প্রকল্প আবশ্যক ইঞ্জিন-কোচ কেনার জন্য । আর প্রকল্প মানেই বিদেশ সফর, দামি দামি গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়ানো। তারচেয়েও বড় হচ্ছে মোটা অঙ্কের কমিশনের বিনিময়ে নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা। কেনার পর এমনও দেখা গেছে, স্পেসিফিকেশন অনুযায়ী লোকোমোটিভ বা কোচ আসেনি। তবু অনুমোদন দেওয়া হয় কমিশন বাণিজ্যের লোভে। পরে দেখা যায় নানা ত্রুটি। তখন আবার যন্ত্রাংশ কেনার জন্য বিকল্প প্রকল্প। পকেট ভারী করার মচ্ছব। এ কারণে রেলের নিজস্ব কারখানার সক্ষমতা বাড়ানো হয় না। অথচ ইঞ্জিন-বগি কিনতে যে টাকা ব্যয় হচ্ছে, তার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের গুনতে হচ্ছে চড়া সুদ।
দীর্ঘদিন ধরেই মেকানিক্যাল বিভাগে কেনাকাটার অজুহাতে চলে আসা এ বাণিজ্য থেকে বেরিয়ে আসতে পারছে না রেল। রোলিংস্টক বিভাগের কিছু কর্মকর্তা একাধিক বৈঠকে এসব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরলেও কান দিচ্ছে না সংশ্লিষ্ট চক্র। এমন বাস্তবতায় রেলের উন্নয়নে কারখানা স্থাপনে জোর দিতে বলা হয়েছে। কোচের মেয়াদ পার হয়ে যাওয়ায় এক হাজার কোচ কিনবে বাংলাদেশ রেলওয়ে। শুধু কোচ সংগ্রহ নয় এ জন্য কারখানা স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে।
advertisement 3
সূত্র জানায়, রেলওয়েতে বর্তমানে ৪৭১টি ব্রডগেজ কোচ রয়েছে। তার মধ্যে ১৮০টি কোচ ৩৮ শতাংশ আয়ুস্কাল পেরিয়েছে। ২১টির বয়স ২১ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে এবং ২৭০টি কোচ ২০ বছরের নিচে। মেকানিক্যাল কোড অনুযায়ী একেকটি কোচের আয়ুস্কাল ৩৫ বছর। বর্তমানে অন্তত ১৮০টি কোচ পরিবর্তন করা জরুরি। এ ছাড়া আগামী ১০ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে আরও ৮০টি কোচের মেয়াদ পার হয়ে যাবে। বাতিল করতে হবে অন্তত ১৫০টি কোচ। সে হিসাবে বর্তমান বহরের প্রায় ২৩০টি কোচ ঘাটতি হবে।
রেলওয়ের মাস্টারপ্ল্যান অনুযায়ী, ২০৪৫ সালের মধ্যে সব ট্রেন ব্রডগেজে রূপান্তর করবে রেলওয়ে। তা হলে ১১৬৫টি মিটারগেজ ট্রেনকে ব্রডগেজে রূপান্তর করতে হবে। ভবিষ্যতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের সঙ্গে আরও যাত্রীবাহী ট্রেন চালনার সম্ভাবনা রয়েছে। মিটারগেজের ট্রেনকে ব্রডগেজের ট্রেনে রিপ্লেসমেন্ট, পুরাতন কোচ বাতিল, ভারতের সঙ্গে সংযোগ স্থাপন এসব কারণে আগামী ১৫ বছরের মধ্যে এক হাজারটি কোচ কিনতে হবে। অর্থাৎ প্রতি বছরে প্রায় ১০০টি করে দরকার।
রেলওয়েতে বর্তমানে কোচ মেরামতের জন্য দুটি কারখানা রয়েছে। এ দুটি কারখানারয় বিদ্যমান কোচই মেরামতের সক্ষমতা হারিয়েছে। এখানে কোচ তৈরির অবস্থাও নেই। অথচ নতুন কোচ তৈরি করা সময়ের দাবি। তাই প্রথম পর্যায়ে ২০০ কোচ কেনার প্রস্তাব পাঠিয়েছে রেলওয়ে। পাশাপাশি কারখানা তৈরির যৌক্তিকতা তুলে ধরা হয়েছে। নতুন কারখানায় বাকি ৮০০টি কোচ তৈরি হবে।
এ বিষয়ে রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (উন্নয়ন) হাসান মনসুর লিখিতভাবে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে কোচ তৈরি করা হলে রেলওয়েকে হস্তান্তর করা হবে। এতে বাংলাদেশ রেলওয়ে নতুন কোচ উৎপাদন করে দেশের চাহিদা পূরণ করতে পারে। পরন্তু পার্শ্ববর্তী দেশে রপ্তানি করতে পারবে।