নিউজ ডেস্ক :
শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল বলেছেন চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজ সংলগ্ন ‘চিটাগাং শিশু পার্ক’ সরাতে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন । তিনি বলেছেন, আমরা সিটি কর্পোরেশনের কাছে আহ্বান জানাব এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রী মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে আমি চিঠি দিব। প্রতিরক্ষা সচিবের কাছে চিঠি দিব। এই বিষফোঁড়াকে দয়া করে এখান থেকে সরাতে হবে।
গতকাল সকালে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজে জেলা প্রশাসন ও জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের আয়োজনে অসুস্থ রোগীদের মাঝে চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন। বন্দর নগরীর বাসিন্দাদের সুস্বাস্থ্যের জন্য হাঁটাচলা করার মতো উন্মুক্ত স্থানের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরে নওফেল বলেন, সার্কিট হাউজের পাশে বিষফোঁড়ার মতো শিশু পার্ক নামে একটা অবৈধ ব্যবসা পরিচালিত করা হচ্ছে। মাত্র ১২ হাজার টাকা মাসে সিটি কর্পোরেশন সেখানে পায়। আমরা খবর নিয়ে দেখলাম। চিঠির পর চিঠি দিচ্ছি। কিন্তু কোনো কিছুই হচ্ছে না। ১২ হাজার টাকা দিয়ে এত বড় একটা জায়গা! এর আগে ২০২১ সালের ৯ মে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি, স্থানীয় সরকার বিভাগের সিনিয়র সচিব এবং চট্টগ্রামের মেয়রকে চিঠি দিয়ে ওই শিশু পার্কটির ইজারা বাতিলে অনুরোধ জানিয়েছিলেন চট্টগ্রাম–৯ আসনের সংসদ সদস্য নওফেল। গতকালের অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, সেটা সিটি কর্পোরেশনের জায়গা না, সেটা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের জায়গা। সিটি কর্পোরেশনকে দেওয়া হয়েছিল জনসাধারণের জন্য পার্ক করতে। সেটা বানিয়েছে শিশু পার্ক, দরজা–টরজা বন্ধ করে দিয়ে সেখানে ব্যবসা করছে। জনসাধারণের পার্কটা ধ্বংস করে দিয়ে সেখানে জনগণের প্রতি মাসে যে ১০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে, এটার ক্ষতিপূরণটা কে দিবে?
শিক্ষা উপমন্ত্রী বলেন, আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সিআরবিতে হাসপাতাল না করার বিষয়ে আমাদের সাধারণ মানুষের যে আবেগ, সেটাকে বিবেচনা করে দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। নগরীতে স্বাস্থ্যকর পরিবেশ থাকা খুব দরকার।
২০২১ সালে নওফেলের চিঠির পর পার্কটির ইজারার বিষয়ে জানতে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কাছে ব্যাখ্যা চেয়েছিল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। সে সময় স্থানীয় সরকার মন্ত্রী ও সচিবের কাছে পাঠানো আধা সরকারি পত্রে (ডিও লেটার) শিশু পার্কটির জমি ‘আইন বহির্ভূতভাবে’ ইজারা দেওয়া হয় বলে অভিযোগ করেছিলেন নওফেল।
সিটি কর্পোরেশনের আগ্রহে ১৯৯২ সালে ১৩ জুলাই তিন একর জমিতে শিশুপার্ক স্থাপনে নগর সংস্থাটিকে অনাপত্তি দিয়েছিল প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। পরে ১৯৯৪ সালে ঢাকার প্রতিষ্ঠান ভায়া মিডিয়া বিজনেস সার্ভিসেস লিমিটেডকে ২৫ বছরের জন্য জমিটি প্রথমবার ইজারা দিয়েছিল চসিক। ২০১৯ সালের নভেম্বরে ওই ইজারার মেয়াদ শেষ হয়। এরপর ২০২০ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি আবার ১৫ বছরের জন্য একই প্রতিষ্ঠানের সাথে পার্কের জমিটির ইজারা চুক্তি নবায়ন করে নগর সংস্থা। তখন সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ছিলেন আ জ ম নাছির উদ্দীন।
২০২১ সালে দেওয়া ডিও লেটারে নওফেল উল্লেখ করেছিলেন, উক্ত ইজারা চুক্তি সরকারের পূর্বানুমোদনক্রম ব্যতিরেকে করা হয়, যা সিটি কর্পোরেশন আইন–২০০৯ এর সুস্পষ্ট ব্যত্যয়। সিটি কর্পোরেশন আইন ২০০৯ এর ৮০ (২)(গ) ধারায় বলা হয়েছে, কর্পোরেশন সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে দান, বিক্রয়, বন্ধক, ইজারা বা বিনিময়ের মাধ্যমে অন্য কোনো পন্থায় যে কোনো সম্পত্তি অর্জন বা হস্তান্তর করতে পারবে। তাই পার্ক ইজারায় সরকারের স্বার্থ ক্ষুণ্ন হয়েছে প্রতীয়মান হয়। উল্লিখিত আইনবহির্ভূতভাবে পার্কটি হস্তান্তরের ফলে দর্শনার্থীদের বেড়ানোর খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা মোটেই কাম্য নয়।
এরপর ওই বছরের ৭ জুন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ ইজারার বিষয়ে ব্যাখ্যা চেয়ে নগর সংস্থাকে চিঠি দিয়েছিল। পার্কটি অপসারণের দাবিতে ২০২০ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ‘নাগরিক উদ্যোগ’ নামের একটি সংগঠন মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছিল। ওই সংগঠনের প্রধান উপদেষ্টা ছিলেন নগর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি খোরশেদ আলম সুজন। সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে ছয় মাসের দায়িত্ব পালনকালে সুজনও পার্কটি বিকল্প স্থানে সরিয়ে নিতে উদ্যোগ নেন। তবে সময় শেষ হয়ে যাওয়ায় তা সম্ভব হয়নি।