প্রত্যাশিত গতি আসেনি খাদ্য নিরাপত্তার জন্য আমদানি করা চালবোঝাই জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ের মাধ্যমে পতেঙ্গা কন্টেনার টার্মিনালে (পিসিটি) কাজ শুরু হলেও । চট্টগ্রাম বন্দর কিংবা গ্রেন সাইলোর অর্ধেকের কম কাজ চলছে বন্দরের এই কন্টেনার টার্মিনালে। ভারী ক্রেন দিয়ে পণ্য খালাস ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অপেক্ষাকৃত ভারী ক্রেনগুলো নড়াচড়া করাতে বেগ পেতে হচ্ছে। এছাড়া ক্রেন অপারেটরদের ‘অবহেলা’রও অভিযোগ আছে।
সূত্রে জানা যায়, দেশের খাদ্য নিরাপত্তার জন্য সরকার ৫ লাখ ৩০ হাজার টন চাল আমদানি করছে। এর মধ্যে মিয়ানমার থেকে ২ লাখ টন আতপ, ভারত থেকে ১ লাখ টন সেদ্ধ, থাইল্যান্ড থেকে ২ লাখ টন সেদ্ধ এবং ভিয়েতনাম থেকে ৩০ হাজার টন আতপ চাল আমদানির কার্যক্রম চলছে। এসব চালের কিছু অংশ ইতোমধ্যে দেশে পৌঁছেছে। বাকি চাল পাইপলাইনে রয়েছে। সরকার মিয়ানমার ও ভারত থেকে স্বল্প ড্রাফটের অপেক্ষাকৃত ছোট জাহাজে বোঝাই করে চাল আমদানি করছে। সরকারিভাবে আমদানিকৃত এসব চাল সরকারের খাদ্য বিভাগ গ্রহণ করছে। অপেক্ষাকৃত বড় জাহাজগুলোকে গ্রেন সাইলো জেটিতে খালাস করা হয়।
কিন্তু এমসিএল ভ্যাসেলগুলো গ্রেন সাইলোতে বার্থিং দিতে হলে বড় জাহাজগুলোকে অলস বসে থাকতে হয়। আবার অপেক্ষাকৃত ছোট এসব জাহাজকে বন্দরের জেটিতে বার্থিং দিলে অন্য জাহাজের জন্য সংকট হয়। এই অবস্থায় চট্টগ্রাম বন্দরের শীর্ষ কর্মকর্তারা উদ্বোধনের অপেক্ষায় থাকা পিসিটিতে এমসিএল জাহাজগুলো বার্থিং দেয়ার সিদ্ধান্ত নেন। সিদ্ধান্তের আলোকে ১৫ নভেম্বর মিয়ানমার থেকে চাল নিয়ে আসা এমসিএল-১৯ জাহাজটিকে নতুন এই জেটিতে পরীক্ষামূলকভাবে বার্থিং দেয়া হয়। ১৬ নভেম্বর এই জাহাজ থেকে চাল খালাস শুরু করা হয়। গিয়ারলেস এই জাহাজ থেকে বন্দরের নিজস্ব ক্রেন দিয়ে পণ্য খালাস শুরু করা হয়। এমসিএল-১৯ এর পর এমসিএল-২১ জাহাজকে সেখানে বার্থিং দেয়া হয়। অপেক্ষায় রাখা হয় এমসিএল-১২ জাহাজকে। জাহাজগুলোর প্রতিটিতে ২৬৫০ টন করে আতপ চাল রয়েছে।
পিসিটিতে বার্থিং নেয়া অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির ক্রেনহীন জাহাজগুলো থেকে পণ্য খালাসের জন্য বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব তিনটি ক্রেন ওই টার্মিনালে পাঠায়। কিন্তু ক্রেনগুলো বড় ও ভারী। এগুলোর নড়াচড়ায় দীর্ঘ সময় ব্যয় হচ্ছে। ওই তিনটি ক্রেনের মধ্যে আবার দুটি খারাপ হয়ে থাকার নজিরও সৃষ্টি হয়েছে। একটি ক্রেন দিয়ে কাজ চালানোর ফলে চাল খালাস কার্যক্রমে প্রত্যাশিত গতি আসছে না। এসব ক্রেন ৫০ টনের বেশি ধারণক্ষমতার। ১০০/২০০ বস্তা চাল নামানোর জন্য এত বড় ক্রেনের প্রয়োজন হয় না। অপেক্ষাকৃত ছোট আকৃতির ৩ টন ধারণক্ষমতার ক্রেন ব্যবহার করা গেলে খালাসের পরিমাণ বেশি হতো। তাছাড়া বন্দরের ক্রেন অপারেটরদের কাজে অবহেলারও অভিযোগ আছে। এসব মিলে ক্রেন সংকট পিসিটিতে পণ্য হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছে।
গ্রেন সাইলো বা বন্দরে অপেক্ষাকৃত ছোট ক্রেনে যে পরিমাণ চাল খালাস করা যায় পিসিটিতে তার প্রায় অর্ধেক খালাস হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে। জাহাজ থেকে চাল খালাসের জন্য বেসরকারি ক্রেন ব্যবহার করা গেলে এই সংকটের সুরাহা হতো বলে জানিয়েছেন খাদ্য বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তিনি বলেন, পিসিটিতে মাত্র ২৬৫০ টন চাল নিয়ে ১৬ নভেম্বর সকাল থেকে এমসিএল-১৯ জাহাজের চাল খালাস শুরু হয়। খালাস শেষ হয় ১৯ নভেম্বর। ২৬৫০ টন চাল খালাস করতে ৪ দিন সময় লেগে যায়। ১৯ নভেম্বর এমসিএল-২১ জাহাজ বার্থিং নেয়া হয়। গতকাল শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত ওই জাহাজটিতে প্রায় ১৯৫০ টন পণ্য রয়ে গেছে। ৪ হাজার ৬শ টন চাল খালাস করতে ৭ দিনের মতো সময় লাগছে। গ্রেন সাইলো বা বন্দরের অভ্যন্তরে এই পণ্য খালাস করতে তিন দিনের বেশি সময় লাগত না।
শুধুমাত্র ক্রেনের কারণে পিসিটিতে চাল খালাস কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, হালকা ক্রেন দিয়ে চাল খালাস করলে এই কাজে গতি বাড়ত। ইতোমধ্যে এমসিএল-১২ নামের একটি জাহাজ বহির্নোঙরে অপেক্ষা করছে। আরো কয়েকটি জাহাজ পাইপলাইনে রয়েছে। পিসিটিতে চাল খালাসে গতি না এলে চালবাহী ছোট জাহাজগুলোর অপেক্ষা বাড়বে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম বন্দরের দায়িত্বশীল একজন কর্মকর্তা বলেন, পিসিটি পুরোদমে চালু হয়নি। তাছাড়া এই টার্মিনালটি একটি কন্টেনার টার্মিনাল। জরুরি প্রয়োজনে পরীক্ষামূলকভাবে চালের গিয়ারলেস জাহাজগুলো ওখানে বার্থিং দিচ্ছি। বন্দরের নিজস্ব তিনটি ক্রেন দিয়ে চাল খালাস করা হচ্ছে। তবে ক্রেনগুলো বড় হওয়ায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। বিষয়টি বন্দরের মাননীয় চেয়ারম্যানকে তারা জানিয়েছেন। নিশ্চয় ভালো কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
পিসিটিতে বার্থিং নেয়া জাহাজগুলোর স্থানীয় এজেন্ট সেভেন সী’জ লিমিটেডের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আলী আকবর বলেন, বন্দরের ক্রেনগুলো ভারী কন্টেনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্রেন। এত বড় ক্রেন দিয়ে এত ছোট জাহাজে চালের মতো হালকা পণ্য হ্যান্ডলিং করতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তাছাড়া এসব ক্রেন চালাতে বন্দরের প্রচুর জ্বালানি খরচ হচ্ছে। যে পরিমাণ সময় ও জ্বালানি ব্যয় হচ্ছে সেই পরিমাণ আউটপুট নেই।