ইউক্রেন জুড়ে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে রাশিয়ার সামরিক বাহিনী । রাজধানী কিয়েভ এবং অন্যান্য অনেক শহরের বেসামরিক এলাকায় আঘাত হানা হয়েছে। এ সময় অন্তত ৮৩টি মিসাইলের হামলায় ৫ জনের প্রাণহানিসহ অনেকে আহত হয়েছেন বলে বিভিন্ন সংবাদ সংস্থা সূত্রে জানা গেছে। তবে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির দাবি এ হামলায় শিশুসহ তেরোজন নিহত হয়েছেন। অন্যদিকে প্রেসিডেন্ট দফতরের দাবি, ওই হামলায় আহত হয়েছেন এগারো শিশুসহ ঊনআশি জন।
প্রেসিডেন্ট পুতিন জানিয়েছেন, তিনিই এসব হামলার নির্দেশ দিয়েছেন। ক্রাইমিয়ায় রাশিয়ার তৈরি একটি সেতুর বিস্ফোরণের জন্য তিনি ইউক্রেনকে দায়ী করেছেন এবং বলেছেন ঐ ঘটনার প্রতিশোধ হিসেবে এসব ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হয়েছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি জানিয়েছেন, রুশ হামলার জেরে দেশের বহু নাগরিকের প্রাণহানি হয়েছে। সেই সঙ্গে দেশ জুড়ে আহত হয়েছে বহু বাসিন্দা। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জেলেনস্কি লিখেছেন, ইউক্রেন জুড়ে আকাশপথে হামলার জেরে সাইরেন থামছে না। সেই হামলায় হতাহত বহু। (নাগরিকদের) অনুরোধ, দয়া করেন আপনারা আশ্রয়স্থল ছেড়ে বেরোবেন না। জেলেনস্কির দাবি, ইউক্রেনকে নিশ্চিহ্ন করে দিতেই এই ‘অশুভ হামলা’ রাশিয়ার।
কিয়েভ থেকে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যম জানাচ্ছেন, যুদ্ধের প্রথম সপ্তাহের পর থেকে এটি সবচেয়ে ব্যাপক হামলা। সকালের ব্যস্ত সময়ে কিয়েভের শহরের প্রাণকেন্দ্রে ব্যস্ত সড়ক, পার্ক এবং পর্যটন কেন্দ্রগুলোতে রুশ ক্রুজ মিসাইলগুলি আঘাত হানে। শিশুদের একটি খেলার মাঠের পাশে একটি বিশাল গর্ত দেখা যায় এবং কাছাকাছি সেতুকে লক্ষ্য করেও হামলা চালানো হয়।
কিয়েভের পাশাপাশি খারকিভ, লাভিভ, দনিপ্রো এবং জাপোরিসাসহ অন্যান্য ইউক্রেনীয় শহরেও মিসাইল আক্রমণ হয়েছে। অনেক অঞ্চলে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রাশিয়ার এসব হামলার কড়া সমালোচনা হয়েছে। ইইউর পররাষ্ট্র বিষয়ক মুখপাত্র জোসেপ বোরেল বলেছেন, এসব ঘটনায় তিনি গভীরভাবে শোকাহত। ব্রিটেন একে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে বর্ণনা করেছে। ফরাসি ও জার্মান নেতারাও টেলিফোনে প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কির সঙ্গে কথা বলেছেন।
ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর মুখপাত্র ইউরি ইহানাত বলেছেন, রাশিয়া ৮৩টি মিসাইল ছুঁড়েছে এবং ইউক্রেনের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এর মধ্যে ৪৩টিরও বেশি ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করেছে। তিনি জানান, কালিবার, ইস্কান্দার এবং কেএইচ-১০১ মিসাইলগুলি ক্যাস্পিয়ান এবং কৃষ্ণ সাগর থেকে উৎক্ষেপণ করা হয়।
সর্বশেষ কয়েকমাসে কিয়েভে কোনো বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেনি। তবে ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর প্রথম কয়েক সপ্তাহ কিয়েভের আশেপাশে হামলা চালিয়েছিল রুশ বাহিনী। কিন্তু এবারের হামলা কিয়েভের মূল কেন্দ্রের আরো বেশি কাছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। মাত্র দুদিন আগে রাশিয়র সাথে অধিকৃত ক্রাইমিয়াকে সংযুক্ত করা একমাত্র সেতুটি বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর এই ঘটনা ঘটলো।
কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটশকো বলেছেন, শেভচেনকিভস্কি শহরের কেন্দ্রে আঘাত হেনেছে এই বিস্ফোরণ। দেশটির নামী সাংবাদিক আন্দ্রি সাপলিয়েঙ্কো বলেছেন, বিস্ফোরণে অন্তত একজন বেসামরিক নাগরিক নিহত হবার খবর পাওয়া গেছে। তবে ইউক্রেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর একজন সহকারী ফেসবুকে দেয়া এক পোস্টে লিখেছেন কিয়েভে হামলায় অন্তত ৮ জন বেসামরিক ব্যক্তি নিহত ও ২৪ জন আহত হয়েছেন।
এ তো কেবল প্রথম পর্ব : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লালাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ মিত্র ও দেশটির সাবেক প্রেসিডেন্ট দিমিত্রি মেদভেদেভ বলেছেন, ইউক্রেনে হামলা তো কেবল শুরু হলো। এটি প্রথম পর্ব। কাতারের সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার লাইভ আপডেট নিউজ থেকে এ তথ্য পাওয়া গেছে। মেদভেদেভ এখন রাশিয়ার নিরাপত্তা পরিষদের উপপ্রধান।
জার্মান কনস্যুলেট ভবনে হামলা : ইউক্রেনের রাজধানী কিইভে বহুতল একটি অফিস ভবনে আঘাত হেনেছে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র। জার্মান কনস্যুলেট ওই ভবনেই অবস্থিত। সোমবার সকালে ভবনটিতে হামলা হয় বলে জানিয়েছে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যদিও হামলার সময় কনস্যুলেটে কেউ ছিল না। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর থেকে কনস্যুলেটটি খালি পড়ে আছে।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বলেছেন, কয়েকমাস ধরে ওই ভবনে কোনও কাজ হচ্ছে না। হামলার পর সেখানে কতটুকু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা জানতে জার্মান সরকার কিইভের কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছে বলে জানান তিনি।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |