সারা বিশ্বের ভক্ত-দর্শকদের আগ্রহ রয়েছে শোবিজ অঙ্গনের তারকা শিল্পীদের নিয়ে । হলিউড থেকে শুরু করে দেশের ইন্ডাস্ট্রিতেও তা বেশ লক্ষণীয়। কখন, কোথায় নায়ক-নায়িকারা কি করছে? তারা ব্যক্তিজীবনে কেমন আছে? এসব আলোচনা শুধু শোবিজেই নয়, চলে চায়ের দোকানেও। দু’দিন ধরে দেশের মানুষের মাঝে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু চলচ্চিত্র তারকা শাকিব খান-বুবলী ও তাদের সন্তানকে ঘিরে।
এর মধ্যে দেশ-বিদেশে ঘটে গেছে নানা ঘটনা। মরিয়ম মান্নানের মায়ের আত্মগোপন, পঞ্চগড়ের করতোয়া নদীতে নৌকাডুবিতে হতাহত আর ইউক্রেনের চার অঞ্চলকে রাশিয়ার অংশ হিসেবে ঘোষণা দেওয়ার- খবরগুলো চাপা পড়ে গেছে শাকিব ও বুবলীর কারণে। যেমন দীর্ঘ সময় চাপা ছিল শাকিব খানের বিয়ে ও সন্তানের বাবা হওয়ার ঘটনাগুলো।
শাকিব খান ও অপু বিশ্বাসের বিয়ে হয় ২০০৮ সালের ১৮ এপ্রিলে। আর তাদের সন্তান আব্রাম খান জয়ের জন্ম হয় ২০১৬ সালের ২৭ সেপ্টেম্বর ভারতের একটি হাসপাতালে। তবে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে ২০১৭ সালে। ৯ বছর পর তাদের বিয়ে ও সন্তানের বিষয়টি দেশের মানুষ জানতে পারে। একই ঘটনা ঘটেছে শাকিব-বুবলীর বেলাও। তবে সময়ের পথটা বেশি লম্বা ছিল না। শাকিব-বুবলীর বিয়ের খবর প্রকাশ্যে না আসলেও জানা গেছে তারা বিবাহিত। আর বুবলী ছেলে সন্তানের মা হয়েছেন ২০২০ সালের ২১ মার্চ। যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের লং আইল্যান্ড জ্যুইশ মেডিক্যাল হাসপাতালে জন্ম নেয় শাকিবের সন্তান শেহজাদ খান বীর। তবে সেটিও শাকিব আড়াল করে গেছেন আড়াই বছরের বেশি সময় ধরে। কেন এই লুকোচুরি আর শাকিবের গোপন রাখার রহস্যটা আসলে কী?
এ বিষয়ে শাকিব ও অপু-বুবলী’র কার কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্টরা। তাদের সবার বক্তব্যতে উঠে এসেছে, গোপন রাখার বিষয়টি যার যার ব্যক্তিগত। তবে এর প্রভাব পড়ে শোবিজের অন্য শিল্পীদের মধ্যেও। শুধু তাই নয়, সাধারণ মানুষের মাঝেও তৈরি হয় নেতিবাচক ধারণা। চলচ্চিত্রের অনেকের ধারণা, শাকিব মানসম্মানের ভয়ে সব কিছু চেপে যায়। কেউ কেউ তো আবার ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শাকিবের এমন গোপন রাখার রহস্যকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গুণী একজন নির্মাতা দৈনিক আমাদের সময় অনলাইনকে বলেন, ‘দেশের একজন সুপারস্টার সাধারণ মানুষ ও ভক্তদের আইডল। অনেকেই তাকে ফলো করেন। কিন্তু সেই আইডলের অবস্থা যদি এমন হয়, তাহলে…। এসব নিয়ে তো সিনেমাপাড়ায় অনেক সমালোচনা চলে। এমন কি এসব ঘটনার কারণে নিজেকেই নিজের পরিবারের কাছে প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়। আর আমি এই ইন্ডাস্ট্রির সঙ্গে জড়িত আছি- তা বলতেও লজ্জা লাগে। আমি মনে করি, এই বিষয়টি সবার মনে রাখা উচিত।’
তিনি আরও বলেন, ‘শাকিব খানের বর্তমান ঘটনা নিয়ে দেশে কিন্তু আলোচনা-সমালোচনা কম হয়নি। এসব আলোচনার কারণে ক’দিন ধরে এফডিসিতে পা রাখা যাচ্ছে না। আপনারা (শাকিব-অপু-বুবলী) যেসব কর্মকাণ্ড করছেন তার প্রভাব কি ছেলে-মেয়েদের ওপর পড়বে না! সন্তান যখন বড় হবে তখন কি সে জানবে না তার বাবা-মায়ের অতীত আর এই ঘটনাগুলো। তাই সবাইকে অনুরোধ করব- দয়া করে বিষয়টি মনে রাখবেন। এই ইন্ডাস্ট্রি আপনার, আমার, আমাদের। এর মুখ আপনারাই উজ্জ্বল করবেন। দয়া করে এই শিল্পটাকে কলঙ্কিত করবেন না।’
অন্য এক গুণী নির্মাতা তো ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘ও (শাকিব খান) এটা কি পেয়েছে। নতুন নতুন নায়িকারা আসবে আর তার সঙ্গে…। পরে প্রকাশ্যে আসবে সেই নায়িকার কান্নাকাটি, বিয়ে ও সন্তান। এর মধ্যে আবার সেই নায়িকাকে নিয়ে ইন্ডাস্ট্রির অনেকেই কাজ করতে চাইবে না। এসব কি…। মানসম্মানের ভয়ে যদি তুমি সব চেপে যাও, তাহলে আগে মনে থাকে না। এটা মনে থাকলে তো আর… করবে না। আমার মনে হয়, এর একটা বিহিত করা দরকার। এই ইন্ডাস্ট্রি কারো বাপের একার না, যা ইচ্ছা তা করে বেড়াবে। ওর আগে অনেক নায়ক-নায়িকা ছিল এখানে। সবাই সুনামের সঙ্গে কাজ করে গেছে।’
এক প্রযোজক নেতার ভাষ্য, ‘আমাদের দেশের শিল্পীরা মনে করে তার বিবাহিত জীবন সামনে আসলে তাকে নিয়ে সাধারণ মানুষের আগ্রহ কমে যায়। আর তার কাজও কমে যায় ইন্ডাস্ট্রিতে। এসব কারণেই তারা বিয়ে, সন্তান আর ব্যক্তিজীবনকে প্রকাশ্যে আনতে চায় না। কিন্তু বিশ্বের অন্য কোনো দেশে কিন্তু এমন নজির নেই। আমাদের এমন মনমানসিকতা থেকে বেড়িয়ে আসতে হবে। আর শিল্পীদের সব সময় অনেক কিছু মেনে চলতে হয়। প্রয়োজনে অনেক কিছু বিসর্জন দিতে হয়। কারণ শিল্পীদের ফলো করে দেশ-বিদেশের অনেক মানুষজন।’
এখন দেখার পালা, শিল্পীদের মধ্যে এই লুকোচুরি খেলা কবে শেষ হয়। আর শাকিব কবে প্রকাশ্যে আনবে তার গোপন রাখার রহস্য।