পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ স্থান। আল্লাহর ঘর মসজিদ । মসজিদে ইবাদত-বন্দেগি ও আমল-আজকার করা হয়। একে মুসলিম সমাজের মূলকেন্দ্র হিসেবে গণ্য করা হয়। দিনে পাঁচবার আল্লাহর দরবারে উপস্থিত হতে মসজিদে আসেন মুসলমানরা। মসজিদে প্রবেশ করতে হলে পবিত্রতা ও পরিচ্ছন্নাতার সঙ্গে প্রবশে করতে হয়। অপবিত্রতা নিয়ে মসজিদে প্রবেশ জায়েজ নেই।
সবচেয়ে প্রিয় জায়গা মসজিদ
মসজিদের শ্রেষ্ঠত্ব সম্পর্কে আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর কাছে সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হলো মসজিদ আর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জায়গা হলো বাজার।’ -(মুসলিম, হাদিস : ১৪১৪)
মসজিদে পবিত্রতার বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি আরো যেসব বিষয়ে গুরুত্ব দিয়েছেন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার একটি হলো প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দু’রাকাত নামাজ আদায়। যাকে তাহিয়্যাতুল মাসজিদ বা দুখুলুল মসজিদ বলা হয়।
হাদিসে তাহিয়্যাতুল মসজিদের বর্ণনা
এই নামাজের প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন নবীজি। মসজিদে প্রবেশের সময় দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করা সুন্নত (নফল)। -(আল-ফিকহু আলা মাজাহিবিল আরবাআ, পৃষ্ঠা ১০২০)
হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে সে যেন দুই রাকাত নামাজ আদায় করা পর্যন্ত না বসে।’ -(সহিহ বুখারি, হাদিস : ১১৬৭)
জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর খুতবারত অবস্থায় সুলাইক গাতফানি (রা.) এলেন। নবী (সা.) তাঁকে বলেন, তুমি কি এখানে আসার আগে দুই রাকাত নামাজ পড়েছ? সে বলল, না। তিনি বলেন, তুমি সংক্ষেপে দুই রাকাত পড়ে নাও। -(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১১১৪)
হজরত আবু বকর ইবনু আবু শায়বা (রহ.) … আবু কাতাদা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি মসজিদে গেলাম তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লোকদের সামনে বসেছিলেন। তিনি বলেন, আমিও বসে পড়লাম। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জিজ্ঞাসা করলেন, বসার আগে দু-রাকাত সালাত আদায় করা থেকে তোমাকে কিসে বিরত রাখল? আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আপনাকে বসা দেখলাম এবং লোকেরাও বসা ছিল। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, যখন তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করে তখন দু-রাকাত সালাত আদায়ের আগে বসবে না। -(মুসলিমঃ ইঃফাঃ ১৫২৭)
যে সব সময় পড়তে হয় তাহিয়্যাতুল মসজিদ
হানাফি মাজহাব মতে, মুসল্লি যেকোনো উদ্দেশে মসজিদে প্রবেশ করলে এবং সে পবিত্র অবস্থায় থাকলে তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করবে। তবে কেউ যদি এমন সময় মসজিদে প্রবেশ করে, যখন সাধারণভাবে নামাজ আদায় নিষিদ্ধ কিংবা যখন ফরজ নামাজের জামাতের ইকামত শুরু হয়ে গেছে বা ইমাম ফরজ নামাজ শুরু করে দিয়েছেন অথবা খতিবের খুতবা পাঠ শুরু হয়ে গেছে, তাহলে এসব অবস্থায় তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় থেকে বিরত থাকবে। (আল-ফিকহু আলা মাজাহিবিল আরবাআ, পৃষ্ঠা ১০২০)
তাহিয়্যাতুল মসজিদ পড়ার নিয়ম
তাহিয়্যাতুল মসজিদ দুই রাকাত এবং সাধারণ নামাজের নিয়মেই আদায় করতে হয়। শুধু নিয়ত করার সময় ‘তাহিয়্যাতুল মসজিদ’-এর নিয়ত করে নিতে হবে। তবে যদি ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের পর অন্য কোনো কাজ না করে দুই রাকাত নামাজ আদায় করে এবং সুনির্দিষ্ট কোনো নামাজের নিয়ত না করে, তাহলে তা তাহিয়্যাতুল মসজিদ বলে গণ্য হবে। (হেদায়া, নামাজ অধ্যায়)
কেন পড়তে হয় তাহিয়্যাতুল মসজিদ
তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায়ের বিষয়ে ড. সালিহ আল-মুনাজ্জিদ বলেন, ‘মসজিদে প্রবেশের সময় দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় করতে হয় মসজিদের প্রতি সম্মান ও মর্যাদা প্রদর্শনের জন্য। বস্তুত এর মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তি মসজিদে প্রবেশের পর আল্লাহর প্রতি তার আনুগত্যের ঘোষণা ও সূচনা করেন। ’ (সিলসিলাতুল আদাব, পৃষ্ঠা ১৬)