ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন রাজধানীতে নাগরিক সেবা বৃদ্ধির উপায় খুঁজতে সরকারি ২৬টি সংস্থার সঙ্গে বৈঠক করেছে । বৈঠকে যানজট, অবৈধ পার্কিং, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, ফুটপাতে অবৈধ দখল, জলাধার দখল, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, পার্ক ব্যবস্থাপনা, সড়ক নির্মাণ ও সংস্কার, যাত্রী ছাউনি দখলমুক্ত, বাসে যাত্রী উঠানামার জন্য জায়গা নির্দিষ্ট করা, ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করা, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক কার্যক্রম রোধ করার বিষয়ে কৌশল নির্ধারণ করা হয়।
বুধবার রাজধানীর গুলশান সেন্টার পয়েন্ট ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রথম আন্ত:বিভাগীয় সমন্বয় সভার এসব বিষয়ে আলোচনা হয়। বেলা ১১টা থেকে শুরু হওয়া এই সভা সভাপতি মেয়র আনিসুল হক।
বৈঠক শেষে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেন, রাজধানীবাসীর চলাচলের ভোগান্তি কমাতে যান চলাচলে শৃঙ্খলা আনার বিষয়ে কথা বলেছেন তারা। পাশাপাশি যখন রাস্ত খোঁড়াখুঁড়ির বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে এনে সমন্বিতভাবে কাজ করার কথা হয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে মানুষের জীবন আরও সহজ হবে বলে আশা করেন মেয়র।
যাত্রী উঠানামা ও পার্কিং
মেয়র মনে করেন যত্রতত্র যাত্রী উঠানামা না করলে যানজট নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে একটি বড় অগ্রগতি হবে। তিনি বলেন, ‘ঈদের পরে রাজধানীর ফামগের্ট থেকে উত্তরা পর্যন্ত নির্ধারিত জায়গা ছাড়া গাড়ি দাঁড়াতে পারবে না। যেখানে গাড়ি দাঁড়াবে সেখানেও এক মিনিটের বেশি থাকতে পারবে না। রাস্তায় কোনো গাড়ি পার্কিং করতে দেয়া হবে না। বা দিকের সড়কে গাড়ি রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করা যাবে না।
আনিসুল হক বলেন, নগরীর যানজটের অন্যতম কারণ অবৈধ পার্কিং। ভবনের নিচতলা গাড়ি পার্কিং এর জন্য উমুক্ত করতে হবে। রাস্তায় কোনো গাড়ি থাকতে দেয়া হবে না।
এসব বিষয়ে সিটি করপোরেশন, পুলিশ, রাজউক এর প্রতিনিধি ও স্থানীয় কাউন্সিলর সমন্বয় ১৫ দিনের একটি কমিটি গঠন করার সিদ্ধান্ত হয় বৈঠকে। কমিটি দুই মাসের মধ্যে এ বিষয়ে প্রস্তাব দিলে তার আলোকে কাজ করা হবে।
ফুটপাতে অবৈধ দখল
রাজুধানীর ফামগেট, গুলশান, বনানী, বারিধারা, নিকেতন, মিরপুর-১০সহ প্রধান প্রধান সড়কের ফুটপাত হকারমুক্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে সভায়।
মেয়র আনিসুল বলেন, রাজধানীর বেশিরভাগ যাত্রী ছাউনী অবৈধ দখলে। এগুলোতে দোকান করা হয়েছে। এগুলো বন্ধ করা হবে। কাউকে বরাদ্দ দেয়া হলে তা আর নবায়ন করা হবে না। জরাজীর্ণ ছাউনীগুলো মেরামত করা হবে।
বনানী রেলক্রসিং থেকে আবদুল্লাহপুর পযন্ত সড়কে ১৬টি যাত্রী ছাউনী ভেঙে আধুনিক যাত্রী ছাউনী করার সিদ্ধান্ত হয় সভায়।
বিলবোর্ড ও পুলিশ বক্স
রাজধানীতে কোনো অবৈধ বিলবোর্ড থাকবে না বলে আবারও জানান মেয়র আনিসুল। বলেন, যারা এখনও অনুমোদন নেননি, তারা আমাদের কাছে অনুমোদন নেন। নইলে একটিও বিলবোর্ডে থাকবে না।
মেয়র বলেন, রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে পুলিশবক্স করা হয়েছে। এগুলো জনসাধরণের চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি করছে। পুলিশ কোনো কোম্পানির বিজ্ঞাপন দিয়েছে। কিন্তু এগুলো থাকবে না। পুলিশের জন্য সিটি করপোরেশন পুলিশবক্স নিমার্ণ করবে।
রাস্তা কাটাকাটি
রাজধানীতে জনভোগান্তির অন্যতম কারণ রাস্তা কাটাকাটি। একই রাস্তা নানা সময় বিভিন্ন সংস্থা কেটেছে একাধিকবার। এ নিয়ে বারবার দাবি জানালেও বিভিন্ন সংস্থার মধ্যে সমন্বয় হয়নি।
এ নিয়েও কথা হয় সভায়। মেয়র জানান, এখন থেকে কোনো সংস্থা নিজেরা রাস্তা কাটতে পারবে না। কাটতে হলে সিটি করপোরেশন ও পুলিশকে ছয় মাস আগে জানাতে হবে। আর সিটি করপোরেশন বিভিন্ন সংস্থার কাজ একসঙ্গে করার চেষ্টা করবে।
জলাশয় দখলমুক্ত ও পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম
মেয়র বলেন, সরকারি বিভিন্ন স্থানে নিচু জমি এবং নালা ও খাল পরিস্কার না করা এবং কচুরিপানা জমার কারণে মশার প্রকোপ বেড়েছে। আমরা এ গুলো পরিচ্ছন্ন রাখতে চাই।
অনুষ্ঠানে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-রাজউকের চেয়া্রম্যান, পুলিশ, র্যাব, ফায়ার সার্ভিস, বিআরটিএর প্রতিনিধি, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর, স্থাপত্য অধিদপ্তর, বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি আর তিতাসের প্রতিনিধি এবং উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ওয়ার্ড কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।