু করেছে। মোকামে মণপ্রতি দাম কমেছে সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা। আগের দিন পাবনা ও ফরিদপুরে পেঁয়াজের মোকামে প্রতি মণ পেঁয়াজ বিক্রি হয়েছে দুই হাজার ৭০০ থেকে দুই হাজার ৮০০ টাকায়। গতকাল তা দুই হাজার ২০০ থেকে দুই হাজার ৩০০ টাকায় নেমে এসেছে।
ব্যবসায়ীরা আরও জানান, পেঁয়াজ আমদানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের খবরে বাজারে দাম কমে এসেছে। বিভিন্ন স্থলবন্দরে পেঁয়াজের আইপিও দেওয়া হয়েছে। দুই একদিনে মধ্যে এসব পেঁয়াজ পাইকারি বাজারে এসে পৌঁছাবে।
হিলি স্থলবন্দরের পেঁয়াজ আমদানিকারক শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘সোমবার দুপুরে আমদানির অনুমতিপত্র হাতে পেয়েছি। এরপর ভারতীয় রপ্তানিকারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। শিগগিরই আমদানি শুরু হবে।’
মূলত রমজানের ঈদের আগে থেকে বাড়তে শুরু করে পেঁয়াজের দাম। ঈদের পর এ দাম ছুটতে থাকে লাগামহীন গতিতে। ফলে মূল্যস্ফীতির চাপে মুখে ভোক্তাদের মাথায় ওঠে বোঝার ওপর শাকের আঁটি। এরই মধ্যে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাজার নিয়ন্ত্রণে প্রয়োজনে আমদানির দ্বার খুলে দেওয়া হবে।
পেঁয়াজ উৎপাদন করে দেশের কৃষক যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য কৃষকের স্বার্থরক্ষায় গত ১৫ মার্চ থেকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বন্ধ রাখে সরকার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০২১-২২ অর্থবছরে দেশে ৩৫ লাখ টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে। আর এ বছর উৎপাদন হয়েছে ৩৪ লাখ টন। পেঁয়াজের সংগ্রহ থেকে শুরু করে ভোক্তা পর্যন্ত পৌঁছাতে বিভিন্ন ধাপে অপচয় ২৫-৩০ শতাংশ বাদে গত বছর নিট উৎপাদন হয়েছে ২৪ দশমিক ৫৩ লাখ টন।
কৃষি মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রতিবছর পেঁয়াজের চাহিদা প্রায় ২৮-৩০ লাখ টন। ২০২১-২২ অর্থবছরে বিদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হয় ৬ লাখ টন।