চট্টগ্রামে ৬৮টি ফিলিং স্টেশন রয়েছে সুশাসন প্রতিষ্ঠা ও অভিযোগের প্রতিকার ব্যবস্থা’ শীর্ষক মতবিনিময় সভায় চট্টগ্রামের বিস্ফোরক পরিদর্শক মো. তোফাজ্জল হোসেন বলেন। এক থেকে তিন বছর পর পর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। নবায়নকালে সিএনজি অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যপদের প্রমাণপত্র, গ্যাস সিলিন্ডার সার্টিফিকেট পাওয়ার পর পাম্পগুলোর লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। দুর্ঘটনা প্রতিরোধকল্পে গাড়িতে সংযুক্ত সিলিন্ডার ব্যতীত অন্য কোনো সিলিন্ডার অথবা কাভার্ড ভ্যানে রক্ষিত অবৈধ গুচ্ছ সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ না করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, কাভার্ড ভ্যানে থাকা সিলিন্ডারগুলো থেকে অনিরাপদভাবে একটি ডিস্ট্রিবিউশন মেশিনে সংযোগ নিয়ে সেখান থেকে সিএনজি টেক্সি ও বিভিন্ন গাড়িতে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে চক্র। মেশিনগুলো পরিচালিত হয় বৈদ্যুতিক সংযোগ দিয়ে। ত্রুটিপূর্ণ বৈদ্যুতিক সংযোগের মাধ্যমে সুইচবোর্ড দিয়ে মেশিন পরিচালিত হয়। এটা থেকে যে কোনো সময় বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিট হয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটতে পারে। সংশ্ল্লিষ্টরা জানিয়েছেন, গ্যাস চেম্বারে যদি অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে, তাহলে ভয়াবহ বিস্ফোরণ ও প্রাণহানি ঘটতে পারে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোয় প্রভাবশালী চক্রের পরিচালনায় বিভিন্ন ইউনিয়নে সড়কের পাশেই ভ্রাম্যমাণ ব্যবস্থায় প্রতি ঘনফুট গ্যাস দ্বিগুণ দামে বিক্রি চলছে। মূলত গ্রাম এলাকার সিএনজি টেঙিগুলো তাদের মূল টার্গেট। সিএনজি চালকরাও ফিলিং স্টেশনের ভিড় এড়াতে দ্বিগুণ দামে অবৈধভাবে পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ স্টেশন থেকে গ্যাস সংগ্রহ করেন। অগ্নিদুর্ঘটনার ঝুঁকি মাথায় নিয়ে চললেও এ বিষয়ে কেউ সোচ্চার নন। এমন ঝুঁকিপূর্ণ কার্যক্রম বাংলাদেশ গ্যাস আইন ২০১০–এর ১৩(ক)/১৯ ধারার সকল নীতিমালার সঙ্গে সাংঘর্ষিক।
চট্টগ্রামে র্যাবের অভিযানে গত ২৬ মার্চ সাতকানিয়ার কেরানীহাট এলাকা থেকে জব্দ করা হয় ৪টি কাভার্ড ভ্যান। ছয়শ সিলিন্ডার বসিয়ে তারা ভ্রাম্যমাণ রিফুয়েলিং স্টেশন হিসেবে কাজ করছিল। একই অভিযানে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। র্যাব–৭ এর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি সিন্ডিকেট কাভার্ড ভ্যানে করে সিএনজিভর্তি সিলিন্ডার নিয়ে এসে খুচরা হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে বিক্রি করছে।
র্যাব–৭ এর চান্দগাঁও ক্যাম্প কমান্ডার মেজর মেহেদী হাসান জানান, কাভার্ড ভ্যান থেকে ফিলিং স্টেশনের তুলনায় প্রতি ঘনফুট গ্যাস ১৯ টাকা বেশি দামে বিক্রি করা হচ্ছিল। এসব গ্যাস সিলিন্ডার কাভার্ড ভ্যানে বিশেষভাবে সংযোজন করা হয়েছে, যা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। ৬১৪টি সিলিন্ডার ছিল ৪টি কাভার্ড ভ্যানে। প্রত্যেকটি কাভার্ড ভ্যানে ১৫৩টি করে সিলিন্ডার স্থাপন করা রয়েছে। সিলিন্ডারগুলোর বেশিরভাগই পুরনো হওয়ায় যে কোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। তারা বিস্ফোরক অধিদপ্তরের কোনো অনুমতিপত্র এবং লাইসেন্স দেখাতে পারেনি। তিনি বলেন, বিষয়টি খুবই বিপজ্জনক। যদি কোনো কারণে সিলিন্ডার বোঝাই এই কাভার্ড ভ্যান এঙিডেন্ট হয়, তাহলে গ্যাসের বিস্ফোরণে পুরো এলাকা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।
এর আগে গত শুক্রবার সীতাকুণ্ডের কুমিরায় বিশেষ অভিযানে চক্রটির দুই সদস্যকে আটক করা হয়। এ সময় মেয়াদোত্তীর্ণ ও নন স্ট্যান্ডার্ড ১২০টি সিএনজি সিলিন্ডারসহ একটি কাভার্ড ভ্যান জব্দ করা হয়। আটক করা হয় দুজনকে।
চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারী দেওয়ানহাট এলাকার একটি কার্গো ট্রাকের কর্মচারী মোহাম্মদ হামিদ জানান, তার মালিকের দুটি কার্গো ট্রাক রয়েছে। তারা এসব কার্গোতে কুমিল্লা থেকে গ্যাস ভরে আনেন। এখানে চালক ও চালানদার আছেন। একবার নিয়ে এলে তা তিন দিন বিক্রি করতে পারে। কয়েক বছর ধরে এ ব্যবসা চলে আসছে। এ পয়েন্টে তারা দুজনসহ স্থানীয় চারজন মিলে এ ব্যবসা পরিচালনা করছেন।
সিএনজি টেঙি চালক রফিক উল্লা, আলাউদ্দিন ও মেহেরাজ হোসেন বলেন, ভ্রাম্যমাণ গ্যাসের দাম কিছুটা বাড়তি হলেও হাতের নাগালে পাওয়া যায়। তাই এ গ্যাস কিনতে সবাই আগ্রহী। এতে সময়ও কম লাগে। গ্যাসের বৈধতার প্রশ্নে তারা বলেন, সেটা আমাদের দেখার বিষয় নয়, দেখবে প্রশাসন।
দোহাজারী এলাকার সিএনজি টেঙি চালক বোরহান উদ্দিন জানান, পটিয়া ও কর্ণফুলী উপজেলায় অনুমোদিত সিএনজি রিফুয়েলিং স্টেশন রয়েছে। তবে যাওয়া–আসার সময় বাঁচানোসহ নানা কারণে ভ্রাম্যমাণ সিএনজি স্টেশনেই যাচ্ছেন তারা।
অনুসন্ধানে জানা যায়, ট্রাক বা কাভার্ড ভ্যানের ওপর গ্যাসের সিলিন্ডার স্থাপনের কাজটি করা হয় নগরীর পাহাড়তলী এলাকায়। তিন টন ওজনের প্রতিটি ট্রাক মাসিক ৪২ হাজার টাকায় ভাড়া করার পর প্রতিটি সিলিন্ডার ২০ হাজার টাকা করে কিনতে হয়। চট্টগ্রামের বিভিন্ন সিএনজি ফিলিং স্টেশনের কিছু অসাধু ব্যক্তি এসব সিলিন্ডার সরবরাহ করেন। প্রতিটি ৯০ ঘনমিটারের ৫০টি সিলিন্ডারে গ্যাস ভর্তি করতে প্রায় ৪০ হাজার টাকা লাগে। গভীর রাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন সিএনজি স্টেশন থেকে ট্রাক ভর্তি সিলিন্ডারগুলোতে গ্যাস ভরা হয়।