অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আপিলেও মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত মীর কাসেম আলীর রিভিউ শুনানিতে সময়ক্ষেপণ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন । আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।
রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা বলেন, যুদ্ধাপরাধের দায়ে কাদের মোল্লার রিভিউ পিটিশন যেদিন দায়ের করা হয়েছিল, তার পরদিনই শুনানি হয়েছে। তারপর কামারুজ্জামানের মামলায় রিভিউ দায়েরের ৩১ দিনের মাথায় শুনানি হয়েছে। মুজাহিদের মামলা ৩৪ দিনের মাথায়, সালাউদ্দিন কাদেরের মামলায় ৩৪দিন, নিজামীরটা ৩৭দিনের মাথায় রিভিউ শুনানি হয়েছে। মীর কাসেমের মামলায় রিভিউ দায়ের হয়েছে গত ১৯জুন, এরই মধ্যে ৬৬ দিন চলে গেছে।
অ্যাডভোকেট মাহবুবে আলম বলেন, নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করা হচ্ছে, নতুন অজুহাত হচ্ছে -মীর কাসেমের ছেলেকে পাওয়া যাচ্ছে না। সে জন্য তার আইনজীবী সময় চেয়েছেন। আপিল বিভাগ তাদের এই বক্তব্য গ্রহণ করেননি। আপিল বিভাগ শুনানি শুরু করতে বলেছেন, আগামী রবিবার বাকি শুনানিতে অংশগ্রহণ করবেন বলে কথা দিয়েছেন, ওইদিন শুনানি শেষ হবে বলে আমরা আশা করি।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, এটা রিভিউ আবেদন, সার্টিফিকেট দেন সিনিয়র অ্যাডভোকেট। এই মামলার পুরো শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট শাহজাহান, উনি পাশেই ছিলেন। কাজেই এখানে মীর কাসেমের ছেলের অনুপস্থিতির জন্য মামলার শুনানি বন্ধ করা যায় না।
আদালত বলেছে, আইনে রিভিউর কোন বিধান নাই। রিভিউ যে নাই-সে বিষয়ে রাষ্ট্রপক্ষ থেকে জোরালো যুক্তি তুলে ধরা হয়েছিলো। তারা ন্যায় বিচারের স্বার্থে আপিল বিভাগ সহজাত ক্ষমতায় তা দিয়েছেন।
এটা কাদের মোল্লার রায়ে বিস্তারিত নিয়মও বলে দেওয়া হয়েছে। ৩০-৩৫ দিনের মাথায় নিষ্পত্তি করা হয়েছে। মীর কাসেম আলীর আজ ৬৬দিন পার হয়ে গেছে।আরও একমাস স্থগিতের আবেদন আদালত গ্রহণ করেন নাই। সময় আবেদনে যে সব প্রার্থণা করা হয়েছে সেখানে মীর কাসেমের ছেলে না থাকলে মামলার শুনানি হবে না। এটাতো কোন রকম যৌক্তিক কথা বলে আমি মনে করি না। প্রধান বিচারপতি সঠিকভাবেই আজকে তাদের প্রার্থণা না-মঞ্জুর করেছেন এবং বিজ্ঞ আইনজীবীকে মামলা উপস্থাপন করতে বলেছেন।
সময়ক্ষেপণের জন্য করা হচ্ছে কি-না, এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমার বিবেচনায় তাই।
তিনি বলেন, মামলার নথি ও সুপ্রিম কোর্টের রিভিউ’র নথি মক্কেলের কাছে থাকার কথা না, সেটা আইনজীবীর কাছে থাকবে, অ্যাডভোকেট অন রেকরে্ডর কাছে থাকবে।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুরাতন হাইকোর্ট ভবন থেকে সরিয়ে নিতে সুপ্রিম কোর্টের চিঠির বিষয়ে তিনি বলেন, প্রধান বিচারপতি যদি মনে করেন, যেখানে বিচার হচ্ছে, এই ভবন প্রয়োজন, রাষ্ট্র নিশ্চয়ই বিচারের স্থান ঠিক করে দিবে। এটা নিয়ে চিন্তার কোন কারণ নাই। বিচার প্রক্রিয়ায় এটার কোন প্রভাব বিস্তার করবে না।
সড়ক ভবন পাওয়ার পরও পুরাতন পরিত্যক্ত ভবন দরকার উল্লেখ করে তিনি বলেন, কত দিনে রিভিউ দায়ের হয়েছে, নিষ্পত্তি হয়েছে, এটার জন্য আমি আপিল বিভাগের রেকর্ড রুমে গিয়েছিলাম, সেখানে গিয়ে আমি স্তম্ভিত হয়ে গিয়েছি। যে মামলার নথি যেভাবে রাখা হয়েছে, সেখানে নড়াচড়া করার জায়গা নাই। আসলে আদালতের প্রচুর জায়গা দরকার। বিচারপতিদের বসার জায়গা নাই, তারা বারান্দাতে বসছেন, রেকর্ড যেভাবে রাখা হচ্ছে, খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থাতে। সত্যিকার অর্থে এই ভবন যখন করা হয়েছে, তখন পূর্ব পাকিস্তান একটা প্রদেশ ছিল। এখন বাংলাদেশ একটা স্বাধীন রাষ্ট্র, শুধু স্বাধীন রাষ্ট্র না, একটি অগ্রসরগামী দেশ। যে দেশ অন্য দেশের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলছে। বিশেষ করে, মানবাধিকার, আইনের শাসন ও বিচার বিভাগ ইত্যাদির ব্যাপারে।
তিনি বলেন, পৃথিবীর অন্য দেশে যেভাবে আন্ডারগ্রাউন্ডে রেকর্ড রুম থাকে, আমাদেরকে সেভাবে চিন্তা করতে হবে। আমার খুব বেশি টেনশন হলো, এগুলো স্থানের অভাবে যেভাবে রাখা হয়েছে বা সুপ্রিম কোর্টের নথিগুলো যেভাবে আছে, সেটা খুবই ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় আছে।
এই ভবনটা দেখতে খুবই সুন্দর। এটা হয়েছে ১৯০৫ সালে। আমি আমার গ্রামে যেখানে পড়েছি, সেই স্কুলটা হয়েছে ১৯০৫ সনে। কাজেই সময়ের দিক থেকে এই ভবনটা এমন কোন পুরনো ভবন না।
যুদ্ধাপরাধের বিচার করেছেন বিচারকরা। বিল্ডিং করে নাই। সেগুলো সংরক্ষিত হবে রায় দিয়ে। রায়গুলো চিরদিন থাকবে।