আজ শনিবার ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলন। রাজধানীর আগারগাঁওয়ের বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রের মাঠে (পুরাতন বাণিজ্যমেলার স্থান) এ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়েছে। সেখানে বিরাজ করছে সাজ সাজ রব। এ নিয়ে নেতাকর্মীদের মধ্যে ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা লক্ষ করা গেছে। আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ বলছেন, রাজধানীর ঢাকা জেলার এ সম্মেলন শুধু সম্মেলন থাকবে না; লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হবে তাতে। পরোক্ষভাবে বিএনপির বিগত কয়েকটি সমাবেশের জবাবও এই সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দেওয়া হবে বলে দৃঢ় বক্তব্য তাদের।
গতকাল শুক্রবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেছেন, ‘তিন সমাবেশ দেখিয়ে বিএনপি নেতারা আনন্দে আত্মহারা। তারা বলছেন, তাদের সমাবেশ দেখে নাকি সরকারের কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গেছে। এখানে সরকারের কাঁপাকাঁপির কী আছে? কোনো কোনো সমাবেশে দশ লাখের টার্গেট করেও এক লাখ হয়নি, আবার কোথাও পাঁচ লাখ টার্গেট করেও এক লাখের অর্ধেকও হয়নি। এটাই বিএনপির সমাবেশের চেহারা।’ তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগরীতে
advertisement 3
ওয়ার্ড ও থানার সম্মেলনে কত হাজার লোক হয়েছে তা দেখুন, যা পত্রপত্রিকা ও মিডিয়ায় প্রচারিত হয়েছে। জনসমাগম কাকে বলে, তা শনিবার (আজ) থেকে বিএনপিকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে।’
advertisement 4
ঢাকা বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম আমাদের সময়কে বলেন, ‘সভা-সমাবেশে নয়, আমাদের দলের ওয়ার্ড, থানা ও জেলা সম্মেলনে কী পরিমাণ লোক হয়েছে তা সবাই দেখেছেন। নারায়ণগঞ্জের পর এবার ঢাকা জেলা সম্মেলনে লোকসমাগম দেখার জন্য বিএনপি নেতৃবৃন্দকে আহ্বান জানাই।’
সরেজমিনে দেখা গেছে, ব্যানার, ফেস্টুন ও পোস্টারে ছেয়ে গেছে সম্মেলনস্থল। তৈরি হয়েছে শুভেচ্ছা ও স্বাগত তোরণ। আয়োজকদের সাজসজ্জার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি কাড়তে পদপ্রত্যাশীরা যারপরনাই প্রচার চালাচ্ছেন। আট বছর পর অনুষ্ঠিতব্য এ সম্মেলনে যেমন উৎসাহ-উদ্দীপনা রয়েছে, তেমনি রয়েছে আক্ষেপও।
আওয়ামী লীগের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাংগঠনিক জেলার বর্তমানে দায়িত্বরত দুই শীর্ষনেতা ঘুরেফিরে ২৮ বছর ধরে নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কিন্তু এত বছরেও দলীয় একটি অফিস করতে পারেননি তারা। এ ছাড়া দলের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত না করা, নিয়মিত সভা-বর্ধিত সভা-সমাবেশ না করাসহ অনেক অভিযোগ রয়েছে বর্তমান কমিটির বিরুদ্ধে।
২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর সাভার অধরচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে ভোটের পরিবর্তে সমঝোতার মাধ্যমে ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য ধামরাইয়ের বেনজীর আহমদকে সভাপতি ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দোহারের মাহবুবুর রহমানকে সাধারণ সম্পাদক ঘোষণা করেছিলেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। এর ২১ মাস পর ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়। এর আগে ২০০৪ সাল থেকে তারা দুজন সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। তার আগে ১৯৯২ থেকে ২০০৩ সাল পর্যন্ত বেনজীর আহমদ জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ওই সময় মাহবুবুর রহমান ছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক। মূলত এদের দুজনের নেতৃত্বে প্রায় ২৮ বছর ধরে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু তাদের নেতৃত্বকালে দলীয় অফিস নির্মাণ হয়নি।
তবে সম্মেলনের মাধ্যমে যারা আসতে চাচ্ছেন তারা এই জেলাকে নতুনরূপে সাজানোর অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন। পদপ্রত্যাশীরা বলছেন, ঢাকা জেলার মতো সংগঠনে যত অভাব ও অভিযোগ আছে, তার উত্তরণ ঘটিয়ে একটি শক্তিশালী সাংগঠনিক এরিয়া হিসেবে তৈরি করা হবে।
আজ দুপুর ২টায় সম্মেলন উদ্বোধন করবেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য এবং সাবেক মন্ত্রী মোহাম্মদ কামরুল ইসলাম এমপি। প্রধান অতিথি হিসেবে থাকবেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। প্রধান বক্তা কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি। এ ছাড়া সম্মেলনে বক্তা হিসেবে উপস্থিত থাকবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগবিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী যারা : জানা গেছে, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের বর্তমান সভাপতি বেনজীর আহমদ পুনরায় সভাপতি হতে চান। এ ছাড়া সভাপতি পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ঢাকা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান দোহার উপজেলার বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রহমান, ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান, বিদ্যুৎ, জ¦ালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু, জেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহসভাপতি অ্যাডভোকেট আবুল কাশেম রতন, ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও বর্তমান যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. মুখলেসুজ্জামান হিরু।
সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশীদের মধ্যে আছেন জেলা আওয়ামী লীগের ১ নম্বর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ধামরাই উপজেলার বাইশাকান্দা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এবং ঢাকা জেলা যুবলীগের সাবেক সভাপতি মিজানুর রহমান মিজান, ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সহসভাপতি মাসুদ চৌধুরী ও বর্তমান সাংগঠনিক সম্পাদক পনিরুজ্জামান তরুণ এবং ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগের মহিলাবিষয়ক সম্পাদক হালিমা আক্তার লাবণ্য।