প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপারদের নিরপেক্ষভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দল নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। এমন কাজ করা যাবে না, যাতে জনগণ মনে করে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের রোড ম্যাপ ঘোষণার পর মাঠের খবর জানতে গতকাল শনিবার ঢাকার আগারগাঁওয়ে সব ডিসি ও এসপিদের বৈঠকে ডেকে এই বার্তা দেন সিইসি। জেলা পর্যায়ে প্রশাসনের এই শীর্ষ কর্মকর্তাদের সার্বিক কর্মকাণ্ড ইসি পর্যবেক্ষণে রাখবে বলেও সতর্ক করেন তিনি। খবর বিডিনিউজের।
সকাল ১০টা থেকে তিন ঘণ্টার এই বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনার, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জনরিাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব, অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক, ইসি সচিবসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। কোভিড আক্রান্ত হওয়ায় বৈঠকে ছিলেন না আইজিপি।
সংসদ নির্বাচনে ডিসিরা রিটার্নিং কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে থাকেন। আর আইন-শৃঙ্খলা রক্ষার দায়িত্বটি স্থানীয়ভাবে এসপির উপরই বর্তায়। সভা শেষে সিইসি সাংবাদিকদের বলেন, আমরা অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। সেই সঙ্গে তাদের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশ দিয়েছি- দল নিরপেক্ষ হয়ে কাজ করতে হবে। এমন কাজ করা যাবে না, যাতে জনগণ মনে করে পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ করছেন।
সভায় লিখিত বক্তব্যে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, কোনো বিশেষ রাজনীতি বা রাজনৈতিক দলের প্রতি আপনাদের সমর্থন থাকতে পারে, কিন্তু আচরণে তার প্রকাশ্য প্রতিফলন হবে না। আপনারা প্রকাশ্য আচরণ ও দায়িত্ব পালনে নিরপেক্ষ হবেন।
সরকার ও দলের মধ্যে প্রভেদ বিবেচনা রেখে দল নিরেপেক্ষ দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেন তিনি। দলীয় সরকারের অধীন মনে করে নিজেদেরকে দলীয় কর্মী বা সমর্থক ভাববেন না বা এমনভাবে আচরণ করবেন না, যাতে সরকারি বা গণকর্মচারি হিসেবে আপনাদের দল-নিরপেক্ষতা জনগণের দৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে।

কর্মকর্তাদের হুঁশিয়ার করে হাবিবুল আউয়াল বলেন, নির্বাচনের সময় ইসির অবস্থান থাকবে কঠোর। মাঠ কর্মকর্তাদের কাজও পর্যবেক্ষণ করা হবে। দায়িত্ব পালনে কোনো শৈথিল্য সহ্য করা হবে না।
সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক এবং ইসির প্রতি আস্থা নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বিভাজন কাটাতে রাজনৈতিক সমস্যার সমাধানের জোর দেন সিইসি। সংসদ নির্বাচন নিয়ে পক্ষ-বিপক্ষ বিভাজন নিয়ে সংশয় থাকলেও আমরা আশা করি সংশ্লিষ্ট সব দল, পক্ষ তাদের সদিচ্ছা, প্রজ্ঞা যে কোনো সংকট-সংশয় নিরসনে সামর্থ্য রাখে। মতৈক্য ও সমঝোতা হবে; সংশয় ও সংকট কেটে যাবে। ইভিএম প্রসঙ্গ নিয়ে সভায় আলোচনা এলেও কর্মকর্তারা এ নিয়ে ব্যাপক প্রচার চালানোর পরামর্শ দিয়েছেন বলে জানান সিইসি।
সভায় তিনি বলেন, আমরা কঠোর ভাষায় বলছি- ভয়ভীতি, পক্ষপাতিত্ব, চাপ বা অন্য যে কোনো কারণে নির্বাচনে অবৈধ হস্তক্ষেপ প্রতিহত করতে না করণে নির্বাচন হবে না; প্রহসন হবে। পরবর্তীতে গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। আপনাদের জবাবদিহি করতে হবে।
এক কমিশনারের বক্তব্যে হৈ চৈ
মতবিনিময় সভায় নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান উপ-নির্বাচন ও জেলা পরিষদের ভোটকে সামনে রেখে আচরণবিধি প্রতিপালনে ইসির নির্দেশনা উপেক্ষিত হওয়ায় ডিসি-এসপি দের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন। বৈঠকে উপস্থিত একাধিক কর্মকর্তা জানান, সভায় কর্মকর্তারা নির্বাচনে জ্বালানি খরচ, আচরণবিধি প্রতিপালনে সম্পৃক্তদের ভাতা বাড়ানোর দাবি তোলেন। বিষয়টি তুলে ধরে এ নির্বাচন কমিশনার কর্মকর্তাদের উদ্দেশে বলেন, আচরণবিধি ভঙ্গ হচ্ছে ব্যাপক অভিযোগ এলেও কোনো ব্যবস্থা তো দেখা যাচ্ছে না; এ নিয়ে কথা না বলে উল্টো খরচ-ভাতা বাড়ানোর কথা আসছে। তখন কর্মকর্তাদের অনেকে হৈ চৈ করে প্রতিবাদ জানান। তখন নির্বাচন কমিশনার আনিছুর বলেন, তার বক্তব্য কর্মকর্তারা শুনতে চান কি না? তাতে কয়েকজন নেতিবাচক সাড়া দিলে বক্তব্য না বাড়িয়ে ডায়াস ছেড়ে মঞ্চের নির্ধারিত আসনে চলে যান তিনি।

Share Now
December 2024
M T W T F S S
 1
2345678
9101112131415
16171819202122
23242526272829
3031