চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নগরের সড়ক ও ফুটপাত অবৈধ দখলদারমুক্ত করতে গত দুই মাসে ছোট-বড় ৪০টির বেশি উচ্ছেদ অভিযান চালিয়েছে । এ সব অভিযানে দুই হাজারের বেশি হকার ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। তবে উচ্ছেদ হওয়া জায়গাগুলোর মধ্যে পাঁচ-ছয়টি স্পট ছাড়া বাকিগুলো ফিরে গেছে পূর্বের অবস্থায়। অর্থাৎ উচ্ছেদকৃত বেশিরভাগ জায়গা আবারো দখলে নিয়েছে হকার ও ব্যবসায়ীরা। এ অবস্থায় উচ্ছেদকৃত জায়গা পুনর্দখল রোধে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের (সিএমপি) সহযোগিতা চেয়েছে চসিক। এ বিষয়ে গতকাল সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণ পদ রায়কে চিঠি দিয়েছেন চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ শহীদুল আলম। এতে উচ্ছেদের পর পুনর্দখল ঠেকাতে স্থানীয় থানার মাধ্যমে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অনুরোধ করা হয়।
সিএমপি কমিশনারকে দেয়া চিঠিতে বলা হয়, ‘সিটি মেয়র চট্টগ্রাম নগরকে নান্দনিক, বাসযোগ্য ও নিরাপদ করার লক্ষ্যে ফুটপাত ও রাস্তা দখলকারী হকার এবং স্থাপনা উচ্ছেদ করে জনচলাচল নির্বিঘ্ন ও সুগম করার কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন। উচ্ছেদ কাজে পুলিশ ফোর্স নিয়োজিত করে সিএমপি প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে আসছে। কিন্তু উচ্ছেদ পরবর্তী সময়ে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে অবৈধ হকার ও ব্যবসায়ীরা আবার ফুটপাত ও রাস্তা দখল করে ফেলছে। ফলে চলমান উচ্ছেদ কার্যক্রমের সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। তাই উচ্ছেদকৃত রাস্তা ও ফুটপাত পুনর্দখল রোধে নগরের থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়া হলে চলমান উচ্ছেদ কার্যক্রমের সুফল পাওয়া যাবে। এতে নগরবাসীও স্বস্তি পাবেন।’
সিএমপি কমিশনারকে চিঠি দেয়ার বিষয়টি দৈনিক আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন চসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান পরিচ্ছন্ন কর্মকর্তা মুহাম্মদ আবুল হাশেম। তিনি বলেন, গত দেড়-দুই মাসে আমরা ৪০টির বেশি উচ্ছেদ অভিযান চালাই। এর মধ্যে ২০টি বড় অভিযান ছিল। যেখানে অভিযান চালিয়েছি তার ছয়-সাতটি স্পট ছাড়া বাকিগুলো আবারো দখল হয়ে গেছে। ফলে যে উদ্দেশ্যে আমরা অভিযান চালিয়েছি তা পূরণ হচ্ছে না। অর্থাৎ নির্বিঘ্নে পথচারীরা চলাচল করতে পারছে না।
স্থানীয় প্রভাবশালী, ব্যবসায়ী এবং অনেক ক্ষেত্রে রাজনীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত লোকজনের ছত্রছায়ায় পুনর্দখল হচ্ছে জানিয়ে মুহাম্মদ আবুল হাশেম বলেন, উচ্ছেদকৃত জায়গাগুলো যে থানার আওতাধীন সে থানার পক্ষ থেকে একটু মনিটরিং করলে কিন্তু পুনর্দখল হবে না। উদাহারণ হিসেবে বলতে পারি বায়েজিদ থানা রোডের অবৈধ বাজার। সেখানে অবৈধভাবে বসানো বড় একটি বাজার ছিল। আমরা বাজারটি উচ্ছেদ করি। এরপর বায়েজিদ থানা পুলিশের শক্ত অবস্থানের কারণে বাজারটি আর বসেনি। অন্যান্য থানাগুলোর পক্ষ থেকেও যদি পদক্ষেপ নেয়া হয় তাহলে পুনর্দখল রোধ সম্ভব।
জানা গেছে, গত আগস্ট মাস থেকে উচ্ছেদ কার্যক্রম জোরালো করে চসিক। প্রায় প্রতিদিন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে অভিযান। পুনর্দখল রোধে ২১ সদস্যের ‘স্ট্রাইকিং ফোর্স’ নামে বিশেষ দল গঠন করে। ১৭ আগস্ট থেকে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করে দলটি। এরপরও পুনর্দখল ঠেকানো সম্ভব হচ্ছে না।
সর্বশেষ গত ২৮ সেপ্টেম্বর নগরের আমবাগান সড়ক, অঙিজেন মোড়, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ’র অঙিজেন-কুয়াইশ সংযোগ সড়কের নয়াহাট পর্যন্ত রাস্তার উভয় পাশের অবৈধ দোকানপাট এবং আতুরার ডিপো বাজার এলাকায় রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে নির্মিত শতাধিক দোকানপাট উচ্ছেদ করা হয়। আগের দিন ২৭ সেপ্টেম্বর ডিটি রোডের অলংকার মোড় থেকে কর্নেলহাট পর্যন্ত অংশ থেকে দুই শতাধিক দোকান ও স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয়। যদিও অভিযান শেষ হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সেখানে ফিরে আসে দখলদাররা।
এর আগে গত ২৫ সেপ্টেম্বর জামালখান সড়ক, মোমিন রোড, আন্দরকিল্লা, সিরাজুদ্দৌলা রোডের দেওয়ান বাজার, সাব-এরিয়া, দিদার মার্কেট, চন্দনপুরা, প্যারেড কর্ণার, তেলিপট্টি রোড, চকবাজার অলি খাঁ মসজিদ মোড়, গুলজার মোড়, অমরচাঁদ রোড, চকবাজার কাঁচাবাজার ও ধোনিরপুল এলাকায় অভিযান পরিচালিত হয়। একই এলাকায় গত ৩ সেপ্টেম্বরও অভিযানে চালানো হয়। এ সব এলাকার বেশিরভাগই আবারো দখল হয়ে গেছে।
সাব এরিয়া এলাকায় গতকাল কয়েকজন ব্যবসায়ীকে দোকানের মালামাল ফুটপাতে রাখার পাশাপাশি রাস্তায়ও রাখতে দেখা গেছে। এ ছাড়া কয়েক দফা অভিযান চালানো চকবাজার ধোনিরপুল এলাকায় গতকাল বিকেলে রাস্তার উপর অবৈধ দখলে নিয়ে বসানো বাজার দেখা গেছে। একই চিত্র ছিল চকবাজার কেবি আমান আলী রোডের ফুলতলা পর্যন্ত অংশে।
একইভাবে কাজীর দেউড়ি, নুর আহমদ সড়ক, এস এস খালেদ রোড, শেখ মুজিব রোডের দেওয়ানহাট মোড় থেকে বাদামতলী মোড়, পিসি রোড ও এঙেস রোডের বিভিন্ন পয়েন্ট, আগ্রাবাদ সিডিএ মার্কেট এলাকা, আমান বাজার, মাঝিরঘাট ও বাংলা বাজার সড়ক, এশিয়ান হাইওয়ের বহদ্দারহাট থেকে মুরাদপুর এবং ২নং গেট থেকে জিইসি মোড় অংশেও উচ্ছেদকৃত জায়গা পুনর্দখল হয়ে গেছে।
গত দুই মাসে মাসে পৃথক তিনটি অভিযান পরিচালিত হয় বহাদ্দারহাট এলাকায়। গতকাল সরেজমিন উপস্থিত হয়ে সেখানে উচ্ছেদ অভিযানের কোনো চিহ্নই দেখা যায়নি। বহাদ্দারহাট হক মার্কেটে প্রবেশের সময় দুইপাশ জুড়েই হকার দেখা গেছে। সেখানে হাঁটারও জায়গা ছিল না।
M | T | W | T | F | S | S |
---|---|---|---|---|---|---|
1 | 2 | 3 | 4 | 5 | ||
6 | 7 | 8 | 9 | 10 | 11 | 12 |
13 | 14 | 15 | 16 | 17 | 18 | 19 |
20 | 21 | 22 | 23 | 24 | 25 | 26 |
27 | 28 | 29 | 30 | 31 |