মামলা দিয়ে, গুলি চালিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ রক্ষা হবে না বলে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছে সাত দলীয় জোট গণতন্ত্র মঞ্চ বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের ওপর হামলা করে। আজ সোমবার রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পেট্রোবাংলার সামনে ‘সরকার ও শাসনব্যবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ঐক্যবদ্ধ হোন এবং রাজনৈতিক সভা সমাবেশে বাধা, হামলা-মামলা, দমন-পীড়ন, গুলি-হত্যা বন্ধের’ দাবিতে অনুষ্ঠিত সমাবেশে তারা এই হুঁশিয়ারি দেন।
জোট নেতারা বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার একের পর এক অধিকার কেড়ে নিয়ে মানুষকে মর্যাদাহীন করেছে। রাষ্ট্র পরিচালনার প্রতিটি ক্ষেত্রেই চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে তারা। এই শেখ হাসিনা সরকারের বিরুদ্ধে দুর্বার আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। এ লক্ষ্যে আগামী ২১ অক্টোবর মিরপুরে, ২৭ অক্টোবর উত্তরায় এবং পর্যায়ক্রমে ঢাকার বিভিন্ন থানা, বিভাগ ও জেলায় সমাবেশ অনুষ্ঠিত হবে।
সমাবেশে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘খেতে না পারা মানুষ প্রতিদিন সরকারকে গালি দিচ্ছে। আমরা ক্ষমতায় গেলে চাল-ডালসহ নিত্যপণ্যের দাম জনগণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই রাখবো। বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করবো। আমরা ক্ষমতায় গেলে রাষ্ট্রের খোলনলচে পাল্টে ফেলবো।’
বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, ‘সরকারের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। আমরা গণতন্ত্র মঞ্চের তরফ থেকে দেশব্যাপী মিছিল-সমাবেশের মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত করে অপরাপর বিরোধীদলগুলোর সঙ্গে যুগপৎ ধারায় এই চরম ফ্যাসিবাদী সরকারকে ক্ষমতা থেকে বিদায় করার বৃহত্তর আন্দোলন গড়ে তুলবো।’ দেশের সব দেশপ্রেমিক মানুষকে গণআন্দোলনে যুক্ত হওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, ‘ফ্যাসিবাদী সরকারকে গদি থেকে নামাতে আসুন সকলে হাত লাগাই। দড়ি ধরে মারো টান, শেখ হাসিনা সরকার হবে খান খান। সংবিধান সংস্কার, ক্ষমতার ভারসাম্য, জবাবদিহিতা, শাসনতান্ত্রিক সংস্কারসহ নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠার জন্য ইতোমধ্যে ৭ দফা উত্থাপন করেছি। গণতন্ত্র উত্তরণের পথে না আসলে ভারত বা অন্য কোনো রাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে থেকে এবং হামলা-মামলা কিংবা গুলি করে শেষ রক্ষা হবে না, গদি রক্ষা করতে পারবেন না।’
গণঅধিকার পরিষদের সদস্য সচিব নুরুল হক নূর বলেন, ‘সরকার গদি রক্ষার জন্য চরম মিথ্যাচার করছে।’ তিনি সরকার ও পুলিশবাহিনীর সদস্যদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘ছাত্র-জনতার প্রতিবাদ আন্দোলনে হামলার পরিণতি ভালো হবে না।’ আন্দোলনকারীদের ওপর পুলিশসহ যারাই হামলা করবে তাদের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানান তিনি।
জেএসডি’র কার্যকরী সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দীন মাহমুদ স্বপন বলেন, ‘আজকে সরকার প্রতিবাদী মিছিলে গুলি করে জনগণের রক্ত ঝরাচ্ছে। আমরাও জানি ফ্যাসিবাদী সরকার থেকে দেশকে মুক্ত করতে হলে রক্ত দিতে হবে। আমরা রক্ত দিতে প্রস্তুত।’
ভাসানী অনুসারী পরিষদের সদস্য সচিব হাবিবুর রহমান রিজু বলেন, ‘দেশে লুটপাটের স্বর্গরাজ্য চলছে। ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে। মেগা প্রকল্পের নামে মেগা চুরি চলছে। আসন্ন দুর্ভিক্ষ থেকে রক্ষা পেতে এই লুটেরা সরকারের পতনের আন্দোলনকে এগিয়ে নিতে হবে।’
রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সাংগঠনিক সমন্বয়ক ইমরান ইমন বলেন, ‘লুটেরা শাসকের পক্ষে সর্বোচ্চ ২০ হাজার দুর্নীতিবাজ মানুষ আছে।’ জনগণকে সংগঠিতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
গণঅধিকার পরিষদের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল মালেক ফরাজির সভাপতিত্বে ও ভাসানী অনুসারী পরিষদের ঢাকা মহানগর সমন্বয়ক মহীবুল্লাহ বাহারের পরিচালনায় এতে আরও বক্তব্য দেন গণসংহতি আন্দোলনের মনিরুল হুদা বাবন, বাংলাদেশের বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির আকবর খান, নাগরিক ঐক্যের ফিরোজ হাসান রনি, গণ অধিকার পরিষদের আতাহউল্লাহ, জেএসডির বেলায়েত হোসেন বেলাল, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের শাহাবুদ্দিন কবিনাজ লিটন প্রমুখ।