ইউক্রেন বিধ্বস্ত রাশিয়ার আক্রমণে । ইসরায়েলের আঘাতে জর্জরিত ফিলিস্তিন। থেমে থেমে চলছে আর্মেনিয়া-আজারবাইজান সংঘাত। উত্তর কোরিয়ার ‘পারমাণবিক পাগলামি’র কথা ভেবে অস্থির দক্ষিণ কোরিয়া। ভারত-পাকিস্তান- দুই দেশের সীমান্ত তৎপরতায় তটস্থ কাশ্মীরিরা।
রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের পর মিয়ানমারের গুলি ও গোলা অকস্মাৎ এসে পড়ছে বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব সীমান্তে। দেশে-দেশে এতসব অন্তর্কলহ, সীমান্তবিবাদ বুকে নিয়েই পৃথিবী ছুটে চলেছে মহাশূন্যে। যেমন, টিকিট-চেকার ও যাত্রীদের বাতচিত কিংবা যাত্রীতে-যাত্রীতে শোরগোল লেগে থাকলেও বাস নিয়ে নির্ধারিত পথে ছুটতে থাকেন বাসচালক। তবে বাইরের কোনো যান যেন ওই বাসকে ধাক্কা না দেয়, এ ব্যাপারে তিনি সদা সতর্ক থাকেন। তেমনি, পৃথিবীর বাইরে থেকে কোনো মহাজাগতিক বস্তু যেন এ গ্রহকে আঘাত না করে, যেন সাক্ষাৎ বিপদ ডেকে না আনে, সে জন্য আর কেউ না হোক, সজাগ থাকেন একদল গ্রহবিজ্ঞানী।
পৃথিবীকে বহিরাঘাত থেকে রক্ষার জন্য একটি অভিযান জারি রয়েছে। একে বলা হয় গ্রহ প্রতিরক্ষা (প্ল্যানেটরি ডিফেন্স) ব্যবস্থা। এ রকমই একটি অভিযান ডার্ট। যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থা নাসা এর নেতৃত্ব দিচ্ছে। গতকাল এই ডার্ট নভোযান ‘অনতিদূরের’ এক গ্রহাণুতে সফলভাবে আঘাত হেনেছে। ডার্ট অভিযানের প্রধান সমন্বয়ক ন্যান্সি শ্যাবো গতকাল এ লেখককে ইমেইলে বলেছেন, ‘এ এক মহামুহূর্ত। আজই যেন বড় দিন। কী এক রোমাঞ্চ ছুঁয়ে দিল মনকে!’
ডার্টের দৃশ্যমান লক্ষ্য ছিল, গ্রহাণুটির গতিপথ বদলে ফেলা। আর অলক্ষের লক্ষ্য ছিল, ভবিষ্যতে কোনো গ্রহাণু পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসলে তার গতিপথ এমনিভাবে বদলে দেওয়া যাবে কি না যেন ওই সম্ভাব্য আঘাত থেকে পৃথিবী রক্ষা পায়।
ডাবল অ্যাস্টেরয়েড রিডিরেকশন টেস্ট (ডার্ট) গ্রহ প্রতিরক্ষার প্রথম পরীক্ষা। এবং এটি সফল হয়েছে। নামেই বোঝা যায়, ডার্টের গন্তব্য ছিল জোড়া গ্রহাণু। মূলত ডিডিমস নামের ৭৮০ মিটার চওড়া একটি গ্রহাণুর চারপাশে ঘুরছে ডিমরফস (চওড়ায় ১৬০ মিটার মাত্র), যাকে আমরা বলছি গ্রহাণু-চাঁদ। এরা কোনোটাই পৃথিবীর জন্য হুমকি ছিল না। কিন্তু পরীক্ষার জন্য কত কাউকেই তো এভাবে ‘বলি’ হতে হয়।
পৃথিবী থেকে ওড়ার পর শূন্যে ১০ মাস ধরে যাত্রা করেছে ডার্ট। আছড়ে পড়া ৫৭০ কেজি ভরের কার আকারের নভোযানটি লক্ষ্যবস্তু ছিল পৃথিবী থেকে এক কোটি ১০ লাখ কিলোমিটার দূরে। নাসার ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, সংস্থাটির প্রশাসক বিল নেলসন বলেছেন, ‘গ্রহ প্রতিরক্ষায় অভূতপূর্ব সাফল্যের প্রতিনিধিত্ব করছে ডার্ট। তবে একই সঙ্গে সত্যিকার অর্থে মানবজাতির মঙ্গলের জন্য এ অভিযান।’