ডিজিটাল বাংলাদেশের রূপকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৬তম জন্মদিন ২৮ সেপ্টেম্বর বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মানসকন্যা । দীর্ঘসময় ধরে নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করে চলেছেন অবিচল নেতৃত্বে। শৈশব থেকে সাদামাটা জীবনে অভ্যস্ত শেখ হাসিনা মেধা ও মননশীলতায় ছিলেন অন্যদের চেয়ে ঊর্ধ্বে। বাবার আদর্শকে ধারণ করে অনেক ত্যাগ স্বীকার করতে হয়েছে তাকে। কখনো অন্যায়-অত্যাচারকে প্রশ্রয় দেননি তিনি। বাবার মতো বুকভরা সাহস নিয়ে বাংলাদেশকে একটি রোল মডেল হিসেবে গড়ে তুলতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
১৯৪৭ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর বাংলার অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও বেগম ফজিলাতুন্নেছার ঘরে জন্মগ্রহণ করেন শেখ হাসিনা। পিতাকে খুব একটা কাছে না পেলেও শৈশব-কৈশোর আনন্দেই কেটেছে তার। গ্রামবাংলার ধুলোমাটি আর সাধারণ মানুষের সঙ্গেই বেড়ে উঠেছেন তিনি। গ্রামের সঙ্গে তাই তার নাড়ির টান। গোপালগঞ্জের মধুমতি নদীতীরবর্তী প্রত্যক্ষ পাড়াগাঁ টুঙ্গিপাড়ায় বেড়ে ওঠা অবুঝ মেয়েটির ডাক নাম হাসু। দাদা শেখ লুৎফর রহমান ও দাদি সাহেরা খাতুনের অতি আদরের নাতনি শেখ হাসিনার শৈশব-কৈশোর কেটেছে দাদা-দাদির কোলে-পিঠে ওই গ্রামটিতে। তারা পাঁচ ভাইবোন। অপর চারজন হচ্ছেন শেখ কামাল, শেখ জামাল, শেখ রেহানা এবং শেখ রাসেল। ভাইবোনদের মধ্যে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা ছাড়া কেউই জীবিত নেই। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালোরাতে পিতা বঙ্গবন্ধু এবং মাতা ফজিলাতুন্নেছাসহ সবাই ঘাতকদের হাতে নির্মমভাবে নিহত হন।
শেখ হাসিনার শিক্ষাজীবন শুরু হয় টুঙ্গিপাড়ার এক পাঠশালায়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়ে পরিবারকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। তখন পুরনো ঢাকার রজনী বোস লেনে ভাড়া বাসায় তারা ওঠেন। বঙ্গবন্ধু যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার সদস্য হলে সপরিবারে ৩ নম্বর মিন্টো রোডের বাসায় তারা বসবাস শুরু করেন। শেখ হাসিনাকে ঢাকা শহরে টিকাটুলির নারী শিক্ষা মন্দিরে ভর্তি করা হয়। এখন এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি শেরেবাংলা গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজ নামে খ্যাত। শুরু হয় তার শহুরে জীবন। শেখ হাসিনা ১৯৬৫ সালে আজিমপুর বালিকা বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক, ১৯৬৭ সালে ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ (বর্তমান বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা মহাবিদ্যালয়) থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করেন। ওই বছরেই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে অনার্সে ভর্তি হন এবং ১৯৭৩ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজে পড়ার সময় ছাত্র সংসদের সহসভাপতি নির্বাচিত হন শেখ হাসিনা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সদস্য এবং রোকেয়া হল শাখার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। ছাত্রলীগের নেত্রী হিসেবে তিনি আইয়ুববিরোধী আন্দোলন এবং ৬ দফা আন্দোলনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।
একবিংশ শতাব্দীর অভিযাত্রায় তিনি দিন বদল ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার কাণ্ডারি। এই অভিযাত্রায় তিনি বাঙালির জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। শত ব্যস্ততার মাঝেও শেখ হাসিনা সাহিত্যচর্চা ও সৃজনশীল লেখায় নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। তার লেখা উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ হচ্ছে- ওরা টোকাই কেন, বাংলাদেশে স্বৈরতন্ত্রের জন্ম, আমার স্বপ্ন আমার সংগ্রাম। শেখ হাসিনা বর্তমানে ওয়াশিংটনে অবস্থান করছেন। বরাবরের ন্যায় নিউইয়র্কের জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনেও যোগ দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। নিউইয়র্কে জাতিসংঘ সদর দপ্তরে সাধারণ পরিষদের এক আলোচনায় এ বছরের সাধারণ বিতর্কের প্রতিপাদ্য : ‘একটি সংকটপূর্ণ সন্ধিক্ষণ : আন্তঃসংযুক্ত প্রতিকূলতাসমূহের রূপান্তরমূলক সমাধান।’
জাতিসংঘে তার বাংলা ভাষণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, যুদ্ধের ভয়াবহতা, হত্যা-ক্যু-সংঘাতে মানুষের যে কষ্ট-দুঃখ-দুর্দশা হয়, ভুক্তভোগী হিসেবে আমি তা উপলব্ধি করতে পারি। তাই যুদ্ধ চাই নে, শান্তি চাই; মানবকল্যাণ চাই। মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতি চাই। আগামী প্রজন্মের জন্য শান্তিময় বিশ্ব, উন্নত-সমৃদ্ধ জীবন নিশ্চিত করতে চাই। আমার আকুল আবেদন, যুদ্ধ, অস্ত্র প্রতিযোগিতা বন্ধ করুন। সমুন্নত হোক মানবিক মূল্যবোধ। আসুন, সবাইকে এক সঙ্গে নিয়ে হাতে হাত মিলিয়ে আমরা একটি উত্তম ভবিষ্যৎ তৈরির পথে এগিয়ে যাই।
স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা যেভাবে জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলাদেশকে তুলে ধরেছেন, ঠিক তেমনি তার সুযোগ্য সন্তান একইভাবে আমাদের এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন বিশ্বের দরবারে। সব বাধা পেরিয়ে সত্যিকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলার দৃঢ়প্রত্যয় বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার। ইতোমধ্যে তিনি প্রমাণ করেছেন, ব্যক্তিগতভাবে তার হারানোর কিছু নেই; কিন্তু দেশবাসীকে দেওয়ার আছে অনেক কিছু।
লেখক: সাংবাদিক ও কলাম লেখক