দুলাল মিয়া এসআই তদন্তের দায়িত্বে থাকা পাহাড়তলী থানার নিখোঁজ ডায়েরির তদন্ত করতে গিয়ে দেখতে পান অভিযুক্ত রুবেল তার সোর্স হিসেবে কাজ করে। আয়নীর পরিবারের কাছে এসআই দুলাল মিয়া উল্টো সাফাই গেয়ে রুবেলকে ‘ভালো ছেলে’ হিসেবে আখ্যা দেন। শুধু তাই নয় আয়নীর চরিত্রে কাদা
লেপনেও দ্বিধা করেননি তিনি। রুবেলকে থানায় এনে জিজ্ঞাসাবাদ শেষে ছেড়ে দেন। আয়নীর পরিবারের এসব অভিযোগের সত্যতা পেয়েছে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপির) অভ্যন্তরীণ তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটির পক্ষ থেকে এসআই দুলাল মিয়ার শাস্তির সুপারিশ করা হয়েছে। গত মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সিএমপি কমিশনারের কাছে এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে তদন্ত কমিটি।
গত ২৯ মার্চ ভোরে নগরীর পাহাড়তলী থানার মুরগী ফার্ম আলম তারারপুকুর পাড় থেকে আবিদা সুলতানা আয়নীর মরদেহ উদ্ধার করে পিবিআই। এর আগে গত ২৮ মার্চ সকালে চট্টগ্রামের দ্বিতীয় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করেছেন শিশুটির মা বিবি ফাতেমা। এতে সবজি বিক্রেতা
মো. রুবেল (৩৫) নামে এক যুবককে আসামি করা হয়েছে। থানায় অভিযোগ করে প্রতিকার না পেয়ে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার কথা মামলার আরজিতে উল্লেখ করেছেন বাদী।
মামলার আরজিতে বাদীর আনা অভিযোগ শুনানির পর আমলে নেন আদালত। পাহাড়তলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে নিয়মিত মামলা নথিভুক্ত করে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনালের বিচারক শারমিন জাহান।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয় শিশু আবিদা সুলতানা আয়নী পাহাড়তলী থানার কাজীর দীঘি এলাকায় একটি স্কুলের চতুর্থ শ্রেণীর ছাত্রী। তার মা এবং বাবা দুজনই পোশাক কারখানায় চাকরি করেন। স্কুলের বান্ধবী বিড়াল ছানা কেনায় ভিকটিম শিশুও মায়ের কাছে বিড়াল ছানা কেনার বায়না ধরে। বেতন পেলে মা
বিড়াল ছানা কিনে দেবেন বলে আশ্বস্ত করেন। এ সময় ভিকটিম শিশুটি তার মাকে জানায়, এলাকার সবজি বিক্রেতা রুবেল তার পরিচিত এক লোক থেকে বিড়াল এনে দেবে বলেছে তাকে। রুবেল থেকে বিড়াল ছানা নিতে বারন করেন ভিকটিমের মা ও দাদী।
২১ মার্চ বিকেল সোয়া ৪টার দিকে আরবি পড়তে গিয়ে নিখোঁজ হয় সে। এরপর পরিবার তার খোঁজ না পেয়ে এলাকার বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে। সিসিটিভি ফুটেজে ২০ মার্চ দুপুরে স্কুলের টিফিন ছুটির সময় ভিকটিমকে সবজি বিক্রেতা রুবেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখা যায়। ২১ মার্চ আরবি পড়তে
যাওয়ার সময়ও সবজি বিক্রেতা রুবেলের সঙ্গে ভিকটিমের কথোপকথনের চিত্র ধরা পড়ে সিসিটিভি ফুটেজে। এ সময় রুবেলের হাতে থাকা একটি বাজারের থলেতে বিড়াল ছানা দেখা যায়। থলেটি ভিকটিমের হাতে তুলে দেয় রুবেল। এরপর তাদের আর দেখা যায় নি। সেই সময় থেকেই নিখোঁজ রয়েছে শিশু
আবিদা সুলতানা আয়নী। ২১ মার্চ রাতে মা বিবি ফাতেমা পাহাড়তলী থানায় জিডি করলে তার তদন্ত ভার পড়ে এস আই দুলালের ওপর। এসআই দুলাল আয়নীর পরিবারের সদস্যদের বলেন, আপনার মেয়ে প্রেম করে চলে গেছে। এছাড়া অভিযুক্ত রুবেলকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেন তিনি। আদালতে
মামলার আরজি জানানোর দিন রাতেই সন্দেহভাজন রুবেলকে আটক করে পিবিআই। পরে তার স্বীকারোক্তি অনুযায়ী ডোবা থেকে মরদেহ উদ্ধার করা হয়।
থানা পুলিশের বিরুদ্ধে অভিযোগ উত্থাপিত হওয়ার পর, এসআই দুলালকে দামপাড়া পুলিশ লাইনে ক্লোজড করা হয় এবং তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করা হয়। তদন্ত কমিটি এসআই দুলালের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রমাণ পেয়ে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে প্রতিবেদন জমা দেন।