বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন সকল দলের অংশগ্রহণে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে হলে ক্ষমতাসীন সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন ।

তিনি বলেন, এবার নাকি শেখ হাসিনা নিরপেক্ষ নির্বাচন দেবে। এই কথা কেউ বিশ্বাস করে না। এসব বানোয়াট কথা। অবৈধ সংসদ বাতিল করতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। এছাড়া কোনো বিকল্প নেই। তিনি গতকাল বিকেলে নাসিমন ভবনস্থ দলীয় কার্যালয়ের সামনে নূর আহম্মেদ সড়কে অনুষ্ঠিত চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলা বিএনপির উদ্যোগে আয়োজিত জনসমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও ১০ দফা দাবিতে কেন্দ্র ঘোষিত এ সমাবেশে সভাপতিত্ব করে নগর বিএনপির আহ্বায়ক ডা. শাহাদাত হোসেন। প্রধান বক্তা ছিলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন। নগর বিএনপির সদস্য সচিব আবুল হাশেম বক্করের সঞ্চালনায় বিশেষ অতিথি ছিলেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা গোলাম আকবর খোন্দকার, এস এম ফজলুল হক, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবের রহমান শামীম, শ্রম সম্পাদক এ এম নাজিম উদ্দীন, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক হারুন অর রশিদ, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য ব্যারিস্টার মীর মো. হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য সাথী উদয় কুসুম বড়ুয়া, হুম্মাম কাদের চৌধুরী, দক্ষিণ জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আবু সুফিয়ান, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার দুই সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক এম এ হালিম ও এনামুল হক এনাম।

খন্দকার মোশাররফ হোসেন দাবি করেন, শুধু দেশের জনগণ নয়, সারা বিশ্ব ক্ষমতাসীন সরকারকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সম্প্রতি জাপান, আমেরিকা ও যুক্তরাজ্য সফরের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, কিছুদিন আগে জাপানে গিয়েছিলেন, যাওয়ার আগে অনেক কথা বলেছিলেন। কিন্তু জাপান থেকে কিছু আনতে পারেননি। আমেরিকায় স্টেট ডির্পাটমেন্টের দপ্তরের কারো সঙ্গে দেখা করতে পারেননি। এই প্রধানমন্ত্রীকে আমেরিকা সরকার থেকে কেউ ওয়েলকাম করতে আসেনি। আমেরিকা থেকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখাত হয়েছেন। তিনি বলেন, ব্রিটেনে গিয়ে সেখানে একটা অনুষ্ঠানে হঠাৎ করে সে দেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বসে ছবি দিয়ে সারা দেশের মানুষকে বোকা বানাতে চেয়েছেন। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে নাকি ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর সভা হয়েছে। ব্রিটিশ সরকার স্টেটমেন্ট দিয়ে বলেছে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর কোনো বৈঠক হয়নি। অতএব বুঝতে পারছেন সারা বিশ্ব শেখ হাসিনাকে প্রত্যাখান করছে।

তিনি বলেন, সরকার যত তাড়াতাড়ি বিদায় হবে ততই দেশের জন্য মঙ্গল। এইসব কথা কিন্তু জনগণ আওয়াজ তুলেছে, তাই এই আওয়াজকে আমাদের বাস্তবায়ন করতে হবে। সারা দেশের মানুষ গণতন্ত্র চায়। নিজের ভোট নিজে দিতে চায়। কিন্তু এ সরকারের অধীনে কোনোভাবেই সুষ্ঠু নির্বাচন হতে পারে না। চট্টগ্রামে কিছুদিন আগে একটি উপনির্বাচন হয়েছে। সে উপনির্বাচনে এত সরকারের নেতা, মন্ত্রীদের প্রচারের পরও ভোট দিয়েছে শতকরা মাত্র ১৪ ভাগ মানুষ। এটা লজ্জার বিষয়।

মেগা প্রকল্পের মাধ্যমে সরকার মেগা দুর্নীতি করেছে বলেও দাবি করেন তিনি। বলেন, সরকার দেশের অর্থনীতিকে সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস করে দিয়েছে। গরীব মানুষ দুবেলা খেতে পারে না, মধ্যবিত্ত মানুষ গরীব হয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের পক্ষে এই অর্থনীতি ঠিক করা সম্ভব নয়।

মীর মোহাম্মদ নাছির উদ্দীন বলেন, জনগণ জেগে ওঠেছে। জনগণের হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিন। যদি ক্ষমতা না ছেড়ে নিজের হাতে রাখেন তা হবে আওয়ামী লীগের জন্য অশনি সংকেত। এখন আওয়ামী লীগের কথা বললে জনগণ ছি ছি করে। আওয়ামী লীগ জনগণের দল নয়। জনগণ অচিরেই গনঅভ্যুত্থানের ডাক দিবে। সেদিন আওয়ামী লীগ পালানোর পথ পাবে না। পালানোর জন্য তাদেরকে রাস্তা ফ্রি করে দিতে হবে।

গোলাম আকবর খোন্দকার বলেন, আওয়ামী লীগ দেশকে ধ্বংসের শেষ দিকে নিয়ে গেছে। দেশকে ধ্বংসের হাত থেকে বাঁচাতে হলে, গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা ছাড়া বিকল্প নেই। আর বেগম জিয়ার মুক্তি ছাড়া গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ নেই।

এস এম ফজলুল হক বলেন, গণতন্ত্রকামী দেশপ্রেমিক মানুষকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে এই সরকারকে একটা ধাক্কা দিতে হবে। একটা ধাক্কা দিতে পারলে এই সরকারের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। কারণ এই সরকারের কোনো ভিত্তি নাই।

মাহবুবের রহমান শামীম বলেন, প্রধানমন্ত্রী বিবিসিকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন– তাকে আমেরিকা ক্ষমতায় দেখতে চায় না। আমরা বলতে চাই, শুধু বিদেশিরা না, দেশের মানুষও সরকারকে এক মুহূর্তের জন্য ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এ সরকার ভোট চোর। প্রধানমন্ত্রীর অধীনে কোনো নির্বাচন হবে না।

ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের পতনের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে। শেখ হাসিনা বিবিসিকে বলেছে, আমেরিকা আওয়ামী লীগকে আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এই বক্তব্যে কিন্তু মেসেজ আছে। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসী ও দুর্নীতিবাজরা রেহাই পাবে না। জনতার কাতারে তাদের বিচার হবে। এই সরকারের ক্ষমতায় থাকার আর কোনো অধিকার নাই।

আবুল হাশেম বক্কর বলেন, অনতিবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে। অবৈধ সরকারকে ক্ষমতা ছেড়ে দিয়ে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন দেন।

আবু সুফিয়ান বলেন, জনতার জোয়ারে স্বৈরাচারের মসনদ ভেসে যাবে। বিএনপির বিরুদ্ধে মামলা অনেক দিয়েছেন। এবার থামেন। কারাগারে আর কত জায়গা আছে? পুলিশের আর কত গুলি আছে?

Share Now
January 2025
M T W T F S S
 12345
6789101112
13141516171819
20212223242526
2728293031