বাংলাদেশ সরকার সৌদি আরবের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বাড়াতে চায় । দেশটির প্রতিশ্রুত বিনিয়োগ বাস্তবায়ন, নতুন বিনিয়োগ, দুই দেশের সার্বিক বাণিজ্য-বিনিয়োগ সম্পর্কের সম্প্রসারণের চেষ্টা চলছে। এর অংশ হিসেবে কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সহনীয় মূল্য সারপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে দেশটিতে সার কারখানা স্থাপন করতে চায় বাংলাদেশ। এসব বিষয়ে উদ্যোগ নিতে প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান ফজলুর রহমান সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের কাছে চিঠি পাঠিয়েছেন। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
চিঠিতে বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা বলেন, যে কোনো সংকটময় পরিস্থিতিতে জ্বালানিপ্রাপ্তি ও সরবরাহের পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিও জরুরি। কোভিড মহামারীর সময়ে খাদ্যদ্রব্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণতা আমাদের অনেকটাই স্বস্তি দিয়েছে। বৈশ্বিক মহামারী করোনার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সৃষ্ট অনিশ্চয়তায় খাদ্য নিরাপত্তার বিষয়টিকে আমাদের যথাযথভাবে গুরুত্ব দিতে হবে। ইতোমধ্যে প্রধানমন্ত্রী খাদ্যসামগ্রী উৎপাদনে আরও মনোযোগী হওয়ার বিষয়ে জোর তাগিদ দিচ্ছেন।
চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, কৃষি উৎপাদন অব্যাহত রাখা এবং উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য সারের সরবরাহ বজায় রাখার পাশাপাশি মূল্য সহনশীল রাখা জরুরি। দেশে স্থাপিত সার করাখানার মাধ্যমে উৎপাদিত সারের পাশাপাশি বিভিন্ন দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ ইউরিয়া সার আমদানি করতে হয়। ২০২১ সালের ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের সাইড লাইনের বৈঠকে সৌদির বিনিয়োগমন্ত্রী খালিদ এ আল-ফালিহর সঙ্গে আলোচনায় সে দেশে বাংলাদেশি অথবা সৌদি-বাংলাদেশ যৌথ মালিকানায় সার কারখানা স্থাপনের বিষয়ে আলোচনা হয়েছিল। সেখানে বাংলাদেশের উদ্যোগে সার কারখানা হলে সৌদি আরব তাতে গ্যাস সরবরাহ করতে রাজি আছে।
উৎপাদিত সার নির্ধারিত দামেই বাংলাদেশে পাঠানোর বিষয়ে চুক্তি হতে পারে। সৌদি আরবে সার কারখানা স্থাপনের বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীকে অবহিত করলে তিনি এ বিষয়ে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। এ জন্য বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশির সঙ্গে বৈঠক করার কথাও জানান এ উপদেষ্টা। এ অবস্থায় পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিবকে চিঠিতে অনুরোধ করা হয়।
বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) একটি সূত্র বলেছে, দেশের বাইরে বাংলাদেশের সার কারখানা স্থাপন করা খুব কঠিন হবে না। সৌদির গ্যাস দিয়ে সৌদি আরবেই যদি বাংলাদেশের একটি সার কারখানা করা যায়, তা হলে আমরা ওখানে সার উৎপাদন করে বাংলাদেশে নিয়ে আসতে পারব। এক্ষেত্রে সুবিধা হলো কারখানায় ব্যবহারের জন্য আমরা গ্যাস পাব ওই দেশের মূল্যে।
জানা গেছে, দেশে বছরে ২৬ লাখ টন ইউরিয়া, সাড়ে ৭ লাখ টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), সাড়ে ১৬ লাখ টন ডিএপি (ডাই-অ্যামোনিয়া ফসফেট) এবং সাড়ে ৮ লাখ টন এমওপি সারের চাহিদা রয়েছে। ইউরিয়া সার ১০ লাখ টনের মতো দেশে উৎপাদিত হয়, বাকিটা মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ থেকে আমদানি হয়। টিএসপি, ডিএপি ও এমওপি সারেরও বড় অংশ আমদানি করা হয়। এমওপির উৎস মূলত বেলারুশ, রাশিয়া ও কানাডা। সারের উৎপাদন খরচ ও আমদানি মূল্য অনেক বেশি। এর পরও সরকার ভর্তুকি দিয়ে সার বিক্রি করে।