জুলিও কুরি শান্তি পদকসাম্রাজ্যবাদ ও ফ্যাসিবাদ বিরোধিতা এবং মানবতা ও বিশ্বশান্তি প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালনকারীদের জন্য ১৯৫০ সাল থেকে চালু হয়। সোভিয়েতপন্থি বিশ্বশান্তি পরিষদের এই পদকটি অন্যদের মধ্যে পেয়েছেন কিউবার বিপ্লবী নেতা ফিদেল কাস্ত্রো, ভিয়েতনামের সংগ্রামী নেতা হো চি মিন, চিলির গণ-আন্দোলনের নেতা সালভেদর আলেন্দে, ফিলিস্তিনের জনদরদি নেতা ইয়াসির আরাফাত প্রমুখ। ১৯৭৩ সালের ২৩ মে আনুষ্ঠানিকভাবে এ তালিকায় যুক্ত হয়েছিলেন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আজ বঙ্গবন্ধুর এই শান্তি পদক প্রাপ্ তির ৫০ বছর।
১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়কত্বের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় নিয়ে ১৪০ দেশের প্রায় ২০০ সদস্যের উপস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুকে এই পদকে ভূষিত করার সিদ্ধান্ত নেয় বিশ্বশান্তি পরিষদের প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভা। এর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর পদক প্রাপক হিসেবে বঙ্গবন্ধুর নাম ঘোষণা করা হয়। পরের বছর ২৩ মে, এশীয় শান্তি সম্মেলনের এক আড়ম্বরপূর্ণ অনুষ্ঠানে সেই পদক বঙ্গবন্ধুকে পরিয়ে দেন পরিষদের তৎকালীন সেক্রেটারি জেনারেল রমেশচন্দ্র।
মুক্তিযুদ্ধের কালপর্বে ভারত-সোভিয়েত শান্তিমৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি-১৯৭১ এবং বাংলাদেশ-ভারত শান্তিমৈত্রী ও সহযোগিতা-চুক্তি-১৯৭২ সইয়ের মাধ্যমে এই উপমহাদেশে উত্তেজনা প্রশমন ও শান্তি স্থাপনের ভিত্তি প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু সরকারের জোট নিরপেক্ষ নীতি অনুসরণ এবং শান্তি ও ন্যায়ের পক্ষে অবস্থান গ্রহণের নীতির ফলে বাংলাদেশ বিশ্বসভায় একটি ন্যায়ানুগ দেশের মর্যাদা লাভ করে। সবার প্রতি বন্ধুত্বের ভিত্তিতে বৈদেশিক নীতি ঘোষণা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বলেন, ‘পৃথিবীর বৃহত্তম শক্তি যে অর্থ ব্যয় করে মানুষ মারার অস্ত্র তৈরি করছে, সেই অর্থ গরিব দেশগুলোকে সাহায্য দিলে পৃথিবীতে শান্তি প্রতিষ্ঠা হতে পারে।’
বঙ্গবঙ্গুকে জুলিও কুরি শান্তি পদকে ভূষিত করতে ১৯৭২ সালের ১০ অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে প্রেসিডেন্সিয়াল কমিটির সভায় প্রস্তাব তোলেন বিশ্বশান্তি পরিষদের মহাসচিব রমেশচন্দ্র। পরে তা সর্বসম্মতভাবে পাস হয়।
উল্লেখ্য, বিশ্বশান্তি পরিষদের পুরস্কারটি ১৯৫০ সালে চালু হলেও এর জুলিও কুরিও শান্তি পদক নামকরণ হয় ১৯৫৯ সালে। আগের বছর মারা যাওয়া ফরাসি বিজ্ঞানী জ্যঁ ফ্রেডেরিক জুলিও কুরির নামে পদকটির নাম রাখা হয়। নোবেল পুরস্কারজয়ী এই বিজ্ঞানী দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় গেরিলা বাহিনীতে যোগ দিয়ে এবং তাদের জন্য হাতিয়ার তৈরি করেও অবদান রাখেন। তার অবদানের কারণেও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরিসমাপ্তি সহজতর হয়। তিনি নিজেও মৃত্যুর আগ পর্যন্ত বিশ্বশান্তি পরিষদের সভাপতিও ছিলেন।