রোহিঙ্গা শিশুরা প্রাণঘাতী ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে । চিকিৎসকরা বলছেন, এ রোগ অত্যন্ত ছোঁয়াচে। আক্রান্ত কোনো শিশুর সংস্পর্শে এলে দ্রুত অন্যদেরও সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। সর্দি-কাশি ও হাঁচি মাধ্যমে এটি ছড়ায়।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, চলতি বছর আগস্ট পর্যন্ত আট মাসে ৩৭ জনের শরীরে ডিপথেরিয়া রোগ শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে ৪ জন বাংলাদেশি এবং ৩৩ জন রোহিঙ্গা শিশু। আর মৃত্যু হয়েছে একজনের। ২০২১ সালে ৩০ জনের ডিপথেরিয়া শনাক্ত হয়। এর মধ্যে মারা যায় একজন। ২০২০ সালে ১৯ জন শনাক্ত হয়। ২০১৯ সালে ৩১ জন শনাক্ত হয় এবং মারা যায় ৩ জন।
গত ছয় বছরে ৪০৯ জনের শরীরে ডিপথেরিয়া রোগ শনাক্ত হয়। তাদের মধ্যে চার জন বাংলাদেশি। বাকি ৪০৫ জন রোহিঙ্গা শিশু। শনাক্তদের মধ্যে ৫৩ জন মারা গেছে। তাদের বেশির ভাগের বয়স ৫ থেকে ১৫ বছরের মধ্যে।
কক্সবাজার সিভিল সার্জন কার্যালয়ের রোগ নিয়ন্ত্রক ডা. ফাহিম আহমেদ ফয়সাল বলেন, ‘কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিশুরা প্রতি বছরই ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আমাদের দেশের শিশুদের জন্মের ১৪-১৫ মাসের মধ্যে যেসব টিকা দেওয়া হয় তার মধ্যে ডিপথেরিয়া রোগের টিকাও রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে এ রোগ নেই। তবে রোহিঙ্গা শিশুরা মিয়ানমারে ঠিকমতো টিকা পায়নি। এ কারণে বাংলাদেশে আসার পর থেকে তাদের শরীরে এ রোগ ধরা পড়ছে।’
কেন রোহিঙ্গা শিশুরা ডিপথেরিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে? এমন প্রশ্নের উত্তরে অধ্যাপক ড. মো. মামুনুর রশিদ বলেন, ‘অত্যন্ত ভয়ংকর একটি রোগের নাম ডিপথেরিয়া। গত দেড় বছরে ৯ রোহিঙ্গা শিশু এ রোগের লক্ষণ নিয়ে হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হয়েছে। এসব শিশুকে টেকনাফ থেকে এ হাসপাতালে হস্তান্তর করা হয়। এর মধ্যে দুই শিশু মারা গেলেও বাকিরা সুস্থ হয়ে ফিরে গেছেন। ভর্তি হওয়া ৯ শিশুর বয়স ছিল ৫ থেকে ৯ বছরের মধ্যে।’
তিনি জানান, এ রোগের লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে– জ্বর, গলাব্যথা, কাশি এবং জটিল পর্যায়ে গেলে মারাত্মক শ্বাসকষ্ট শুরু হয়। এ রোগ শ্বাসনালিকে ব্লক করে দেয়। এ কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি থাকে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা ক্যাম্পের প্রধান স্বাস্থ্য সমন্বয়ক ডা. আবু তোহা ভুঁইয়া বলেন, ‘বাংলাদেশের শিশুদের মধ্যে ডিপথেরিয়া রোগটি নেই। বাংলাদেশি শিশুদের জন্মের পর থেকে যেসব টিকা দেওয়া হয় সেগুলোর মধ্যে ডিপথেরিয়া রোগের টিকাও রয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশে এ রোগের আক্রান্তের হার শূন্য। রোহিঙ্গা শিশুরা নিজ দেশে টিকার আওতার বাইরে ছিল। এখন তাদেরও সব ধরনের টিকা দেওয়া হচ্ছে। আমরা চেষ্টা করছি, রোহিঙ্গা শিশুদের মধ্যে ডিপথেরিয়া রোগটি শূন্যে নিয়ে আসার।’
তিনি আরও বলেন, ‘আক্রান্ত শিশুকে আমরা পরিবার থেকে আলাদা করে ফেলি। অর্থাৎ আইসোলেশনে রাখা হয়। যারা ওই শিশুর সংস্পর্শে এসেছিল তাদেরও আইসোলেশনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় চিকিৎসা দেওয়া হয়। কেন না এ রোগ ছোঁয়াচে। এ শিশুর সংস্পর্শে আসা অন্যদেরও এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।’