দেশটি পূর্ণমাত্রার ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমিরি পুতিন ক্ষমতা হারালে । এ ছাড়া পুতিনের উত্তরসূরি হবেন ভয়ঙ্কর আগ্রাসী ও প্রকৃত রুশ ফ্যাসিস্ট। এই আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন প্রখ্যাত ব্রিটিশ সাংবাদিক, লেখক ও ইতিহাসবিদ ওয়েন ম্যাথিউস। ‘ওভাররিচ : দ্য ইনসাইড স্টোরি অব পুতিন’স ওয়ার এগেইন্স্ট ইউক্রেন’ নামে সম্প্রতি প্রকাশিত তার নতুন বইতে তিনি এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। বইটি এমন এক সময়ে প্রকাশিত হলো যখন ইউক্রেনের দক্ষিণাঞ্চলীয় কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ শহর খেরসন থেকে রাশিয়া সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছে এবং ইউক্রেনজুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা জোরালো করেছে। এসব হামলায় ইউক্রেনের বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ব্রিটিশ দৈনিক এক্সপ্রেস গত শনিবার কিয়ারান ম্যাকগ্রাথের একটি প্রতিবেদনে এ তথ্য প্রকাশ করে।
চলতি বছর ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনে শুরু হয় রাশিয়ার ‘বিশেষ সামরিক অভিযান।’ এরপর গত নয় মাসে যুদ্ধের গতি-প্রকৃতি ও উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে বিভিন্ন সময়ে উঠে আসে ভবিষ্যৎ রুশ প্রেসিডেন্ট সম্পর্কে নানারকম জল্পনা-কল্পনা। ভ্লাদিমিরি পুতিনের উত্তরসূরি কে হবেন, তা নিয়ে পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম যাদের কথা উল্লেখ করে তাদের অগ্রভাগে রয়েছেন দুজন- বেসরকারি সেনাবাহিনী ওয়াগনার গ্রুপের মালিক ইয়েভগেনি প্রিগোঝিন এবং রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের সচিব ৭১ বছর বয়সী নিকোলাই পাত্রুশেভ।
২০০৬ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত নিউজউইক-এর মস্কো ব্যুরো চিফ হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ওয়েন ম্যাথিউস তার বইতে সতর্ক করে বলেছেন, যেসব পশ্চিমা ব্যক্তি পুতিনের
সমাপ্তির স্বপ্ন দেখছেন, তাদের অবশ্যই সাবধান হওয়া উচিত। এক্সপ্রেস.কো.ইউকেকে তিনি বলেন, ‘পুতিন এখন পর্যন্ত ক্ষমতা ধরে রেখেছেন শক্ত মুঠোয়। কারণ প্রপাগান্ডার ওপর তার আধিপত্য রয়েছে। স্পষ্ট কোনো উত্তরসূরি নেই। যদিও রুশ সরকারের এবং ব্যবসাজীবী অভিজাতদের একটা বড় অংশ যুদ্ধের ব্যাপারে নাখোশ, শীর্ষ পর্যায়ের একটা অংশ মনে করে সবকিছুই চলছে ঠিকমতো।’
ম্যাথিউস বলেন, ‘রাশিয়ার জন্য যা বিপর্যয় ডেকে আনবে বলে মনে করা হয়েছিল, তা পুতিনের চারপাশে থাকা সিলোভিকির পক্ষে আদৌ বিপর্যয়কর ছিল না।’ সিলোভিকি হচ্ছে রুশ নিরাপত্তা ও সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিবর্গ, যারা রক্ষণশীল শক্তি হিসেবে পরিচিত। ম্যাথিউসের মতে, অবরোধের কারণে রুশ অভিজাতরা পশ্চিমা দেশগুলোয় সংরক্ষিত তাদের সম্পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছে। ফলে তাদের বিভক্ত আনুগত্য থেকেও তারা সরে গেছে।
এ পর্যায়ে ম্যাথিউস সতর্ক করে বলেন, ‘রাশিয়ায় ও ক্রেমলিনে পুতিনের বিপরীতে যারা রয়েছেন- তারা পুতিনের চেয়েও বেশি বিপজ্জনক এবং আগ্রাসী।’
‘সেদিক থেকে বিবেচনা করলে,’ ম্যাথিউস বলেন, ‘রাশিয়ায় সরকার পরিবর্তন ইউক্রেনের জন্য এবং গোটা বিশ্বের জন্য অত্যন্ত ভয়ঙ্কর হবে।’ রাশিয়ার পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের হুমকি সম্পর্কে পুতিনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা তাদের জন্য আত্মহত্যার শামিল হবে। ‘কিন্তু এর একটি উল্লেখযোগ্য দিক রয়েছে। অনেক পশ্চিমা নেতা ইউক্রেনের পূর্ণ বিজয় অর্জনে উৎসাহিত করার ব্যাপারে সতর্ক হয়ে গেছেন। কেননা এর ফলে রাশিয়ায় বৈপ্লবিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে বলে তাদের আশঙ্কা রয়েছে।’
‘সমস্যা এখানেই,’ ম্যাথিউস বলেন, ‘পুতিনের পরিবর্তে এমন পরিস্থিতিতে যে ব্যক্তিই ক্ষমতায় আসুক, সে হবে আরও ভয়ঙ্কর। পুতিনের বিপরীত শিবিরের অতিজাতীয়তাবাদী। পশ্চিমাপন্থি উদারনীতিক হবে না সে।’
ম্যাথিউস তার বইতে লিখেছেন, ‘এদিক বিবেচনা করলে পুতিন হিটলার নন, কাইজার দ্বিতীয় ভিলহেল্ম। পুতিন দাম্ভিক বোকা, বিজয়ী হওয়া যাবে না এমন একটি যুদ্ধে ঠেলে দিয়েছেন নিজের দেশকে। তিনি শান্তির পথে গেলে প্রকৃত রুশ ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটবে।’
ম্যাথিউস তার বইতে আরও উল্লেখ করেছেন, পুতিন ছিলেন রাজনীতির বিচক্ষণ ও হিসাবী ওস্তাদ। সেখান থেকে রূপান্তরিত হয়েছেন বেপরোয়া জুয়াড়িতে, যার আগ্রাসন স্বয়ং রাশিয়া ধ্বংসেরই হুমকি হয়ে উঠেছে।